(বাঁ দিকে) রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কাদের নিয়োগ করা হবে, কারা থাকবেন ওয়েটিং লিস্টে আর কাদের বাদ দিয়ে দেওয়া হবে— মূলত এই তিন ভাগে ভাগ করতে বলা হয়েছিল চাকরিপ্রার্থীদের নাম। প্রথম ভাগ ‘এ’ তালিকায়, দ্বিতীয় ভাগ ‘বি’ তালিকায় এবং তৃতীয় ভাগকে ‘সি’ তালিকায় রাখতে বলা হয়েছিল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদে এই নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠান কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বয়ং অশোক সাহা। বুধবার আলিপুর আদালতে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন সাক্ষীদের বয়ান থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে। উঠে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী এবং তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর প্রসঙ্গও।
বুধবার এসএসসি মামলায় দু’জন সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে। প্রথম জন পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়ক ধ্রুব চক্রবর্তী এবং দ্বিতীয় জন পর্ষদের অস্থায়ী কর্মী প্রীতম দাস। প্রীতম জানান, লকডাউনের সময় বোর্ডে অশোকের চিঠি এসেছিল। তিনি বলেছিলেন, প্রার্থীদের তিনটি ভাগে ভাগ করে নামের তালিকা পাঠাতে হবে কমিশনের কাছে। প্রথম ভাগ অর্থাৎ ‘এ’-তে থাকবে তাঁদের নাম, যাঁদের সরাসরি নিয়োগ করা হবে। যাঁদের নাম ওয়েটিং লিস্টে থাকবে, তাঁদের নাম রাখতে হবে ‘বি’-তে। আর যাঁদের নাম বাদ দিয়ে দিতে হবে, তাঁরা থাকবেন ‘সি’ তালিকায়। পরে আরও একটি চিঠি আসে। তাতে বলা হয়, ‘সি’ তালিকা থেকে চারটি নাম ‘এ’ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে এই নামগুলি নিয়ে পরে কী হয়েছিল, তা আর বলতে পারেননি প্রীতম।
অপর সাক্ষী ধ্রুব জানান, পর্ষদে প্রথমে তিনি স্টেনো টাইপিস্ট হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে পর্ষদ সভাপতির আপ্তসহায়ক হিসাবে কাজ করতেন। কল্যাণময়ের কাজে সাহায্য করা এবং তাঁর কথা অনুযায়ী চলাই ছিল তাঁর কাজ। ২০১৯ সালের মে মাসের পর থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠি তাঁকে খুলতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন কল্যাণময়, দাবি সাক্ষীর। জানান, গোপন চিঠি কল্যাণময়ের কাছে সরাসরি আসত। লকডাউনের সময় এক দিন নিয়োগপত্রের তালিকা দিয়ে পর্ষদ সভাপতি তাঁদের বলেছিলেন, অফিসে থেকে যেতে হতে পারে। ৬৩০ জনের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন ধ্রুব।
প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ এবং তাঁর কন্যা অঙ্কিতাকে পর্ষদের দফতরে আসতে দেখেছিলেন কল্যাণময়ের আপ্তসহায়ক। তাঁদের সভাপতির ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে নিয়োগ বিভাগেও (অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেল) যান দু’জন। দীর্ঘ ক্ষণ ভিতরে ছিলেন। তবে কী নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্তদের আইনজীবী এবং সিবিআইয়ের আইনজীবী বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। বুধবার মোটের উপর শান্ত ছিল আদালতকক্ষ। সোমবার থেকে টানা তিন দিন বিচারপ্রক্রিয়া চলল।