Adivasis On SIR

দেশের রাজার আবার প্রমাণ লাগে? এসআইআরে ‘না’ পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার আদিবাসী সমাজের, চিন্তায় প্রশাসন

আদিবাসীদের ওই অংশ জানিয়ে দেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ‘সমাজবাদ অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার’-এর কাছে তাঁদের আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড জমা দিয়েছেন। বদলে তাঁরা মাঝি সরকারের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র পেয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁরা এসআইআর প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৮
Adivasis On SIR

আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে এসআইআরের গুরুত্ব নিয়ে বোঝাচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে নানা ঘটনা ঘটছে রাজ্যে। নথির জন্য আত্মহত্যা, নথি জোগাড়ের আতঙ্ক থেকে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। তখন এই রাজ্যেরই একটি অংশের মানুষ এনুমারেশন ফর্ম (গণনাপত্র) পূরণ করতেই অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দা। নাগরিক বা ভোটার হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করার দায় নেই তাঁদের।

Advertisement

এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হওয়ার প্রথম থেকেই পশ্চিমবাংলার দুই জেলায় অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন বিএলও-রা। কারণ, এসআইআরের গণনাপত্র পূরণ করতে অস্বীকার করছেন কিছু মানুষ। রাজ্যে গণনাপত্র বিলি এবং জমা নেওয়ার কাজ যখন শেষের মুখে, তখন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে বসবাসকারী আদিবাসীদের বড় অংশই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এসআইআরে অংশই নেবেন না। এতে অশনি সঙ্কেত দেখছে দুই জেলারই রাজনৈতিক মহল। প্রশাসনের তরফে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হলেও তাতে ফল হয়নি। এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।

সম্প্রতি বাঁকুড়ার রানিবাঁধ বিধানসভার ভেদুয়াশোল ও মুচিকাটা গ্রামের ভোটারদের একাংশ এবং পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভার কুকড়ুডাবর, ধবনী, পুকুরকাটা, জোড়াশাল, বড়কথা, কালুডি, চিরুডি, কায়রা-সহ গ্রামের ভোটারদের বড় অংশ ‘সমাজবাদ অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার’-এ আস্থা প্রকাশ করে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের যুক্তি, ১৯৫১ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের ধারা অনুযায়ী, তাঁরা ভারতের মূলবাসী। আইনত এ দেশের জল, জঙ্গল, জমি-সহ সমস্ত কিছুর মালিক তাঁরা। তাই তাঁদের আলাদা করে ভোটার বা নাগরিক হিসাবে প্রমাণের কোনও দায় নেই। আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো নথিও তাঁরা ত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

বার বার সমস্যার মুখে পড়ে ঊর্ধ্বতনকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন বিএলও-রা। তার পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ আধিকারিকেরা রানিবাঁধ বিধানসভার দুটি গ্রামে গিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আদিবাসীদের ওই অংশ জানিয়ে দেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ‘সমাজবাদ অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকার’-এর কাছে তাঁদের আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড জমা দিয়েছেন। বদলে তাঁরা মাঝি সরকারের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র পেয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁরা এসআইআর প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। একই অবস্থান নিয়েছেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভার গ্রামগুলির ভোটারদের একাংশ। বাঁকুড়ার রানিবাঁধ বিধানসভার ভেদুয়াশোল গ্রামের বাসিন্দা সুরেখা মুর্মুর কথায়, ‘‘রেশন থেকে বিনামূল্যে চাল ছাড়া গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার, বার্ধক্য ভাতা-সহ কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কোনও সুযোগ আমরা পাইনি। আমরা এ দেশের রাজা। আমরা সেই সুযোগ পেতেও চাই না। তাই আমরা স্বেচ্ছায় এ দেশের এসআইআরের গণনাপত্র পূরণ করব না। বদলে আমরা অন্তঃরাষ্ট্রীয় মাঝি সরকারের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছি।’’ সঞ্জিত মুর্মু নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা এত দিন ধরে সরকারি সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি, এ ভাবে বঞ্চিতই থাকতে চাই। আমরা মাঝি সরকারের সদস্যপদ নিয়েছি। তাই কোনও ভাবেই এসআইআরের গণনাপত্র পূরণ করব না।’’

আদিবাসীদের একাংশের এই প্রবণতা নিয়ে চিন্তায় রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার এসটি সেলের সভাপতি গঙ্গারাম মুর্মু বলেন, ‘‘এই মাঝি সরকারের বিষয়টি ওড়িশা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এদের মূল কার্যালয় ছত্তীসগঢ়ে। এখানকার দরিদ্র আদিবাসী মানুষদের সেখানে নিয়ে গিয়ে তাঁদের শিক্ষার অভাবকে কাজে লাগিয়ে এমন ভাবে মগজধোলাই করা হয়েছে যে, তাঁরা এখন দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকেই অস্বীকার করছেন। যে বা যাঁরা সাধারণ মানুষকে এমন ভুল বোঝাচ্ছেন, প্রশাসন তাঁদের চিহ্নিত করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার জানিয়েছেন, আদিবাসী ভোটারদের একাংশের এই প্রতিক্রিয়া তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা কেন নিজেদের উন্নয়নের পথ নিজেরা রোধ করছেন, বুঝতে পারছি না। এমনটা হওয়া উচিত নয়। প্রশাসনের তরফে নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন