Brain Fog

দুপুর হলেই ঘুম ঘুম ভাব, ঘিরে ধরে ক্লান্তি, কেন হয় এমন? আলস্য বা একঘেয়েমি নয়, আসল কারণ কী?

দুপুর হলেই যে এত ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব আসে, এর কারণ যে কেবলই আলস্য ভাব বা কাজে একঘেয়েমি, তা কিন্তু নয়। তা হলে আসল কারণ কী?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:০১
New MIT research reveals why you feel foggy and distracted all the time

আলসেমি বা একঘেয়েমি নয়, দুপুরে ঘুম পাওয়ার আসল কারণ জানালেন গবেষকেরা। ফাইল চিত্র।

বেলা গড়িয়ে ঘড়ির কাঁটা ১২টা পেরোলেই ঘুম ঘুম ভাবটা আসতে থাকে। আর একটু বেলা হলেই ক্লান্তি যেন ঘিরে ধরে। মনে হয়, দু’চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। একটু গড়িয়ে নিলেই যেন ভাল হয়। দুপুরের খাওয়া যদি একটু ভারী হয়, তা হলে তো কথাই নেই। চোখ খুলে রাখাই দায়। দুপুর হলেই যে এত ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব আসে, এর কারণ যে কেবলই আলস্য ভাব বা কাজে একঘেয়েমি, তা কিন্তু নয়। তা হলে আসল কারণ কী?

Advertisement

'ভাতঘুম' কথাটার সঙ্গে বাঙালিরা বেশ পরিচিত। খাওয়ার পর দেহে ইনসুলিনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার ফলে ঘুমের সহায়ক বেশ কিছু হরমোন নির্গত হয়। এই হরমোনগুলি মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনে পরিণত হয়, যা আলস্য আরও বাড়িয়ে দেয়, এমনই ধারণা ছিল এত দিন। এই ধারণা যে একেবারে ভুল, তা নয়। তবে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকেরা অন্য রকম তথ্যও দিয়েছেন। তাঁদের মতে, দুপুরের দিকে অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাবের কারণ মস্তিষ্কের ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’ (সিএসএফ)। মুখ্য গবেষক লরা লুইস জানিয়েছেন, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে এই তরল সুরক্ষা দেয় ও পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে এটির ক্ষরণ যদি অনিয়মিত হয়ে যায়, তখনই স্নায়বিক দুর্বলতা বাড়ে। ফলে ক্লান্তি ভাব বাড়ে।

‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’-এর ক্ষরণ কেন অনিয়মিত হয়, তার কিছু কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ হল, ঘুমের ঘাটতি বা অনিদ্রা। বেশি রাত অবধি জাগলে বা রাতে কম ঘুম হলে এই তরলের ক্ষরণ অনিয়মিত হয়ে যায়। শরীরের ঘড়ি অনুযায়ী রাতে টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমই জরুরি। এই সময়ে মস্তিষ্কের ‘ডিটক্স’ প্রক্রিয়া চলে। ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’ মস্তিষ্কে জমে থাকা যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে। যত ক্ষণ ঘুম হয়, তত ক্ষণই এই সাফাইয়ের কাজ চলে। ফলে গভীর ঘুম হলে সকালে উঠে অনেক বেশি ঝরঝরে লাগে। কাজেও উৎসাহ আসে। কিন্তু যাঁরা রাতে কম ঘুমোন, রাত জেগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁদের মস্তিষ্কের ওই সাফাইয়ের কাজটা ঠিকমতো হয় না। মস্তিষ্ক এতটাই সজাগ থাকে যে, ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’ রাতে ওই বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজটা ঠিকমতো করতে পারে না। ফলে বর্জ্য জমতে থাকে। সেই কাজটাই শুরু হয় দুপুরের দিকে। ওই সময়ে ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’ নিষ্কাশিত হয় এবং মস্তিষ্কের টক্সিন দূরীকরণের কাজ শুরু হয়। তাই ওই সময়টাতে স্নায়ু শিথিল হয়, মনোযোগ কমে, ক্লান্তি বাড়ে। খালি মনে হয়, ঘুম পাচ্ছে।

এমআইটির গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রাতে কম ঘুম হওয়া বা রাজ জাগার অভ্যাসই যত নষ্টের গোড়া। এর কারণেই স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা গিয়েছে, যাঁরা বেশি রাত জাগেন, তাঁদেরই পরবর্তী সময়ে গিয়ে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ, ব্রেন ফগ, হার্টের রোগ এবং মুড ডিজ়অর্ডারের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঘুমের চক্র স্বাভাবিক ও নিয়মমাফিক রাখাই জরুরি। রোজ রাতে একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া ও সকালে একই সময়ে ওঠার অভ্যাস করলে, যে কোনও জটিল অসুখবিসুখ থেকে দূরে থাকা যাবে।

Advertisement
আরও পড়ুন