পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। —ফাইল চিত্র।
মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য করতে গিয়ে বিপাকে পাকিস্তান। পাঁচটি দেশকে নিয়ে তাদের চিন্তা বাড়ছে। কারণ শত চেষ্টা সত্ত্বেও এই পাঁচ দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে উন্নতি করতে পারছে না ইসলামাবাদ। বাণিজ্য চলছে, তবে লাভ হচ্ছে না। পাকিস্তানের আমদানি বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় পণ্য রফতানি হচ্ছে না এই সমস্ত দেশে। ফলে বাণিজ্যে ভারসাম্য থাকছে না। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা ভাবতে গিয়ে এখন ঘুম উড়েছে পাক আধিকারিকদের।
মধ্য এশিয়ার যে পাঁচটি দেশের সঙ্গে মূলত পাকিস্তানের বাণিজ্য চলে, তাদের মধ্যে রয়েছে কাজ়াখস্তান, কিরগিজ়স্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজ়বেকিস্তান। পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই পাঁচ দেশে পাক পণ্যের রফতানি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৩১.৬৩ শতাংশ কমে গিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই দেশগুলিতে পাকিস্তান ২.৪৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছিল। ২০২৪-২৫-এ তা কমে হয়েছে ১.৭ হাজার কোটি টাকা। তবে একই দেশ থেকে আমদানি প্রায় চার গুণ বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই পাঁচ দেশ থেকে পাকিস্তান ৪১৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছিল। পরের অর্থবর্ষে তা এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ২.১১ হাজার কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে অর্থবর্ষ ধরা হয়, ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্য়ন্ত।
পাঁচটি দেশেই বাণিজ্যসংক্রান্ত একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সফর এবং বৈঠক করেছেন পাক সরকারি আধিকারিকেরা। আলাদা করে বাণিজ্যচুক্তিও হয়েছে। বিশেষত উজ়বেকিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যচুক্তি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এত চেষ্টা সত্ত্বেও বাণিজ্যের পরিমাণ তেমন বাড়েনি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মধ্য এশিয়ায় পাকিস্তানের পণ্য সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় কাজ়াখস্তানে। কিন্তু সেখানেও রফতানি ৪৭ শতাংশ কমে গিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১.৬ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০২৪-২৫-এ বছর তা নেমে এসেছে ৮৪৬ কোটি টাকায়। তবে কাজ়াখস্তান থেকে আমদানি বেড়ে হয়েছে ১.১ হাজার কোটি টাকা, যা আগে ছিল মাত্র ৫.৮৫ কোটি টাকা।
একই ভাবে আগের বছরের চেয়ে উজ়বেকিস্তানে পাকিস্তানি পণ্যের রফতানি এ বছর ১৮.১৭ শতাংশ কমেছে। কিন্তু আমদানি বেড়ে গিয়েছে ১৭৭.৬ শতাংশ। কিরগিজ়স্তানে রফতানি কমেছে ৫৮.২৬ শতাংশ। কিন্তু আমদানি বেশ খানিকটা বেড়েছে।
তুর্কমেনিস্তানে পাকিস্তানি পণ্যের রফতানি সামান্য বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সেখানে ১০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করা হয়েছিল। ২০২৪-২৫-এ হয়েছে ১৪ কোটি টাকার রফতানি। তবে পাল্লা দিয়ে আমদানিও বেড়েছে প্রায় ৩৫.৪৮ শতাংশ। একই ভাবে তাজিকিস্তানে পাক পণ্যের রফতানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু আমদানি বেড়েছে প্রায় ২১১ শতাংশ।
প্রতি বছর আফগানিস্তানের পথ ধরে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চলে পাকিস্তানের। কিন্তু কূটনৈতিক কৌশল, অর্থনীতির উন্নয়নের নীতিগত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ বছর বাণিজ্যে ভারসাম্য নেই। কী করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব, বোঝার চেষ্টা করছেন পাক অর্থনীতিবিদেরা। মূলত পাকিস্তানের বাজারে মধ্য এশিয়ার পণ্যের বিপুল চাহিদাই আমদানি বৃদ্ধির কারণ। তবে একই ভাবে ওই সমস্ত দেশে পাক পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।