সিটি, অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি-সহ অন্যান্য পরীক্ষায় মহাধমনীর সমস্যার বিষয়টি ধরা পড়ে। —প্রতীকী চিত্র।
মাঝেমধ্যে বুকে চাপ অনুভব করতেন বছর ৬৬-র প্রৌঢ়া। গ্যাস-অম্বলের ওষুধ খেয়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও পরে ফের একই সমস্যা। সেই সঙ্গে হচ্ছিল যন্ত্রণাও। শেষে পরীক্ষায় দেখা যায়, মহাধমনীর যে অংশ পেটের দিকে নেমেছে, তাতে চিড়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সেই প্রৌঢ়াকে বিপন্মুক্ত করল এসএসকেএম। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার সাহামিনা বিবি দীর্ঘ দিন ধরেই বুকে-পেটে অস্বস্তি বোধ করতেন। খাওয়াদাওয়ার পরে জ্বালা অনুভব করতেন তিনি। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় সাহামিনাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি হৃদ্রোগ চিকিৎসকের কাছে পাঠান। এর পরে এসএসকেএমে হৃদ্রোগ বিভাগে এসে চিকিৎসা শুরু করান ওই প্রৌঢ়া। শিক্ষক-চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল জানান, সিটি, অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি-সহ অন্যান্য পরীক্ষায় মহাধমনীর সমস্যার বিষয়টি ধরা পড়ে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয় থেকে উৎপন্ন মহাধমনীর অ্যাওর্টিক আর্চ থেকে দু’টি হাতে রক্ত সঞ্চালনের শাখা ধমনী রয়েছে। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ওই প্রৌঢ়ার বাঁ হাতে যাওয়া শাখা ধমনীটি যেখান থেকে শুরু হয়েছে, তার নীচ থেকে মহাধমনীর খানিকটা অংশ পুরো চিরে গিয়েছে। ওই ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এবং মহাধমনীর দেওয়ালের মাঝে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। তার জেরে মহাধমনীও সঙ্কুচিত হয়ে কার্যত বন্ধ হয়ে রয়েছে। সরোজ বলেন, ‘‘গ্যাসের সমস্যা ভেবে হৃৎপিণ্ডের এই অসুখের চিকিৎসা না করলে যে কোনও সময়ে বড় বিপদ হতে পারত।’’
জানা গিয়েছে, এই ধরনের সমস্যায় সাধারণত কুঁচকি দিয়ে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ধমনী মেরামত করা হয়। কিন্তু সাহামিনার কুঁচকির কাছের ধমনীও অত্যন্ত সরু হয়ে যাওয়ায় ওই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না। তখন কার্ডিয়োথোরাসিক এবং ভাস্কুলার সার্জারি (সিটিভিএস) বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প উপায় বার করেন হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক সরোজ, গৌরাঙ্গ সরকার এবং সিটিভিএসের শিক্ষক-চিকিৎসক শুভেন্দু দাস মহাপাত্র এবং তাঁদের দল অস্ত্রোপচারটি করেন। প্রৌঢ়ার পেট কেটে ‘কমন ইলিয়াক ধমনী’ (মহাধমনী থেকে দু’টি পায়ে বিভক্ত হওয়া অংশ) থেকে কৃত্রিম রক্তনালি তৈরি করে বাইরে আনা হয়। সেই নালি দিয়ে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে মহাধমনীর চিরে যাওয়া অংশটিতে বিশেষ ‘টিউব’ পরানো হয়, যাতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত না হয়। এর পরে কৃত্রিম রক্তনালিটি খুলে পেট সেলাই করে দেওয়া হয় বলে জানান সরোজ। তাঁর দাবি, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। পূর্ব ভারতে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই প্রথম এমন ঝুঁকির অস্ত্রোপচার করা হল।’’