পিরিয়ডের সময়ে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়? ছবি: সংগৃহীত।
ঋতুস্রাবের যন্ত্রণাকে স্বাভাবিক বলেই জেনে এসেছেন। প্রতি বারই গরম জলের ব্যাগ অথবা ওষুধের ভরসায় দিন কয়েক কাটিয়ে দেন। কখনও কখনও যন্ত্রণা তীব্রতর হয়ে ওঠে, শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তা-ও আপনি জানেন, এ তো প্রতি বারই হয়, কখনও সখনও একটু বেশি ব্যথা হতেই পারে। কিন্তু দুর্বিষহ ব্যথাকে অবহেলা করতে করতে অনেকেই দেরি করে ফেলেন। পরীক্ষা হয় না, তাই চিকিৎসাও হয় না সময় মতো। কিন্তু শরীরে সামান্য কয়েকটি পরিবর্তনই বড়সড় রোগের ইঙ্গিত দেয়। তা হল, এন্ডোমেট্রিয়োসিস।
কুয়ালালামপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক শরিফা হালিমা জাফর ইনস্টাগ্রামের একটি পোস্টে জানান, প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে এক জন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। জরায়ুর ভিতরে এন্ডোমেট্রিয়াম নামক একটি স্তর রয়েছে। এই স্তর খসে পড়েই প্রতি মাসে ঋতুস্রাব হয়। সেই রক্ত সন্তানপ্রসবের পথ দিয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু কখনও সখনও জরায়ুর বাইরে, যেমন ডিম্বাশয়ে, ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং পেলভিসে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর তৈরি হতে পারে। সেখানে তখন প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং সেই স্তর খসে রক্তপাত হয়। কিন্তু সেটি শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে সেখানেই জমাট বাঁধতে থাকে। তাই ঋতুস্রাবের সময়ে তীব্র ব্যথা, অনিয়মিত রক্তপাত এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগকেই বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়োসিস।
এন্ডোমেট্রিয়োসিস রোগ। ছবি: সংগৃহীত।
এই রোগের কয়েকটি উপসর্গের কথা উল্লেখ করলেন চিকিৎসক
১. ঋতুস্রাবের সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাত: ঋতুস্রাবে অনেক সময়েই অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু সব সময়ে সেটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এন্ডোমেট্রিয়োসিসের প্রাথমিক লক্ষণ কিন্তু বেশি পরিমাণে রক্তপাত হওয়া। যদি দেখেন, হঠাৎ করে বেশি স্রাবের সমস্যা হচ্ছে, বা ঘন ঘন স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলাতে হচ্ছে, তা হলে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত।
২. যৌনমিলনের সময়ে প্রবল যন্ত্রণা: এই রোগ অনেক সময়ে যৌনজীবনের উপরও প্রভাব ফেলে। প্রতি বার সঙ্গমের সময়ে বা পরে যদি অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে যোনিপথে, তা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা দরকার। পেলভিক অঙ্গগুলিতে এন্ডোমেট্রিয়োটিক ক্ষত থাকলে এমন ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
৩. পেলভিসে ব্যথা: ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে যন্ত্রণা হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেটি যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তা ছাড়া প্রতি বারই যদি এমন হয় যে, পিরিয়ড মানেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা, তা হলে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময়ে পিরিয়ড শেষের পরেও ব্যথা হতে পারে।
৪. মলত্যাগে সমস্যা: মলত্যাগ করার সময়ে ব্যথা বা জ্বালা হলে উপেক্ষা করবেন না। অনেক সময়ে মল দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্টেও ভুগতে হতে পারে। অনেকেই এই উপসর্গগুলিকে ইরিটেব্ল বাওল সিনড্রোমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন বলে দেরি হয়ে যায় চিকিৎসায়।
৫. পেটফাঁপার সমস্যা: অনেক ক্ষেত্রেই এন্ডোমেট্রিয়োসিসে পেট ফুলে থাকে। পেটে যন্ত্রণাও হতে পারে। অন্ত্র সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬. অকারণে ক্লান্তি: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা প্রদাহ থেকে ক্লান্তি তৈরি হতে পারে। আপনি হয়তো যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়েছেন, অথচ তার পরেও ক্লান্তি কাটতে চাইছে না। সে ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের মতো আরও নানা রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে।
৭. বন্ধ্যাত্ব: এন্ডোমেট্রিয়োসিস হলে গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব দেখা যেতে পারে। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের উপর জমা হয়ে আঠালো স্তর তৈরি করে। এই স্তর ডিম্বাণুকে জরায়ুতে পৌঁছোতে বা ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়াতে বাধা দেয়।
চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেকেই সাধারণ ঋতুস্রাবের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন এই ধরনের উপসর্গগুলিকে। সে কারণেই ভুল চিকিৎসা বা বিনা চিকিৎসার ঝুঁকি থেকে যায়। ৬-১০ বছরও দেরি হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। সময় মতো এন্ডোমেট্রিয়োসিসের চিকিৎসা না হলে চিরকালীন বন্ধ্যাত্বের সমস্যা ঘনিয়ে আসে। পাশাপাশি, আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন রোগীরা। তাই এমন উপসর্গ লক্ষ করার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’’