Jammu and Kashmir Police Station Explosion

‘বাবা, যেও না’! কাতর আর্জি ছিল কন্যার, শ্রীনগরের থানায় বাজেয়াপ্ত বিস্ফোরকের ব্যাগ সেলাই করতে গিয়ে মৃত্যু দর্জির

৫৭ বছরের মহম্মদ শফি নওগামের পরিচিত দর্জি। অভিযোগ, হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ নওগামে নিয়ে আসার পরেই থানায় তাঁর ডাক পড়েছিল। বলা হয়েছিল, বিস্ফোরক ভরার জন্য ছোট ছোট ব্যাগ সেলাই করে দিতে হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০৫
জম্মু ও কাশ্মীরের নওগাম থানায় বিস্ফোরণের মুহূর্ত।

জম্মু ও কাশ্মীরের নওগাম থানায় বিস্ফোরণের মুহূর্ত। ছবি: পিটিআই।

বাজেয়াপ্ত বিস্ফোরক ছোট ছোট ব্যাগে ভরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম থানার পুলিশকর্মীরা। সেই ব্যাগ সেলাই করার জন্য নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে ডেকে এনেছিলেন প্রৌঢ় দর্জিকে। শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের সময় তিনিও থানায় ছিলেন। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে দর্জির দেহ।

Advertisement

৫৭ বছরের মহম্মদ শফি নওগামের পরিচিত দর্জি। অভিযোগ, হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ নওগামে নিয়ে আসার পরেই থানায় তাঁর ডাক পড়েছিল। বলা হয়েছিল, বিস্ফোরক ভরার জন্য ছোট ছোট ব্যাগ সেলাই করে দিতে হবে। সেই থেকে দিনরাত এক করে শফি থানায় পড়েছিলেন, জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। অভিযোগ, রাতে খাওয়ার জন্য শুধু তাঁকে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়েছিল। এক বার এসেই আবার থানায় চলে গিয়েছিলেন। কেউ ভাবতেও পারেননি, আর তিনি বাড়ি ফিরবেন না।

পরিবার সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার পর শফি যখন ফের থানায় যাওয়ার তোড়জোড় করছেন, তাঁর কন্যা তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন। বাইরে ঠান্ডা। কাতর ভাবে বলেছিলেন, ‘‘বাবা, আজ আর যেও না।’’ কিন্তু কন্যার অনুরোধ রাখতে পারেননি প্রৌঢ়। জানিয়েছিলেন, তাঁকে থানায় ফিরতেই হবে। কাজ শেষ না হলে তাঁর ছুটি নেই। সেই ছিল তাঁর শেষ কথা।

শফির এক আত্মীয় বলেছেন, ‘‘আমরা রাতে যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম, থানায় ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুরো থানাটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল দেহাংশ।’’ প্রৌঢ় দর্জির দেহ সেই ধ্বংসস্তূপের এক কোণ থেকে খুঁজে বার করতে কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল পরিবারের।

শফির তিন সন্তান। তিনিই ছিলেন সংসারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা নওগামের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন বটে। কিন্তু সংসার কী ভাবে চলবে, চিন্তায় দর্জির পরিবার। এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘উনি তো পুলিশের কাজ করতে, পুলিশকে সাহায্য করতেই গিয়েছিলেন। তা হলে সরকার আমাদের সাহায্য করবে না কেন? যদি উনি পুলিশকর্মী হতেন, ওঁর পরিবারকে সংসার চালানোর জন্য চিন্তা করতে হত না।’’ বসতি এলাকায় থানা এবং এই ধরনের বিপজ্জনক পদার্থ মজুত রাখা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছে শফির পরিবার।

Advertisement
আরও পড়ুন