SIR in West Bengal

এসআইআর আতঙ্কে সোনাগাছি! ২০০২-এর নথি পেতে বিড়ম্বনায় যৌনকর্মীরা, সমাধান চেয়ে শুক্রবার কমিশনকে চিঠি তিন সংগঠনের

সোনাগাছির কয়েক হাজার যৌনকর্মী লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবাভাতার মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগী। কমিশনের উদ্দেশে তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তা হওয়ার পরেও কেন নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:০০
Sex workers of Sonagachi are worried about SIR, three organizations have sent a letter to the CEO seeking a solution

এসআইআর নিয়ে উদ্বেগে সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে এসআইআর আতঙ্ক। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া (এসআইআর)-র ১৭ দিনের মাথায় শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকে চিঠি লিখে সমাধানের কাতর আর্জি জানাল যৌনকর্মী এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা তিনটি সংগঠন। যৌনকর্মীদের বাস্তব অবস্থা, সমস্যার কথা জানিয়ে সিইও-কে চিঠি লিখেছে ‘সোশ্যাইটি অফ হিউম্যান ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকশন’, ‘উষা মাল্টিপার্পাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ এবং ‘আমরা পদাতিক’।

Advertisement

ইতিমধ্যেই ইমেল মারফত চিঠি পাঠানো হয়েছে সিইও দফতরে। চিঠিতে মূলত তিনটি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যৌনকর্মীদের পক্ষ থেকে। এক, গ্রামাঞ্চল বা ভিন্‌রাজ্য থেকে যৌনকর্মীরা আসেন সোনাগাছিতে। সামাজিক নানা কারণে তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গেই পরিবারের যোগাযোগ থাকে না। ফলে ২০০২ সালের নথি তাঁদের পক্ষে জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। দুই, বহু যৌনকর্মী পরিস্থিতির চাপে পরিবার, বাড়ি ছেড়ে এই পেশায় আসেন। তাঁরা অনেকেই নথি নিয়ে বাড়ি ছাড়েন না। তিন, এমন অনেক যৌনকর্মী রয়েছেন যাঁরা পরিবারের কাছে তাঁদের পেশা গোপন করে রেখেছেন সামাজিক বেড়াজালের কারণে। এই অংশের পক্ষেও পরিবারের নথি জোগাড় করা সম্ভব নয়।

সিইও-কে লেখা চিঠিতে সমস্যা সমাধানে তিনটি আর্জিও জানিয়েছে তিনটি সংগঠন। তাদের বক্তব্য, প্রথমত, কমিশন যৌনকর্মীদের জন্য বিকল্প নথি বা পরিচয়পত্রকে নির্ধারিত করুক। দ্বিতীয়ত, যৌনকর্মীদের এনুমারেশন ফর্ম পূরণের জন্য বিশেষ শিবির অনুষ্ঠিত হোক সোনাগাছিতে। তৃতীয়ত, যৌনকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের যে ভোটার কার্ড রয়েছে, তা যেন বাতিল না-করা হয়।

সোনাগাছিতে এখন যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তাঁদের মধ্যে হাজারতিনেক যৌনকর্মী প্রত্যহ পেশার জন্য সেখানে আসেন। আবার বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এমন হাজারসাতেক যৌনকর্মী আছেন, যাঁরা সোনাগাছিতেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন বছরের পর বছর ধরে। অধিকাংশেরই ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে। তাঁরা ভোটও দেন। এক যৌনকর্মীর কথায়, ‘‘আমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছে। দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে ১৭ বছর আগে এই পেশা বেছে নিতে হয়েছিল। আমার ছেলের নাম গত বছরই ভোটার লিস্টে উঠেছিল। ওর বাবা নেই। আমিও বাড়ির লোকের ২০০২ সালের নথি জোগাড় করতে পারব না। এখন কী করব সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করে ‘আমরা পদাতিক’। তার অন্যতম সংগঠক মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উষা মাল্টিপার্পাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অ্যাকাউন্টকে নথি হিসাবে ধরে নিয়ে ২০০৭ সালে তৎকালীন রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার দেবাশিস সেন সোনাগাছিতে এসেই যৌনকর্মীদের মধ্যে ভোটার আইডি কার্ড তুলে দিয়েছিলেন। আমরা চাইছি, এ বারও তেমন কোনও বিকল্প নথির বন্দোবস্ত করুক কমিশন। না হলে কয়েক হাজার যৌনকর্মীকে গভীর সংকটের মধ্যে পড়তে হবে।’’

সোনাগাছির কয়েক হাজার যৌনকর্মী লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবাভাতার মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগী। কমিশনের উদ্দেশে তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তা হওয়ার পরেও কেন নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা মানছেন যৌনকর্মী ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলি। তারা চিঠিতে এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যৌনকর্মীরা এসআইআরের বিরুদ্ধে নন। তাঁরা চান বাস্তবতা বুঝে কমিশন বিকল্প কোনও পদক্ষেপ করুক।

সোনাগাছির গলিঘুপচিতে কি এসআইআর উদ্বেগের অবসান হবে? নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের পুনর্বিবেচনার উপর।

Advertisement
আরও পড়ুন