CBI on TET recruitment case

প্রাথমিকে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’: দিব্যেন্দু অধিকারী, ভারতী ঘোষদেরও সুপারিশ ছিল? নাম সিবিআইয়ের হাতে

প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এমনই একটি নাম-তালিকা পেয়েছে সিবিআই। সেই তালিকা আনন্দবাজার অনলাইনের হাতেও এসেছে। নাম রয়েছে শওকত মোল্লা এবং মমতাবালা ঠাকুরেরও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৬
TET recruitment case: Dibyendu Adhikari, Bharti Ghosh also recommended the name to Partha Chatterjee

(বাঁ দিক থেকে) দিব্যেন্দু অধিকারী, ভারতী ঘোষ, শওকত মোল্লা এবং মমতাবালা ঠাকুর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ! প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এমনই একটি নাম-তালিকা পেয়েছে সিবিআই। সেই তালিকা আনন্দবাজার অনলাইনের হাতেও এসেছে। ওই তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূলের শওকত মোল্লা এবং মমতাবালা ঠাকুরেরও। তাঁরা প্রত্যেকেই চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করেছিলেন বলেই মনে করছে সিবিআই। যদিও তাঁদের কাউকেই সিবিআই তলব করেনি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের প্রাথমিকের পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২২ সাল থেকে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। যে বছরের পরীক্ষা নিয়ে এত বিতর্ক, সেই সময় দিব্যেন্দু এবং ভারতী দু’জনের কেউই বিজেপিতে ছিলেন না। পরে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেন। ভারতী বিজেপির টিকিটে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে প্রার্থীও হয়েছিলেন।

গত বছর জুন মাসে বিকাশ ভবনের ওয়্যারহাউসে অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। সেখানে তল্লাশি চালিয়েই ওই নথি উদ্ধার হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, দিব্যেন্দু, ভারতীরা যাদের নাম সুপারিশ করেছিলেন, নথিতে তাদেরই নামের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকা রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠানো হয়েছিল।

সিবিআই যে নথি উদ্ধার করেছে, তা আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে।

সিবিআই যে নথি উদ্ধার করেছে, তা আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে।

সিবিআইয়ের নথিতে দেখা যাচ্ছে, মোট ৩২৪ জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। আর যাঁরা সুপারিশ করেছিলেন, তাঁদের নাম-পরিচয় রয়েছে। তালিকায় দিব্যেন্দুর নামের পাশে এমপি (সাংসদ) লেখা। দিব্যেন্দু এক সময়ে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পর তিনিও পদ্মশিবিরে নাম লেখান। ভারতীর নামের পাশে এসপি (পুলিশ সুপার) লেখা। ভারতী পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ছিলেন। পরে তিনিও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মমতাবালার নামের পাশেও সাংসদ লেখা। তিনিও বনগাঁর সাংসদ ছিলেন। তিনি বর্তমানেও সাংসদ। তবে রাজ্যসভার। তাঁর নামের পাশে ২০ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম রয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই মমতাবালা বলেন, ‘‘এ সব কিছুই জানি না। পুরোটাই চক্রান্ত। অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত নই।’’ দিব্যেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। বলেন, ‘‘নো কমেন্টস।’’

ভারতীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এসপি থাকাকালীন অনেক লোকের উপকার করেছি। কিন্তু সবটাই আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে। কারও পরীক্ষাকেন্দ্র বদলের দরকার, যেখানে বলার বলেছি। কারও পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, রেজাল্ট বেরোচ্ছে না, যেখানে বলার বলেছি। কিন্তু কেউ পরীক্ষা দেয়নি বা পাশ করেনি, তাকে চাকরি দিয়ে দাও, এ রকম আমি কখনও বলিনি। আমার নাম যদি সিবিআই কোথাও পেয়ে থাকে, আমার বলায় কারও চাকরি হয়েছে বলে যদি সিবিআই জেনে থাকে, তা হলে সিবিআইয়ের উচিত ছিল আমার সঙ্গে কথা বলা। আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারত। আমার সঙ্গে কোনও কথাই বলল না। আমি কিছু জানতামই না। কিন্তু আমার নাম জড়িয়ে দিল। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি মোদীজিকে চিঠি লিখব। আজ রাতেই লিখব। কারণ সিবিআই মোদীজির দফতরের অধীনস্থ। সেই সংস্থা এ রকম বেআইনি কাজ করছে, সেটা আমি ওঁকে চিঠি লিখে জানাব।”


সিবিআইয়ের উদ্ধার করা নথি।

সিবিআইয়ের উদ্ধার করা নথি।

এ ছাড়া বিধায়ক পরিচয়ে নাম রয়েছে নির্মল ঘোষ, বীণা মণ্ডল, শওকত মোল্লা, শ্যামল সাঁতরা, রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, গুলশন মল্লিকের। সকলেই তৃণমূলের নেতা। নির্মল, বীণা, শওকত এবং গুলশন বর্তমানেও বিধায়ক। নথিতে রাজ চক্রবর্তীরও নাম রয়েছে। তবে তাঁর কোনও পরিচয় নেই।

নথিতে দেখা যাচ্ছে, ‘রিসিভড অ্যাট অফিস’ বলে উল্লেখ করে তার নীচে কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীর নাম রয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, কিছু নাম সরাসরি কোনও একটি অফিসে সুপারিশ করা হয়েছিল। বোঝার সুবিধার জন্যই ‘রিসিভড অ্যাট অফিস’ লিখে রাখা হয়েছিল নথিতে।

Advertisement
আরও পড়ুন