Mithun Chakraborty

সিপিএম নেতা মিঠুন চক্রবর্তী! আদালতে বিস্মিত বিচারকের সরস প্রশ্ন, ‘আপনি রাম থেকে আবার বাম হয়ে গেলেন কবে?’

চলতি বছরের অগস্টে হুগলির একটি ঘটনায় আলোড়িত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই সময়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল বিরোধী দলগুলি। তাতে সক্রিয় ভাবে ছিল সিপিএম-ও। সেই মামলাতেই গত সপ্তাহে আগাম জামিন নিতে আদালতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতারা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৫
The judge expressed surprise in the court room after hearing the name of a CPM leader Mithun Chakraborty

অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।

নাম মিঠুন। পদবি চক্রবর্তী। করেন রাজনীতি। কিন্তু সিপিএম! তাতেই বিস্ময় প্রকাশ করলেন খোদ বিচারক।

Advertisement

সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে হুগলি জেলার একটি নিম্ন আদালতে। সৌজন্যে, তরুণ সিপিএম নেতা তথা দলের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য মিঠুন চক্রবর্তী।

একটি রাজনৈতিক সংঘাতের মামলায় সম্প্রতি বেশ কয়েক জন সিপিএম নেতা হুগলির একটি মহকুমা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সিপিএমের এক রাজ্য স্তরের নেতাও ছিলেন। ছিলেন মিঠুনও। আদালতকক্ষে কাঠগড়ার পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সিপিএম নেতারা। এক এক করে নাম ডাকা হচ্ছে আর সংশ্লিষ্ট সিপিএম নেতারা হাত তুলে জানান দিচ্ছেন, তাঁরা সশরীরে হাজির। একেবারে শেষে ডাকা হয় মিঠুন চক্রবর্তীর নাম। বছর পঁয়তাল্লিশের নেতা হাত তুলে জানান দেন, তিনি হাজির হয়েছেন। তখনই বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারক। আদালতকক্ষে তিনি খানিক রসিকতা করেই বলেন, ‘‘আরে! মিঠুন চক্রবর্তী? আপনি তো বিজেপি-তে ছিলেন। সিপিএম হলেন কবে?’’ সূত্রের খবর, মিঠুন বিনয়ের সঙ্গে বিচারপতিকে জানান, নাম-পদবির মিল থাকলেও তিনি বরাবর সিপিএম-ই করেন।

হুগলির সিপিএম নেতা মিঠুন চক্রবর্তী।

হুগলির সিপিএম নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের অগস্টে হুগলির একটি ঘটনায় আলোড়িত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল বিরোধী দলগুলি। তাতে সক্রিয় ভাবে ছিল সিপিএম-ও। সেই মামলাতেই গত সপ্তাহে আগাম জামিন নিতে আদালতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতারা। সেই শুনানিতেই এ হেন ঘটনা ঘটেছে। আদালত জামিন মঞ্জুর করেছে সিপিএম নেতাদের।

যদিও আদালতকক্ষে ঘটা সমনাম বিভ্রাট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিপিএম নেতা মিঠুন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিচারাধীন কোনও বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানো সমীচীন নয়।’’ তবে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘তারকা’ মিঠুন চক্রবর্তী যত দিন সুভাষ চক্রবর্তীর (প্রয়াত সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী) ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তত দিন এই মিঠুনের বিড়ম্বনা হয়নি। কিন্তু তার পরে ‘তারকা’ মিঠুন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ায় এবং পরে বিজেপিতে যাওয়ায় বিড়ম্বনা যে একেবারে হচ্ছে না, তা নয়!

সিপিএমের মিঠুন শ্রীরামপুরের ভূমিপুত্র। সেই এলাকা তাঁর রাজনীতির পরিসর হলেও গোটা জেলার বাম মহলে তিনি পরিচিত মুখ। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তথাকথিত সিপিএম নেতাদের মতো নন এই মিঠুন। আরোপিত গাম্ভীর্য নেই। মোটর সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ান। পেশাগত ভাবে পর্যটক সমন্বয়ের কাজ করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান পর্যটকদের নিয়ে। পাহাড়ে বরফের উপর হাঁটেন। সেই হাঁটার ফুটেজের নেপথ্যে বলিউডি গান-সহযোগে রিল বানিয়ে সমাজমাধ্যমেও পোস্টও করেন। আবার দল ধর্মঘট ডাকলে কারখানার গেটেও পৌঁছে যান। ঘটনাচক্রে, ‘তারকা’ মিঠুনের ছবি ‘প্রজাপতি ২’ মুক্তি পাওয়ার কাছাকাছি সময়ে এই মিঠুন চক্রবর্তীর জীবনেও ‘প্রজাপতি’ এসেছে। তবে সেটি ‘প্রজাপতি ১’। জানুয়ারির মাঝ বরাবর তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন। তবে বিয়ের জন্য তাঁর ‘হল’ পেতে কোনও সমস্যা হয়নি বলেই খবর।

শেক্সপিয়র লিখেছিলেন, ‘নামে কী যায় আসে!’ কিন্তু নাম-পদবি হুবহু মিলে গেলে কত রকম বিড়ম্বনা যে ঘটে, তা অনেকের জানা। যার টাটকা উদাহরণ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষ। আরজি কর পর্বে যখন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ চূড়ান্ত বিতর্কে, তখন মুর্শিদাবাদের সন্দীপ ঘোষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন ফেসবুক, মেসেঞ্জারে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে। তাঁর ক্ষেত্রে নাম-পদবির সঙ্গে পেশাও মিলে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতীকী মেরুদণ্ড হাতে নিজের ছবি পোস্ট করে ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের নামের পাশে লিখে দিয়েছিলেন, ‘নট দ্য প্রিন্সিপাল’। তবে সিপিএমের মিঠুনকে এখনও তেমন কোনও ঝক্কি পোহাতে হয়নি। সূত্রের খবর, আপাতত তিনি পর্যটকদের নিয়ে মেঘালয়ে। ফিরে এসেই তোড়জোড় শুরু করবেন বিয়ের!

Advertisement
আরও পড়ুন