Skin Disease reveals Mental Health

গভীর অবসাদ, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তার প্রতিফলন হয় আগেই, মস্তিষ্কের রোগের সঙ্কেত দেয় ত্বক!

জটিল মানসিক রোগ মনের গভীরে চেপে বসার আগে ধরা দেয় ত্বকে। রোগ জটিল স্তরে পৌঁছোনোর আগে তার সঙ্কেত পৌঁছে যায় ত্বকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ত্বকের সেই সব রোগ থেকে রোগীর মানসিক স্থিতি নাকি আঁচ করা সম্ভব!

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৭
New research reveals that skin problems signal of deep depression and psychosis

মানসিক রোগ প্রতিরোধ করার উপায় হতে পারে ত্বক? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ছোট শব্দ ‘সাইকো’। অনেকেই হয়তো মজার ছলে কাউকে বলে দেন, ‘ও তো সাইকো’... কিন্তু শব্দের উৎস যেখানে, সেই জায়গাটা অন্ধকারে ঢাকা। সাইকো কথাটা এসেছে সাইকোসিস থেকে। মানসিক রোগের একটি অবস্থাকে বলে সাইকোসিস। এই রোগ যাঁদের হয়, তাঁদের কেউ হয়তো গভীর অবসাদে চলে যান, আবার কারও মনে উঁকি দেয় নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা। সাইকোসিস কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা সচরাচর ধরা পড়ে না। কিন্তু নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, জটিল মানসিক রোগ মনের গভীরে চেপে বসার আগে ধরা দেয় ত্বকে। রোগ জটিল স্তরে পৌঁছোনোর আগে তার সঙ্কেত পৌঁছে যায় ত্বকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ত্বকের সেই সব রোগ থেকে রোগীর মানসিক স্থিতি নাকি আঁচ করা সম্ভব! এমনটাই দাবি করা হয়েছে ইউরোপিয়ান কলেজ অফ নিউরোসাইকোফার্মাকোলজি-র গবেষণায়।

Advertisement

গবেষকেরা ৪৮১ জন মানসিক রোগীর উপরে পরীক্ষা করে দেখেছেন, যাঁরা বাইপোলার ডিজ়অর্ডার, গভীর অবসাদ বা স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় ভুগছেন, তাঁদের ত্বকের সমস্যাও রয়েছে। যে রোগীদের নিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়, তাঁদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মহিলা ও ৯.৮ শতাংশ পুরুষ চর্মরোগেরও শিকার। কারও ত্বকে র‌্যাশ, চুলকানির সমস্যা রয়েছে, কেউ ভুগছেন সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগে, আবার কারও ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগ হয় ঘন ঘন।

মানসিক রোগকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। নিউরোসিস ও সাইকোসিস। নিউরোসিস সাধারণ কিছু অসুখ যেমন অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার, অবসাদ ইত্যাদি। আর সাইকোসিস হল অনেক জটিল ও গুরুতর মানসিক রোগ। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অবসেসিভ কমপালসিভ নিউরোসিসও বলা হয়। যেমন স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজ়অর্ডার, বিভিন্ন কারণে সাইকোসিস হতে পারে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, সাইকোসিস হানা দেওয়ার আগে তার কিছু উপসর্গ ধরা পড়ে চেহারায়। এমনকি যাঁর মনে আত্মহননের চিন্তা আসছে, তাঁরও ত্বকের কিছু অস্বাভাবিক বদল দেখা দেয় আগে থেকেই। এই বিষয়টি এত দিন আড়ালেই ছিল, গবেষণায় তা ধরা পড়েছে।

মস্তিষ্কের রোগের সঙ্গে ত্বকের কী সম্পর্ক, সে নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, মস্তিষ্ক ও ত্বক দুইই তৈরি হয়েছে এক্টোডার্ম স্তর দিয়ে। তাই স্নায়বিক যোগসূত্র রয়েছে। আবার এ-ও মনে করা হচ্ছে, মনের চাপ বাড়লে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে প্রদাহ বাড়ে, ফলে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন ও কোষের পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়। তখন ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং গভীর অবসাদ ত্বকের প্রদাহ বহু গুণে বাড়িয়ে তোলে। এর থেকে এগ্জ়িমা, সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আত্মহত্যার চিন্তা যাঁদের বেশি হয়, তাঁদের ত্বকে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন, লিপিড ও জৈব-রাসায়নিকের আধিক্য দেখা দেয়। সেই উপাদানগুলিকে যদি চিহ্নিত করা যায়, তা হলে আগে থেকে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে সেই প্রক্রিয়া জটিল। আপাতত এ নিয়ে গবেষণা চলছে। মানসিক রোগের সঙ্গে ত্বকের বদলের সম্পর্ক ও তা সঠিক সময়ে শনাক্তকরণের উপায় আয়ত্ত হলে অনেক জটিল মানসিক ব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলেই আশা রাখছেন গবেষকেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন