Russia-Ukraine Conflict

১২০০০ সেনার মৃতদেহ বিনিময় হবে! ড্রোনের দগদগে ঘা নিয়েই ইস্তানবুলে ইউক্রেনের সঙ্গে এক টেবিলে বৈঠকে বসল রাশিয়া

২০২২ সাল থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। কখনও রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে ইউক্রেনের একের পর এক শহর। তেমনই পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন সেনা। সেই আবহেই সোমবার বৈঠকে বসেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ২১:৪৫
Russia-Ukraine peace talks end within an hour, they agreed to some condition

(বাঁ দিকে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

১২০০০ সেনার মৃতদেহ বিনিময় করবে ইউক্রেন এবং রাশিয়া! তুরস্কের ইস্তানবুলের শান্তি বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে। রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক টেবিলে আলোচনায় বসেছিলেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। ইস্তানবুলে দ্বিতীয় দফার শান্তি বৈঠকে যোগ দেন তাঁরা। উদ্দেশ্য— যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা। তবে সেই আলোচনায় রফাসূত্র বার হয় কি না, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল বিশ্বের কূটনৈতিক মহলে। ওই বৈঠকে শুধু সেনাদের মৃতদেহ বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নয়, বন্দি বিনিময়েও সম্মত হয়েছে দুই দেশ। তবে যুদ্ধবিরতি কি হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেনি তারা।

Advertisement

২০২২ সাল থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। কখনও রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে ইউক্রেনের একের পর এক শহর। তেমন পাল্টা হামলাও চালিয়েছে ইউক্রেন সেনা। কী ভাবে দুই দেশের মধ্যে শান্তি ফেরানো যায়, যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়— তা নিয়ে বিভিন্ন দেশই উদ্যোগী হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বার বার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান। অবশেষে দুই দেশই আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়। ঠিক হয়, ইস্তানবুলে হবে ওই বৈঠক। সোমবার ছিল দ্বিতীয় দফার বৈঠক। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ঘণ্টা পর বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু আলোচনা শেষ হয় মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই।

পূর্ব নির্ধারিত এই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়ায় একের পর এক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে রবিবার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘স্পাইডার ওয়েব’, অর্থাৎ ‘মাকড়সার জাল’! ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান। আশঙ্কা ছিল, এই হামলার রেশ পড়বে ইস্তানবুলের বৈঠকে। সূত্রের খবর, আলোচনা প্রথম থেকেই উত্তপ্ত ছিল। তবে তুরস্কের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল আলোচনার নির্যাস জানায়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানান, তাঁরা বিশ্বাস করেন, সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি দু’দেশের নেতৃত্ব স্তরের আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধান করা সম্ভব। রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশই বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। ২৫ বছরের কম বয়সি সমস্ত গুরুতর অসুস্থদের ছাড়া হবেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইউক্রেনের দাবি, মস্কো এখনও পর্যন্ত নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়।

রাশিয়া আগেই জানিয়েছিল, তারা একটি ‘স্মারকলিপি’ পাঠিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনকে। তাতে লেখা থাকবে শান্তি নিয়ে তাদের শর্ত। ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, ওই ‘স্মারকলিপি’ তাঁরা পেয়েছেন। এই বিষয়ে আলোচনার পরেই তাঁদের মতামত জানানো হবে। জুনের শেষের দিকে আবার আলোচনায় বসার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের তরফে।

রাশিয়ার তরফে সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিনের সহকারী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি। তিনি জানান, ইউক্রেনের তরফেও তাঁরা একটি ‘স্মারকলিপি’ পেয়েছেন। রাশিয়া নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় দুই থেকে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে ছ’হাজার সেনার দেহ বিনিময়ের বিষয়টিও স্বীকার করেছেন মস্কোর প্রতিনিধিরা।

ইস্তানবুলের বৈঠক ‘চমৎকার’ হয়েছে বলে জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ান। তিনি এ-ও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন, তাঁর দেশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একসঙ্গে আমন্ত্রণ জানাতে আগ্রহী। এর্ডোয়ানের কথায়, ‘‘আমার ইচ্ছে তিন জনকে একসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসানোর। যদি তাঁরা চান, আমিও সেই বৈঠকে থাকতে পারি।’’

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই আমেরিকা আবার ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে মুখোমুখি বসে শান্তি আলোচনা করার উপর জোর দিয়েছে। তিন বছর যুদ্ধের পরে প্রথম বার কোনও মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই গত ১৭ মে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিল দু’পক্ষ। যুদ্ধবিরতি নিয়ে ঐকমত্য না-হলেও তুরস্কের ইস্তানবুলের রয়্যাল প্যালেসে আয়োজিত ওই বৈঠকে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মস্কো এবং কিভ। তার পরে সোমবার আবার একই জায়গায় বৈঠক করলেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।

Advertisement
আরও পড়ুন