Bangladesh Situation

আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙতে বাংলাদেশে নামল বুলডোজ়ার! রাতভর ভাঙচুর-লুটের পর কী বলছেন বিএনপি-জামাত নেতারা

সংবাদপত্রের অফিসে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ইংরেজি সংবাদপত্র ‘নিউ এজ’-এর সম্পাদক নুরুল কবির। বিক্ষোভকারীরা তাঁকেও হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৪৪
(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা। রাজশাহীতে বুলডোজ়ার দিয়ে ভাঙা হচ্ছে আওয়ামী লীগের অফিস (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা। রাজশাহীতে বুলডোজ়ার দিয়ে ভাঙা হচ্ছে আওয়ামী লীগের অফিস (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

সাধারণ নির্বাচনের আগেই বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। রাতভর সে দেশের নানা প্রান্তে ভাঙচুর-লুটের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকার কারওয়ান বাজারে দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুর চালানোর পর আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ধানমন্ডিতে সঙ্গীতশিল্পী সন্‌জীদা খাতুন প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ছায়ানট’-এর সাততলা ভবনের প্রতিটি কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ভাঙতে নামানো হয় বুলডোজ়ার।

Advertisement

বাংলাদেশের সামগ্রিক এই অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে লিখেছেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি-সহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। দুষ্কৃতীদের নির্মম হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি নিহতের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ।” দুষ্কৃতীদের কঠোর হাতে দমন করার ডাকও দিয়েছেন আলমগীর। একই সঙ্গে সংবাদপত্রের অফিসে হামলার নিন্দা করেছেন তিনি।

অন্য দিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তি ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-ও এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আর্জি জানিয়েছে। দলের নেতা শফিকুর রহমান সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, “দেশটা আমাদের সকলেরই অস্তিত্বের অংশ। আশা করি সকলেই সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিবো।” শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে ভাঙচুরের ভিডিয়ো সংবলিত সংবাদ প্রতিবেদন পোস্ট করা হয়েছে। সংবাদপত্রের অফিসে হামলার নিন্দা করে হাসিনার দল লিখেছে, “এই লুট আর হাঙ্গামার রাজত্ব কায়েম করেছে ইউনূস সরকার, এনসিপি (জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-যুবদের একাংশের দল) আর জঙ্গিগোষ্ঠী।”

রাত ২টো নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর অফিসে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হলেও গোটা ভবনটি প্রায় পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘প্রথম আলো’র চারতলা ভাবনটি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালেও কয়েকটি জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার দু’টি সংবাদপত্রেরই মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। সংবাদপত্রের অফিসে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ইংরেজি সংবাদপত্র ‘নিউ এজ’-এর সম্পাদক নুরুল কবির। বিক্ষোভকারীরা তাঁকেও হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ।

হাসিনা জমানার অবসানের পর একাধিক বার ভাঙচুর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি। বৃহস্পতিবার রাতে সেই বাড়ি তথা সংগ্রহশালায় ফের ভাঙচুর চালানো হয়। শুক্রবার সকালেও কয়েক জনকে ইট দিয়ে বাড়ির অবশিষ্ট দেয়াল ভাঙতে দেখা গিয়েছে।

জুলাই আন্দোলনের (২০২৪ সালের অগস্ট মাসে যার জেরে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন) অন্যতম নেতা হাদি গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ইউনূস সরকারের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের এক কর্মী হাদির মাথায় গুলি করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ইনকিলাব মঞ্চ নামক সংগঠনের আহ্বায়ক হাদির মৃত্যুর পরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। খুব সম্ভবত পরিস্থিতি আঁচ করেই গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইউনূস। সেখানে তিনি ‘ধৈর্য ও সংযম’ বজায় রাখার আবেদন জানান। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিক্ষোভকারীরা দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানের আবেদন কার্যত অগ্রাহ্য করেছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন