Oral Health and Stroke

দাঁতের মর্ম না বুঝলেই বিপদ, দন্তক্ষয়, মাড়ির রোগও হতে পারে ব্রেন স্ট্রোকের কারণ!

গবেষকেরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, কোনও দিনও হার্টের সমস্যা হয়নি, স্ট্রোকের ঝুঁকিও নেই, রক্তে কোলেস্টেরলও স্বাভাবিক, এমন ব্যক্তির যদি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল না থাকে, তা হলে তাঁরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে যখন তখন। সেটা কী ভাবে?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৫৬
New research reveals that poor oral hygiene and gum disease may dramatically raise the risk of Brain stroke

দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে, কী ভাবে? ফাইল চিত্র।

প্রবাদ আছে, দাঁত থাকতে তার মর্ম বোঝা যায় না। সত্যিই তাই। শরীরে রোগ থাকুক বা না থাকুক, কমবেশি সকলেই নানা নিয়ম মেনে চলেন। চিকিৎসকের পরামর্শও মেনে চলেন। একমাত্র দাঁতে ব্যথা বা কোনও সমস্যা না হলে বেশির ভাগ মানুষই চিকিৎসকের কাছে যান না। দাঁত ভাল আছে, এটা ভেবে নিশ্চিন্তে খেয়ে যান চকোলেট, মিষ্টি থেকে আইসক্রিম। আর গোলমালটা বাধে সেখানেই। দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য বিগড়ে গেলে তা থেকে মুখের সংক্রমণ ঘটতে পারে, এই ধারণাই আছে। কিন্তু দাঁত খারাপ হলে তার থেকে যে ব্রেন স্ট্রোকও হতে পারে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই বেশির ভাগেরই। অনেকেই ভাববেন, দাঁতের সঙ্গে আবার স্ট্রোকের সম্পর্ক জুড়ল কবে থেকে! গবেষকেরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, কোনও দিনও হার্টের সমস্যা হয়নি, স্ট্রোকের ঝুঁকিও নেই, রক্তে কোলেস্টেরলও স্বাভাবিক, এমন ব্যক্তির যদি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল না থাকে, তা হলে তাঁরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে যখন তখন। সেটা কী ভাবে?

Advertisement

'নিউরোলজি' জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা, ক্যাভিটি, মাড়িতে তীব্র প্রদাহ হতে থাকলে এবং তার সঠিক চিকিৎসা না হলে, পরবর্তী সময়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। সাউথ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা প্রায় হাজার ছয়েক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণাটি চালিয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, যাঁদের দাঁত ভাল, তাঁদের শরীরে অসুখবিসুখ হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে যাঁদের দাঁত ও মাড়িতে দীর্ঘকালীন সমস্যা রয়েছে, তাঁদের নানা জটিল অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাড়িতে সংক্রমণ ঘটেছে, এমন ৭ শতাংশ ও দাঁতে ক্যাভিটি রয়েছে এমন ১০ শতাংশই রয়েছেন ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে।

দাঁতের সঙ্গে স্ট্রোকের কী সম্পর্ক?

প্রধানত দাঁতের দুই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। দাঁতের ক্ষয়জনিত রোগ এবং মাড়ির সমস্যা। দাঁতের ক্ষয় মূলত মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি সময় দাঁতে জমে থাকার ফলে হয়। দাঁতে খাবার জমে থাকলে সেখানে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে, ফলে অ্যাসিড তৈরি হয় এবং দাঁতের উপরের এনামেল অংশ ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। পরে সেটি ক্যাভিটি বা গর্তে পরিণত হয়। সেটা দাঁতের গোড়া পর্যন্ত চলে গেলে সমস্যা হয়। সেই ছিদ্রের মধ্যে খাবারের কুচি ঢুকে যায়। সেই কুচি পচে গিয়ে সেখানে আরও বেশি জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে রক্তে, ফলে শরীরে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ জমতে থাকে, যা থেকে প্রদাহও বাড়ে। এই টক্সিনের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দেয়, যা স্ট্রোকের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তাই সময় থাকতেই দাঁতের যত্ন নেওয়া জরুরি। প্রত্যেকের উচিত ছ’মাসে এক বার অন্তত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দাঁতের সমস্যা রয়েছে কি না তা জানা। বছরে এক বার স্কেলিং বা দাঁত পরিষ্কার করানো যেতে পারে। এখন মেশিনের সাহায্যেই তা হয়। দাঁতের মধ্যে ছোট ছিদ্র হলে সেখানে খাবার ঢুকতে শুরু করে। সেই জায়গায় ক্যাভিটিকে আর বাড়তে না দিয়ে জায়গাটিকে ভরাট করে দেওয়া হয়। একে 'ফিলিং' করা বলে। তা করলেও সমস্যার সমাধান হয় অনেকটাই। দাঁত ভাল রাখতে দিনে দু’বার অন্তত ব্রাশ করা জরুরি। মুখের ভিতরের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও গার্গল করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফলের রস বা ঠান্ডা নরম পানীয় খাওয়ার পর মুখের লালার পিএইচ-এর ভারসাম্য নষ্ট হয়। গার্গল করলে যা আবার আগের পর্যায়ে ফিরে আসে।

Advertisement
আরও পড়ুন