SCO Summit in China

একঘরে তো ননই, তিন বছর পরে এসসিও বৈঠকের মধ্যমণি ‘যুদ্ধাপরাধী’ পুতিন! কী কারণে কদর বাড়ল রুশ প্রেসিডেন্টের

২০২২ সালের এসসিও বৈঠকে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিল চিন। শুধু তা-ই নয়, পুতিনের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুশ প্রেসিডেন্টকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, “এটা যুদ্ধের সময় নয়।”

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১২
(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, ভ্লাদিমির পুতিন এবং শি জিনপিং।

(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, ভ্লাদিমির পুতিন এবং শি জিনপিং। ছবি: সংগৃহীত।

তিন বছরে যে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে, তা খালি চোখেই ধরা পড়ল। তিন বছর আগে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে হওয়া এসসিও বৈঠকে কার্যত একঘরে ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ, তার মাস ছয়েক আগেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর আমেরিকা বা পশ্চিমি দুনিয়া তো বটেই, ইউরোপ-এশিয়ার বহু দেশও পুতিন এবং রাশিয়াকে তখন ‘আগ্রাসনকারী’ বা ‘আক্রমণকারী’ হিসাবেই দেখছে। তবে তিন বছর পরে চিনের তিয়ানজিন শহরে এই এসসিও বৈঠকেই দেখা গেল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। বৈঠকের নানা ছবি, ভিডিয়োয় ধরা পড়ল এ বার সেখানে মধ্যমণি পুতিনই।

Advertisement

সদ্য সমাপ্ত এসসিও সম্মেলনে সদস্য দেশগুলির যৌথ বিবৃতিতে বিভিন্ন যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রসঙ্গ থাকলেও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনও বাক্যব্যয় করা হয়নি। বিষয়টিকে ‘অদ্ভুত’ বলে ব্যাখ্যা করেছে ইউক্রেন। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম যুদ্ধ নিয়ে কোনও কথা বলা হল না। এটা আশ্চর্যজনক।” কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ২০২২ সালের এসসিও বৈঠকে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিল চিন। শুধু তা-ই নয়, পুতিনের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুশ প্রেসিডেন্টকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, “এটা যুদ্ধের সময় নয়।”

এ বারের এসসিও বৈঠকে পুতিনের গুরুত্ববৃদ্ধির নেপথ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘হাত’ দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। মনে করা হচ্ছে, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক চাপিয়ে মস্কোর গুরুত্ববৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন তিনি। প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া ভারতের পুরনো বন্ধু হলেও পুতিনকে পাশে নিয়ে মোদী হোয়াইট হাউসকে এই বার্তাই দিয়েছেন যে, নয়াদিল্লির কাছেও বিকল্প পথ খোলা রয়েছে। আর আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চিনও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প-বিরোধী জোটে শান দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এসসিও সম্মেলনে পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো এবং পশ্চিমি শক্তির ‘অকারণ হস্তক্ষেপ’কে দায়ী করেছেন। তিন বছর আগে এত দৃঢ় ভাবে অবস্থান জানানোর সুযোগ তিনি পাননি। অনেকের মতে পুতিন নতুন অনেক দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমের দেশগুলি রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ চাপালেও অশোধিত তেল বিক্রি পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পেরেছে ভারত। ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপালেও ভারতও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেই সময় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোণঠাসা পুতিন ট্রাম্প প্রশাসনের খামখেয়ালি নীতির জন্যই বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব মঞ্চে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নিজেদের ভাষ্যও তুলে ধরতে পারছে রাশিয়া।

Advertisement
আরও পড়ুন