গৌতম আদানির সংস্থায় বিনিয়োগ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এলআইসি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আদানি গোষ্ঠীকে আর্থিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা সংস্থা এলআইসি-র টাকা ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। দাবি, রীতিমতো পরিকল্পনা করে সরকার টাকা ঢেলেছিল আদানি গোষ্ঠীতে। এই বিতর্কে অবশেষে মুখ খুলল এলআইসি। শনিবার তারা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের দাবি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন। তারা স্বাধীন ভাবেই আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কোনও ভূমিকা নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এলআইসি যে সমস্ত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, তা বোর্ড অনুমোদিত নীতি মেনে স্বাধীন ভাবে নেওয়া হয়। অর্থ দফতর বা অন্য কোনও সংগঠনের এতে কোনও ভূমিকা নেই। আইন অনুযায়ী, সমস্ত নির্দেশিকা মেনে এবং সর্বোপরি আমাদের অংশীদারদের (স্টেক হোল্ডার) স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।’’ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের উদ্দেশ্য এলআইসি-র ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং সংস্থার ক্ষতি করা, দাবি কর্তৃপক্ষের।
চলতি বছরের শুরুতে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে ছিল আদানি গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে বিরোধীরা। অভিযোগ উঠেছিল, আদানিদের বাঁচাতে এলআইসি-তে বিনিয়োগ করা সাধারণ মানুষের টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই টাকাতেই আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছেন গৌতম। গত মে মাসে আদানি গোষ্ঠীতে মোট ৫৭ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছিল এলআইসি।
আদানিদের স্টকের চার শতাংশের (৬০ হাজার কোটি টাকা) মালিক এলআইসি। এ ছাড়া, রিলায়্যান্সের ৬.৯৪ শতাংশ (১.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা), আইটিসি লিমিটেডের ১৫.৮৬ শতাংশ (৮২.৮ হাজার কোটি টাকা), এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ৪.৮৯ শতাংশ (৬৪৭২৫ কোটি টাকা) এবং এসবিআই-এর ৯.৫৯ শতাংশে (৭৯৩৬১ কোটি টাকা) এলআইসি-র মালিকানা রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রকের অধীনে থাকা আর্থিক পরিষেবা দফতরের শীর্ষ কর্তারা এলআইসি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলিকে দেওয়ার সুপারিশ করে একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছিলেন। সরকারের পরামর্শদাতা নীতি আয়োগের সঙ্গেও তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। পরে সেই প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রক সায় দেয়। এর পরপরই আদানি পোর্টস ৫০০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ে। ঋণের টাকার তোলার সেই বন্ডে লগ্নি করেছিল একটিই সংস্থা— এলআইসি। বিরোধীরা দীর্ঘ দিন ধরেই এলআইসি-র অর্থ আদানিদের দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল। মোদী সরকারকে একাধিক বার আক্রমণ করেছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। সরকার সে সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল। বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টকেও ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দিল এলআইসি।