মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়ার মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই প্রতিবাদেরই অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের কর্মশ্রী প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে ‘মহাত্মাশ্রী’ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করল নবান্ন। শনিবার রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর নাম ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি মর্মাহত। সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই রাজ্যের কর্মশ্রী প্রকল্পের নাম মহাত্মার নামে করা হবে। শনিবার প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করার কথা জানানো হয়েছে।
নবান্নের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৭ মার্চ কর্মশ্রী প্রকল্পটি চালু করা হয়। যার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন (এমজিনআরইজিএস)-এর অধীনে জব কার্ডপ্রাপ্ত সকল গ্রামীণ অদক্ষ শ্রমিক রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে জব কার্ডধারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন এনে রাজ্যপাল সন্তুষ্ট হয়ে নির্দেশ জারি করেছেন বলে জানানো হয়েছে। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রকল্পটির সংক্ষিপ্ত নাম হবে ‘মহাত্মাশ্রী’ এবং বিজ্ঞপ্তি জারির দিন থেকেই তা কার্যকর হবে। পাশাপাশি স্পষ্ট করা হয়েছে, মহাত্মাশ্রী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল— রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত কর্মসূচির আওতায় প্রতি অর্থবর্ষে প্রতিটি জব কার্ডধারী পরিবারকে কমপক্ষে ১০০ দিনের মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থান প্রদান করা।
উল্লেখ্য, চলতি সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের বিল পাশ করেছে। নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘জি রাম জি’। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল। সংসদের ভিতরে ও বাইরে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “জাতির জনককে নিয়ে যা হয়েছে, তা লজ্জার। আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। কারণ, আমিও এই দেশের নাগরিক।” কেন্দ্রের নাম না করে তিনি আরও বলেন, “আমরা ভিখারি নই। আমরা সম্মান চাই। তোমরা যদি মহাত্মাকে সম্মান দিতে না পারো, আমরা দেব। বাংলায় কর্মশ্রী প্রকল্পে ৭০ থেকে ১০০ দিন কাজ দেওয়া হবে, আর তা হবে মহাত্মার নামে।”
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াইয়ে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হল। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহে ‘মহাত্মা শ্রী’ প্রকল্প ঘিরে আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে আরও উত্তাপ বাড়বে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।