CU on Malaria and Dengue prevention

মানুষের রক্ত নয়, ফুলের রসই চুষবে মশা! ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থেকে কি বাঁচবে কলকাতা?

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিশেষ দুই প্রজাতির মশা যখন লার্ভা অবস্থায় থাকে, তখন তারা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে জীবাণুবাহক চার প্রজাতির মশার লার্ভা থেকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ১৮:১১

নিজস্ব চিত্র।

রাতে মশা, দিনে মাছি— দীর্ঘ দিনের অভ্যাসে বাঁচে কলকাতা। ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গির মতো রোগে নিত্য ভোগান্তি এ শহরের। মশা মারতে কামান দাগা কম হয়নি, তবু কমেনি উপদ্রব। শুধু কলকাতা নয়, জল-জঙ্গলের বঙ্গদেশে সর্বত্রই মশার উৎপাত, আর রোগভোগ। এ বার বিজ্ঞান বলছে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা, মশা দিয়ে মশার বংশ ধ্বংস করার কথা।

Advertisement

নতুন করে বলছে, তেমন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা চলছে এ বিষয় নিয়ে। এ বার আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ গবেষণা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিতত্ত্ব বিভাগ জানাচ্ছে, দু’টি বিশেষ প্রজাতির মশা ত্রাতা হয়ে আসতে পারে বঙ্গজীবনে। বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজের অধ্যাপক গৌতম আদিত্য এবং অধ্যাপক গৌতমকুমার সাহার নেতৃত্বে ১০ জন গবেষক তাঁদের প্রকল্পের কথা তুলে ধরেছেন নেদারল্যান্ডসের এক বিজ্ঞান পত্রিকায়।

গবেষক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান গৌতম আদিত্য বলেন, “টেক্সেরিনকাইটিস ও লুটজিয়া প্রজাতির মশা আদতে উপকারী। এরা মানুষের রক্ত খায় না। বরং অপকারী মশার লার্ভা খেয়ে তাদের বংশ ধ্বংস করে।” অধ্যাপক জানান, আমাদের প্রকৃতিতে যে সব প্রজাতির মশা পাওয়া যায়, তার মধ্যে চারটি প্রজাতি রক্ত খেয়েই বেঁচে থাকে। এদের মধ্যে এডিস প্রজাতির মশা ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া রোগের, এনোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া এবং কিউলেক্স ও আরমিজেরিসিস গোদ বা জাপানি ইনসেফেলাইটিস-এর কারণ। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে দু’টি প্রজাতির মশা— টেক্সেরিনকাইটিস স্পেনডেন্স ও লুটজিয়া ফুসকানা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই দুই প্রজাতির মশা যখন লার্ভা অবস্থায় থাকে, তখন তারা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে জীবাণুবাহক চার প্রজাতির মশার লার্ভা থেকে। এরা সাধারণত একই পরিবেশে, একই সঙ্গে বাস করে। ফলে পরিবেশে টেক্সেরিনকাইটিস ও লুটজিয়ার লার্ভা বাড়লে, ক্রমশ কমতে থাকবে এডিস, অ্যানোফিলিস বা কিউলেক্স ও আরমিজেরিসিসের লার্ভা।

গৌতম আদিত্য বলেন, “গবেষণায় দেখেছি টেক্সেরিনকাইটিস স্পেনডেন্স ও লুটজিয়া ফুসকানার অন্যতম বাসস্থান ধানখেত, গাছের কোটরে জমা জল। এই দুই প্রজাতির মশা মানুষের রক্তও খায় না। টেক্সেরিনকাইটিস সাধারণত ফুলের রস খায়। অন্য দিকে, লুটজিয়া রক্ত খেলেও মানুষকে আক্রমণ করে না। তাদের লক্ষ্য পাখিরা। ফলে ভেক্টর মশার লার্ভা নিধন করতে পারে এরা মানুষের কোনও ক্ষতি না করেই।”

১৯৮০ সাল থেকে এই বিষয়ে গবেষণা চলছে কলকাতায়। ১৯৯০ সালের মধ্যে অধ্যাপক অমিয়কুমার হাটি ও অমিতাভ নন্দীর গবেষণায় প্রথম বার এই তথ্য উঠে আসে। তার পর দীর্ঘ দিন এ নিয়ে তেমন কাজ হয়নি আর। ২০০০ থেকে ফের শুরু হয় গবেষণা। ২০২৫ পর্যন্ত নিরন্তর কাজ করছে বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজ।

তবে, সরকারি ভাবে কবে এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হবে, তা এখনও জানেন না গৌতম আদিত্য। তাঁর দাবি, এই কাজ সম্পর্কে অবগত কলকাতা পুরসভা ও প্রশাসন। ফলে চাইলে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতেই পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন