Deadly Brain-Eating Amoeba

তর্পণে গঙ্গায় নামবেন অসংখ্য মানুষ, মগজখেকো অ্যামিবার ভয় আছে কি? কেরলের আতঙ্ক বাংলাতেও?

রবিবার মহালয়া। হাজার হাজার মানুষ গঙ্গায় তর্পণ করতে যাবেন। অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে, গঙ্গায় ডুব দিলে নাকে অ্যামিবা ঢুকে যাবে না তো?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৮
Health alert as Brain-Eating amoeba Naegleria fowleri cases rise in India

অ্যামিবা নিয়ে এখানে ভয় কতটা, কী বললেন চিকিৎসকেরা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এককোষী প্রাণী। খালি চোখে দেখা যায় না এই প্রাণীকে। কিন্তু এরা ভয়ঙ্কর। এক বার নাক-মুখ দিয়ে শরীরে ঢুকে পড়লে সটান হানা দেয় মস্তিষ্কে। মগজের ঘিলু খেয়ে সেখানে এমন ক্ষত তৈরি করে, যা প্রাণঘাতী। গত কয়েক মাসে কেরলে এমন মগজখেকো অ্যামিবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ১৯ জনের। যেহেতু জলের মাধ্যমেই ছড়ায় এরা, তাই জল নিয়েই শুরু হয়েছে আতঙ্ক। রবিবার মহালয়া। হাজার হাজার মানুষ গঙ্গায় তর্পণ করতে যাবেন। অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে, গঙ্গায় ডুব দিলে নাকে অ্যামিবা ঢুকে যাবে না তো? কেরলের পরে ঘিলুখেকো অ্যামিবা নিয়ে মাথাব্যথা শুরু হয়েছে পৌর প্রশাসনেরও।

Advertisement

মস্তিষ্কের কোষ কুরে কুরে খায় অ্যামিবা

অ্যামিবা হল থার্মোফিলিক, উষ্ণ প্রস্রবণ বা গরম জলে এই প্রাণীকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সাধারণত পরিষ্কার জলেই অ্যামিবার বাস। জলের উষ্ণতা যত বাড়বে, অ্যামিবার সংখ্যাও ততই বৃদ্ধি পাবে। বদ্ধ জলে এরা দ্রুত বংশবিস্তার করে। এদের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘নিগ্লেরিয়া ফোলেরি’। নদী, পুকুর হ্রদ থেকে সুইমিং পুল, যে কোনও জলেই এদের অবাধ বাস। শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায়, দূষিত জলেও দেখা মেলে এদের। দীর্ঘ দিন ধরে পরিষ্কার না করা সুইমিং পুল বা ক্লোরিনেটেড নয়, এমন বদ্ধ জলে দ্রুত ছড়ায় মগজখেকো অ্যামিবা।

নিগ্লেরিয়া ফ্লোরেরির বৈশিষ্ট্য হল, এই এককোষী প্রাণী নাক বা মুখ দিয়ে ঢুকে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। তার পর নিশানা করে স্নায়ুকোষকে। সেখানে কোষ বিভাজন ঘটিয়ে সংখ্যায় বেড়ে স্নায়ুর দফারফা করে দেয়। সংক্রামক রোগ বিষয় চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেছেন, “অ্যামিবা এক বার নাক দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্কে বাসা বাঁধলে সেখানে সিস্ট তৈরি করে ফেলে। এর সংক্রমণে নিগ্লেরিয়াসিস বা প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস (পিএএম) রোগ হয়। মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে তখন রোগীকে বাঁচানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। দ্রুত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ না দিলে মস্তিষ্কের কোষ ছিঁড়েখুঁড়ে দিতে পারে অ্যামিবা।”

অ্যামিবা।

অ্যামিবা। ছবি সূত্র: ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মাইক্রোবায়োলজি।

গঙ্গায় বিপদ কতটা?

অ্যামিবার বাস বদ্ধ জলে। যে জলে স্রোত আছে, সেখানে এদের দেখা কম মেলে বলেই জানিয়েছেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর কথায়, “গঙ্গায় অ্যামিবা নেই, এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। তবে সাধারণত দীর্ঘ দিন পরিষ্কার না হওয়া বদ্ধ জল বা সুইমিং পুল, হ্রদের জলেই বেশি পাওয়া যায় এদের। কেরলে যে ধরনের অ্যামিবার সংক্রমণ ঘটেছে, তা এখানে এখনও হয়নি। প্রজাতি আলাদা। এখানে যে ধরনের অ্যামিবার সংক্রমণ ঘটেছে, তার প্রজাতি অ্যাকান্থামিবা। দ্রুত চিকিৎসা করলে রোগ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।” তবে জলে কি একেবারেই ভয় নেই? তা নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ, তর্পণে যান ক্ষতি নেই। শুধু মাথা ডুবিয়ে স্নানটুকু করবেন না। খেয়াল রাখবেন, কোনও ভাবেই জল যেন নাক-মুখ দিয়ে না ঢোকে। তবে কেরলের মতো এখানেও যে অ্যামিবা সংক্রমণ ঘটবে, সে আশঙ্কা নেই। কাজেই অযথা ভয় পেয়ে লাভ নেই।

অ্যামিবার সংক্রমণে যে রোগ হয়, তা অনেকটা ব্যাক্টেরিয়াল মেনিনজাইটিসের মতো। অর্থাৎ, স্নায়ুতন্ত্রই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অ্যামিবা ঢুকলে সকলের যে একই রকম রোগ হবে বা সকলের ক্ষেত্রেই তা প্রাণঘাতী হবে, এমন বলা যায় না। তবে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম, তাঁদের সাবধানে থাকতে হবে। চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের পরামর্শ, এই সময়টাতে পুকুর, নদী বা সুইমিং পুলে স্নান করার সময়ে সতর্ক থাকুন। যদিও গঙ্গায় বা এখানের কোনও নদীতে অ্যামিবা আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি এখনও, তবুও সাবধানে থাকাই ভাল। সম্পূর্ণ অবগাহন করে স্নান না-ই বা করলেন, শুধু রীতিটুকু পালন করাই ভাল। জলে মাথা না ডোবালেও অনেকে হাতে করে জল তুলে চোখে-মুখে দেন বা মাথায় ছিটিয়ে দেন। তেমন না করাই শ্রেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের সাবধান হতে হবে। সেই সঙ্গে পুকুর বা নদীর জল পান না করাও উচিত।

Advertisement
আরও পড়ুন