Cosmetic Filler

‘ফিলার থেরাপি’ কতটা বিপজ্জনক? ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে গিয়ে অন্ধত্ব, ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে?

চল্লিশে পৌঁছেও কুড়ি বছরের মতো ঝকঝকে, টানটান ত্বক পেতে ডার্মা ফিলার করাচ্ছেন অনেকেই। এতে জটিল থেরাপির প্রয়োজন নেই। ত্বকে সুচ ফোটালেই হবে। আর তা করতে গিয়ে যা যা বিপদ ঘটছে, তা জেনে রাখা জরুরি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১১
Cosmetic Filler can cause serious health risks like blindness, stroke

ডার্মা ফিলারের বিপদ,অভিজ্ঞ হাতে না হলে কী ক্ষতি হতে পারে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বয়স বাড়লে ত্বক কুঁচকে যাওয়া, বলিরেখা পড়ার সমস্যা স্বাভাবিক। কিন্তু এখনকার সময়ে বয়সের সেটুকু ছাপ রাখতেও অনেকে রাজি নন। ত্বক হবে যৌবনের মতোই ঝকঝকে ও টানটান। তারকাদের দেখাদেখি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে চেষ্টার অন্ত নেই। কেউ করাচ্ছেন বোটক্স, কেউ লেজ়ার দিয়ে বলিরেখার চিহ্ন মিটিয়ে দিচ্ছেন আবার কেউ নানা রকম রেডিয়েশন থেরাপির দিকে ঝুঁকছেন। এর মধ্যেই ফিলার থেরাপিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কমবয়সিদের মধ্যে। ত্বকে ইঞ্জেকশন দিলেই বলিরেখা উধাও হবে, ত্বক হবে টানটান, ঝকঝকে। ঠোঁটে সুচ ফোটালে তা ফুলেফেঁপে উঠবে। পুরু হবে ঠোঁট। একে বলে ‘লিপ ফিলার’, যা করিয়ে বিপদে পড়েছিলেন উর্ফী জাভেদ। দীর্ঘ দিন যন্ত্রণা সইতে হয়েছিল তাঁকে।

Advertisement

গবেষণা বলছে, ফিলার করালে ত্বকে যৌবনের জেল্লা ফেরে ঠিকই, কিন্তু সামান্য ভুল হলেই তা মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ফিলার করানোর পরে ত্বকে রক্ত জমাট বেঁধে প্রাণসংশয় হয়েছে, এমন উদাহরণও অনেক। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফিলার থেরাপি বা ডার্মা ফিলার ভুল পদ্ধতিতে হলে বা একাধিক বার করানোর চেষ্টা করলে, তা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এর থেকে দৃষ্টিজনিত সমস্যাও হতে পারে।

কতটা ক্ষতিকর হতে পারে ফিলার?

ফিলার হল এমন এক পদ্ধতি, যেখানে সুচ ফুটিয়ে চামড়া ভেদ করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় থকথকে জেলি। সাধারণত হায়ালুরনিক অ্যাসিড ইনজেক্ট করা হয় ত্বকে। এতে ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টেন প্রোটিন তৈরি হয়, তাতে ত্বক টানটান হয় ও বলিরেখা পড়ে না। কিন্তু সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। ফিলার ইঞ্জেকশন দিয়ে গিয়ে যদি কোনও ভাবে তা রক্তনালি ভেদ করে ঢুকে যায় বা রক্তজালিকাগুলিকে ছিঁড়ে দেয়, তা হলেই সর্বনাশ! রক্তনালিতে ছিদ্র হলে সেখান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হবে। একটা সময়ে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দেবে। রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকলে, ত্বকের কোষগুলির মৃত্যু হতে থাকবে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ভাস্কুলার অকুলেশন’। এতে ত্বক সাদা বা ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। ভাস্কুলার অকুলেশন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে মুখের শিরা ও ধমনী দিয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হবে। ফলে রক্ত জমাট বেঁধে দৃষ্টিজনিত সমস্যা শুরু হবে। এর থেকে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

ডার্মা ফিলার অভ্যস্ত হাতে না হলে, এর থেকে ত্বকের সংক্রমণও ঘটতে পারে। ফলে ত্বকের কোষগুলির অকালমৃত্যু হতে থাকবে। নেক্রোসিসের লক্ষণ দেখা দেবে, ফলে ত্বক অস্বাভাবিক রকম ফুলে উঠবে। যন্ত্রণা শুরু হবে। ত্বকের প্রদাহ এতটাই বেড়ে যাবে, যে তা থেকে ত্বকে ক্ষত বা ঘা হতে পারে। ফিলার ঠিকমতো না হলে বা তাতে ব্যবহার করা হায়ালুরনিক অ্যাসিডের ডোজ় বেশি হয়ে গেলে, গাল, ঠোঁট ও আশপাশের এলাকা বেঁকেচুরে গিয়ে পুরোপুরি বিকৃত হয়ে যাবে। ফলে মুখের গড়নই অস্বাভাবিক হয়ে যাবে।

লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ থাকলে ফিলারের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর থেকে অটোইমিউন রোগ হতে পারে। স্নায়ুর অসাড়তা দেখা দিতে পারে। তাই ফিলার করাতে হলে অভিজ্ঞ ও পেশাদার কারও থেকে করানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন