Goa Nightclub Fire

‘পালাইনি, ৫০০০ কোটি লুটও করিনি’! দাবি লুথরা ভাইদের, তাঁদের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর হল না দিল্লির আদালতে

গত শনিবার নৈশক্লাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। তাঁদের মধ্যে ২০ জন ক্লাবের কর্মী এবং পাঁচ জন পর্যটক। এই ঘটনায় ক্লাবের পাঁচ ম্যানেজার এবং কয়েক জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৩
Delhi Court denies bail of Luthra brothers on Goa night club fire

তাইল্যান্ডে বৃহস্পতিবার (বাঁ দিকে) গৌরব এবং সৌরভ লুথরাকে (ডান দিকে) আটক করে সে দেশের পুলিশ। ছবি: পিটিআই।

তাঁরা পলাতক নন। সেই সব ব্যক্তির তালিকাতেও তাঁরা নেই, যাঁরা ৫০০০ কোটি টাকা লুট করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আদালতে এমনই জানালেন গোয়ার নৈশক্লাবের প্রধান মালিক সৌরভ এবং গৌরব লুথরা। দুই ভাই এখন তাইল্যান্ডের ফুকেতে। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার যখন প্রস্তুতি তুঙ্গে, সেই সময় দিল্লির আদালতে আইনজীবী মারফত আগাম জামিনের আবেদন করেন লুথরা ভাইয়েরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুই ভাইয়ের জামিন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

Advertisement

লুথরাদের আইনজীবী তনভীর আহমেদ মীর তাঁর মক্কেলদের আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। একইসঙ্গে আদালতে তিনি দাবি করেন, লুথরা ভাইয়েরা ব্যবসায়ী। তাঁদের সেই তালিকায় ফেলা উচিত হবে না যাঁরা ৫০০০ কোটি টাকা লুট করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু লুথরা ভাইয়েরা পালাননি। লুথরা ভাইদের জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী। আদালতের কাছে তিনি কয়েকটি ছবি পেশ করে দাবি করেন, এই ছবিই প্রমাণ করছে যে, লুথরা ভাইয়েরা তাইল্যান্ডে ব্যবসা খুলে বসার পরিকল্পনা করেছিলেন। ছবিতে তাঁদের হাসিমুখের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন সরকারি আইনজীবী।

আদালতে লুথরা ভাইদের আইনজীবী মীর দাবি করেন, অগ্নিকাণ্ডে যে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, এটি খুনের কোনও ঘটনা নয়। গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা এবং ‘ইচ্ছাকৃত’ ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মীর আরও দাবি করেন, লুথরা ভাইয়েরাও মানুষ। সমাজমাধ্যমে ক্রমাগত তাঁদের খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। লুথরা ভাইদের পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আদালতে মীর আরও জানান, কোনও রকম নোটিস ছাড়াই গোয়ায় লুথরাদের সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ঘটনার রাতে দেশ ছাড়ার বিষয়টি এত বড় অপরাধ হয়ে গেল? এমন ভাবে ঘটনাটিকে উপস্থাপিত করা হচ্ছে যেন, ওই রাতে লুথরা ভাইয়েরা নৈশক্লাবে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে এসেছেন। যখন ঘটনাটি ঘটে ওঁরা তখন ঘটনাস্থল থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে।’’ আইনজীবী মীর আরও জানিয়েছেন, লুথরা ভাইয়েরা রীতিমতো আয়কর দেন। তাঁরা আইন মেনে চলেন। তাঁদের ব্যবসার কারণে ১৫০০ পরিবারের রুটি-রুজির সংস্থান হয়। তাঁর কথায়, ‘‘লুথরা ভাইয়েরা ব্যবসায়ী। তাঁরা সেই তালিকায় পড়েন না যাঁরা দেশ থেকে ৫০০০ কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়ে গিয়েছেন।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, লুথরাদের ব্যবসার খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন তাঁদের ৪২টি সংস্থা চলছে। আর সবক’টির ঠিকানা দিল্লির একটি জায়গার নামেই নথিভুক্ত। আর এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই লুথরাদের ব্যবসা নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তর-পশ্চিম দিল্লির হাডসন লাইনের ঠিকানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে ওই ৪২টি সংস্থা। আর এখান থেকেই লুথরা ভাইদের আর্থিক তছরুপের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

গত শনিবার নৈশক্লাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। তাঁদের মধ্যে ২০ জন ক্লাবের কর্মী এবং পাঁচ জন পর্যটক। এই ঘটনায় ক্লাবের পাঁচ ম্যানেজার এবং কয়েক জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের দিন দিল্লিতেই ছিলেন ক্লাবের প্রধান দুই মালিক সৌরভ এবং গৌরব লুথরা। রবিবার ভোর ৫টায় ইন্ডিগোর বিমান ধরে তাইল্যান্ডের ফুকেতে পালিয়ে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে গোয়া পুলিশ লুকআউট সার্কুলার জারি করে। যখন জানতে পারা যায়, লুথরা ভাইয়েরা ফুকেতে রয়েছেন, তখন গোয়া পুলিশ সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়। সিবিআই তখন ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ করা হয় লুথরা ভাইদের বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিস জারি করতে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিস জারি করে ইন্টারপোল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পাঁচ দিন পর ফুকেত থেকে বৃহস্পতিবার লুথরা ভাইদের আটক করে সে দেশের পুলিশ। গোয়া পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যেই তাইল্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছে। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত, পলাতক লুথরা ভাইদের পাসপোর্ট বাতিল করতে চেয়ে বুধবার কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছিল গোয়া সরকার। এ বিষয়ে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই মতো বুধবার রাতেই সৌরভ ও গৌরবের পাসপোর্ট সাসপেন্ড বা সাময়িক ভাবে অবৈধ করে দেওয়া হয়। ফলে তাইল্যান্ড ছেড়ে অন্যত্র পালানোর কোনও উপায় ছিল না লুথরা ভাইদের।

Advertisement
আরও পড়ুন