Voters of High Rise Buildings

বহুতল আবাসনে বুথের সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে সিইও-কে চাপ, দাবি বিজেপির! দাবিপত্রে এমন প্রসঙ্গই নেই, জানাল কমিশন

মঙ্গলবার সিইওর সঙ্গে দেখা করে বহুতল আবাসনগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির দাবি আরও জোর দিয়ে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। কিন্তু সিইও দফতর সূত্রে রাতে জানানো হল, বিজেপির তরফ থেকে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে ওই প্রসঙ্গের উল্লেখই নেই। শুধু মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে বিষয়টি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১৭
Why are you waiting for permission? BJP increases pressure of EC demanding separate polling booths inside big housing complex

মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

বহুতল আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা চলবে না, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কাছে এমনই দাবি জানিয়ে এসেছে বলে জানাল রাজ্য বিজেপি। যদিও বিজেপি এই দাবি করার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সিইও দফতর জানাল, যে দাবিপত্র বিজেপির দুই প্রতিনিধি সিইও-কে দিয়ে এসেছেন, তাতে এমন কোনও দাবির উল্লেখই নেই। মৌখিক ভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে মাত্র।

Advertisement

সোমবার সিইও দফতর সূত্রে জানা গিয়েছিল যে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক আবেদন জমা না-পড়ায় বহুতলের বাসিন্দাদের জন্য তাঁদের আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা থেকে কমিশন পিছিয়ে আসছে। কমিশনের এই ভাবনা প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ‘সক্রিয়’ হয় বিজেপি। মঙ্গলবার সিইওর সঙ্গে দেখা করে বহুতল আবাসনগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির দাবি আরও জোর দিয়ে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। কিন্তু সিইও দফতর সূত্রে রাতে জানানো হল, বিজেপির তরফ থেকে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে ওই প্রসঙ্গের উল্লেখই নেই। শুধু মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে বিষয়টি।

কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রেই অভিজাত বহুতল আবাসনের সংখ্যা গত দু’দশকে লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির হিসাব অনুযায়ী, কলকাতার ক্ষেত্রে এই বহুতলবাসীরা মোট ভোটের ৮-১০ শতাংশ। কিন্তু বাইরের ঝুটঝামেলা এড়িয়ে আবাসন চত্বরকে নিজস্ব সুরক্ষাবলয়ে মুড়ে রাখতে অভ্যস্ত এই সব অভিজাত বহুতলবাসীদের অনেকেই ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছোন না। বিভিন্ন রাজ্যেই এমনটা দেখা যায়। কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভাবনা ছিল যে, কোনও আবাসনে ৩০০-র বেশি ভোটার থাকলে সেই আবাসন চত্বরের ভিতরেই পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরি করে দেওয়া হবে। তাতে অশান্তির আশঙ্কায় ভোট দিতে না-যাওয়ার কোনও অবকাশ থাকবে না। ভোটদানের হারও বাড়বে।

তৃণমূল শুরু থেকেই কমিশনের এই ভাবনার বিরোধী ছিল। উল্টো দিকে বিজেপি চাইছিল, ৩০০-র বেশি ভোটার থাকেন, এমন সব আবাসন চত্বরের ভিতরেই পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরি হোক। কিন্তু বহুতল চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরি আটকাতে তৃণমূল নেতারা কলকাতার বিভিন্ন অভিজাত আবাসনে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের উপর ‘চাপ’ তৈরি করছেন বলে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হচ্ছিল। আবাসন চত্বরের ভিতরে ভোটকেন্দ্র তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁদের আপত্তি রয়েছে বলে জানিয়ে চিঠি লিখে দেওয়ার জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের উপরে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছিল বলেও বিজেপির অভিযোগ। তৃণমূল সে অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সোমবার কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র দু’টি। তাই কমিশন এই ভাবনা থেকে পিছিয়ে আসছে।

বিজেপির দাবি, তৃণমূলের চাপে ভয় পেয়েই আবাসনের বাসিন্দারা পৃথক ভোটকেন্দ্র চেয়ে আবেদন জানাতে পারেননি। মঙ্গলবার বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ এবং শিশির বাজোরিয়া দেখা করেন সিইও মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে। এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি বহুতল আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির বিষয়টিও তাঁরা তোলেন। শিশিরের কথায়, ‘‘আমরা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বহুতল আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে কমিশন কি পিছিয়ে গিয়েছে? মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আমাদের জানিয়েছেন যে, তিনি এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।’’ আনন্দবাজার ডট কমকে শিশির বলেছেন, ‘‘আবাসন চত্বরের ভিতরে ভোটকেন্দ্র তৈরি করতে হলে আবাসনের বাসিন্দাদের অনুমতি নিতে হবে বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। আমরা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি যে, রাস্তা থেকে যখন গাড়িগুলোকে ভোটের কাজে নিয়ে নেন, তখন কি মালিকের অনুমতি নেন? তখন তো যত গাড়ি দরকার, নিজেদের ইচ্ছামতো রাস্তা থেকে তুলে নেন। ভোটকেন্দ্র তৈরির ক্ষেত্রে তা হলে অনুমতি বা আবেদনের অপেক্ষা করছেন কেন?’’

সিইও দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিজেপির তরফ থেকে লিখিত ভাবে এমন কোনও দাবি মঙ্গলবার জানানো হয়নি। সিইও-র সঙ্গে কথোপকথনে মৌখিক ভাবে ওই বিষয়টি বলা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিজেপির প্রতিনিধিদলকে কোনও আশ্বাস সিইও দফতর থেকে দেওয়া হয়নি। কারণ কোনও আবাসনের বাসিন্দাদের অনুমতি ছাড়াই সেখানে ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হবে কি না, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নেয়। সিইও দফতর সূত্রের দাবি, বিজেপি নেতাদের সে কথাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিইও-দের দেওয়া রিপোর্ট কমিশনের দিল্লি দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও বিজেপি নেতাদের জানানো হয়েছে বলে সিইও দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement
আরও পড়ুন