কাফ মাস্লকে কেন শরীরের ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দুই পায়ের পেশি মজবুত করার জন্য কাফ মাস্লের প্রতি বিশেষ যত্নবান অনেকেই। কিন্তু হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পায়ের পিছনের এই পেশির গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। কাফ মাস্লের ব্যায়াম করার লক্ষ্য কেবল পা সুগঠিত করা নয়। অনেকেই জানেন না, কাফ মাস্লকে ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়। কাফ মাস্লের সঙ্গে হার্টের এই সম্পর্ক কী ভাবে তৈরি হল? কেন পায়ের পেশির এই নামকরণ? কেউ কেউ বলেন, কাফ মাস্লের যত্ন নিলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমতে পারে। সেই দাবিই বা কতখানি সত্য?
হৃদ্রোগ চিকিৎসক আফতাব খান আনন্দবাজার ডট কমকে জানালেন, কাফ মাস্লকে সত্যিই শরীরের ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়। তবে হার্টের রোগের সঙ্গে সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই পায়ের এই পেশির। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আপনি যখন হাঁটছেন বা দৌড়চ্ছেন, পায়ের কাফ মাস্লের সঙ্কোচন-প্রসারণ হতে থাকে। সেই সময়ে পায়ের ধমনীগুলিরও সঙ্কোচন-প্রসারণ ঘটছে। সেগুলি রক্তকে আবার হার্টের দিকে পাঠাচ্ছে। ফলে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু পায়ের পেশি রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, যে ভাবে হার্টও রক্ত পাম্প করে, তাই কখনও কখনও কাফ মাস্লকে ‘সেকেন্ড হার্ট’ বা ‘দ্বিতীয় হৃৎপিণ্ড’ বলা হয়ে থাকে।’’
তবে হার্টের রোগের সঙ্গে পায়ের পেশির সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি চিকিৎসকের। তাঁর মতে, পায়ের পেশি মজবুত, শক্তিশালী হলেই যে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমবে, সেই ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। কিন্তু এ কথা ঠিক যে, পায়ের পেশি মজবুত মানে, সেই ব্যক্তি শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকেন। এর অর্থই হল, তাঁর ডায়াবিটিস, স্থূলত্ব, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো রোগের সম্ভাবনা কমা। তাই ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে, কাফ মাস্লের যত্ন নিলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকতে পারে।
কাফ মাস্ল শক্তিশালী করার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম কী কী?
কাফ মাস্লের ব্যায়াম করলে পায়ের নীচের দু’টি পেশি গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস এবং সোলিয়াস মজবুত হয়। এই পেশিগুলিই পাম্পের মতো কাজ করে। মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে রক্তকে হার্টে পাঠায়। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এখানে কাফ মাস্লের তিনটি ব্যায়ামের কথা উল্লেখ করা হল—
১. দাঁড়িয়ে কাফ উত্তোলন: সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, কাঁধের সমান দূরত্বে রাখতে হবে পা দু’টি। ধীরে ধীরে আঙুলগুলির ভর দিয়ে উঠতে হবে। গোড়ালিগুলিকে যথাসম্ভব টানটান করে উপরে তুলতে হবে। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে আবার পায়ের পাতা মাটিতে নামিয়ে দিতে হবে।
ছবি: সংগৃহীত।
২. বসে কাফ উত্তোলন: দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করতে হলে এই ব্যায়ামটি অভ্যাস করা যেতে পারে। এমন একটি চেয়ারে বসতে হবে, যাতে পা দু’টি পুরোপুরি মেঝে ছুঁয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে যে ভাবে পা তুলতে হয়, এখানেও সে ভাবেই পা দু’টি তুলতে হবে, আবার নামাতে হবে।
ছবি: সংগৃহীত।
৩. হাঁটা বা জগিং: সহজ এবং কার্যকরী ব্যায়াম। ৩০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা বা জগিং করলে পায়ের পেশির নমনীয়তা বাড়বে, শক্তিবৃদ্ধি হবে।
ছবি: সংগৃহীত।