SIR in West Bengal

জ্ঞানেশ কুমারের হাতে রক্ত লেগে আছে! কমিশনে গিয়ে বলে এল ক্ষুব্ধ তৃণমূল, পাঁচ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি, দাবি বঙ্গের শাসকদলের

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় আতঙ্কিত হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি, সেই তালিকা তৃণমূলের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে কমিশনের হাতে। দেওয়া হয়েছে ‘চাপ’ নিতে না-পেরে মৃত বিএলও-দেরও নামের তালিকাও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:২৮
TMC has submitted a memorandum to the Election Commission of India objecting to the SIR process

শুক্রবার দিল্লির নির্বাচন সদনের সামনে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। ছবি: সংগৃহীত।

এত দিন পর্যন্ত সাংবাদিক সম্মেলন করে বা জনসভায় বলা হচ্ছিল। শুক্রবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে তৃণমূল ক্ষোভ উগরে দিয়ে এল দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে। সূত্রেরখবর, কমিশনের কর্তাদের সামনে জ্ঞানেশের নাম করে তৃণমূলের একাধিক সাংসদ এই বলে সরব হয়েছেন যে, তাঁর (জ্ঞানেশ) হাতে রক্ত লেগে আছে! তাঁর কারণেই এত মৃত্যু এবং এত উৎকণ্ঠা!

Advertisement

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় আতঙ্কিত হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি, সেই তালিকা তৃণমূলের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে কমিশনের হাতে। দেওয়া হয়েছে ‘চাপ’ নিতে না-পেরে মৃত বিএলও-দেরও নামের তালিকাও। এই তালিকা দিয়েই তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, জ্ঞানেশের হাতে রক্ত লেগে আছে! যা কমিশনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ক্ষোভ স্পষ্ট করে দিয়েছে।

এসআইআর প্রক্রিয়া ‘অপরিকল্পিত’ বলে কয়েক দিনের ব্যবধানে জ্ঞানেশেকে জোড়া চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপর্যুপরি মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দিয়েছিল কমিশন। শুক্রবার দিল্লির নির্বাচন সদনে যান তৃণমূলের ১০ জন সাংসদ। বেরিয়ে এসে ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, শতাব্দী রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেনেরা দাবি করেন, তৃণমূলের তরফে যে পাঁচটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তার একটিরও সদুত্তর দিতে পারেননি কমিশনের কর্তারা।

সার্বিক ভাবে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাঙালিকে নিশানা করতেই এসআইআর করা হচ্ছে। তৃণমূলের তরফে এক, দুই, তিন করে মোট পাঁচটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রথমত, এসআইআর কি সত্যিই ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণের জন্য করা হচ্ছে, না কি বাংলা ও বাঙালিকে নিশানাই মূল উদ্দেশ্য? যদি তা না হয়, তা হলে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার জন্য অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজ়োরামে, অরুণাচলপ্রদেশের মতো বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যগুলিতে কেন এই প্রক্রিয়া হচ্ছে না? শুধু বাংলাতেই কেন? দ্বিতীয়ত, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকায় যদি অবৈধ ভোটার থেকে থাকে, তা হলে সেই ভোটে নির্বাচিত সরকার কী করে ক্ষমতায় থাকতে পারে? তৃতীয়ত, বিহারে এসআইআর করে কত বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছে কমিশন? চতুর্থত, বিজেপি নেতারা অহরহ বলছেন, এসআইআরের পরে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে এক কোটির বেশি নাম বাদ যাবে। কী ভাবে তাঁরা এ কথা বলছেন? কমিশন কি তা হলে বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় পরিণত হয়েছে? সর্বশেষ, মৃতদের নামের তালিকা দিয়ে দাবি তৃণমূল কমিশনের সামনে প্রশ্ন তুলেছে, এর দায় কার‌?

মমতাও কমিশনকে লেখা চিঠিতে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবি জানিয়েছিলেন। শুক্রবার কমিশনে গিয়ে একই দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলও। এসআইআর সংক্রান্ত একাধিক মামলা একসঙ্গে শুনছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতেও তৃণমূলের অন্যতম আর্জি, এই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হোক। সময় নিয়ে তা করা হোক। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর মামলার শুনানি ছিল। যদিও আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তবে আদালত জানিয়েছে, আগামী ৯ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য শোনা হবে। ঘটনাচক্রে, তার আগেই এসআইআরের প্রথম ধাপ শেষ হয়ে যাবে। বস্তুত, যে দিন শুনানি ধার্য করা হয়েছে, সেই ৯ ডিসেম্বরই খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে। সেই নির্ঘণ্ট আগেই ঘোষণা করেছে কমিশন।

Advertisement
আরও পড়ুন