ত্বকের কোন কোন থেরাপি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াবে? ছবি: ফ্রিপিক।
বয়স বাড়লে ত্বক কুঁচকে যাওয়া, বলিরেখা পড়ার সমস্যা স্বাভাবিক। কিন্তু এখনকার সময়ে বয়সের সেটুকু ছাপ রাখতেও অনেকে রাজি নন। ত্বক হবে যৌবনের মতোই ঝকঝকে ও টানটান। তারকাদের দেখাদেখি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে চেষ্টার অন্ত নেই। কেউ করাচ্ছেন বোটক্স, কেউ লেজ়ার দিয়ে বলিরেখার চিহ্ন মিটিয়ে দিচ্ছেন আবার কেউ নানা রকম রেডিয়েশন থেরাপির দিকে ঝুঁকছেন। ত্বকের থেরাপি করিয়ে বয়সের ছাপ ধুয়েমুছে ফেলার চেষ্টা চলছে অবিরত। এই সব থেরাপি আদৌ ভাল কি না, তার থেকে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না, তা ভাবছেন ক’জনে? ফলে ত্বকের নানাবিধ সমস্যা বেড়ে চলেছে। ত্বকে শ্বেতি হওয়া থেকে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ছে দিন দিন। চিকিৎসকেরা তাই সাবধান করে বলছেন, ত্বকের থেরাপি বুঝেশুনে করানোই ভাল। কোন কোন থেরাপি বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
বোটক্স ও ফিলার কি নিরাপদ?
বোটক্স হল ডিপথেরিয়া গ্রুপের ব্যাক্টেরিয়া বটুলিয়াম টক্সিন। ডিপথেরিয়া রোগের ক্ষেত্রে স্নায়ুর সমস্যা হওয়ার কথা শোনা যায়। আসলে ওই গ্রুপের ব্যারক্টেরিয়ার ‘নিউরোটক্সিসিটি’ আছে, এরা স্নায়ুর কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ত্বকে বোটক্স ইঞ্জেকশন দিলে ওই অংশের পেশির সঙ্কোচন বা প্রসারণ ঘটে না। ফলে পেশি টানটান থাকে। সাধারণত পেশির সঙ্কোচন ও প্রসারণের জন্যই কপালে, গালে, চোখের কোণে বলিরেখা পড়ে। বোটক্স ইঞ্জেকশন দিয়ে সেই সব অংশের পেশিকে ‘পঙ্গু’ করে দেওয়া হয়, ফলে ত্বক টানটান দেখতে লাগে। আর ফিলারের ক্ষেত্রে এক ধরনের জেল ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন প্রোটিন তৈরি হয়, তাতে ত্বক টানটান হয় ও বলিরেখা পড়ে না। এই দুই ক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার তেমন আশঙ্কার কথা শোনা না গেলেও, সাবধান থাকতেই বলা হয়। বোটক্স বা ফিলার করানোর পরে যদি সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির সংস্পর্শে বেশি আসেন অথবা খুব বেশি রাসায়নিক দেওয়া প্রসাধনী ব্যবহার করেন, তা হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
কোন কোন থেরাপি বিপদ বাড়াতে পারে?
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, বোটক্সের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক ত্বকের কিছু রেডিয়েশন থেরাপি। যেমন— ‘আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেরাপি’, যা ‘ইউভিএ’ ও ‘ইউভিবি’ রশ্মি প্রয়োগ করে করা হয়। এই ধরনের থেরাপিকে বলা হয় ‘ট্যানিং বেড থেরাপি', যা ত্বকের কোষের ডিএনএ-র ক্ষতি করে। ডিএনএ-তে রাসায়নিক বদল আসে ও কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়। এই থেরাপি থেকে সোরিয়াসিস, বেসাল সেল কার্সিনোমা, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমার মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লেজ়ার থেরাপি এমনিতে নিরাপদ। তবে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কারও কাছে করানোই ভাল। লেজ়ার থেরাপিতে ত্বকের দাগছোপ, অবাঞ্ছিত রোমের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় ঠিকই, তবে ভুল ব্যবহারে ত্বকে মেলানিন রঞ্জকের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, অতিরিক্ত প্রদাহ শুরু হতে পারে, যা থেকে চর্মরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
‘কেমিক্যাল পিল’ থেরাপি কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এমন কিছু রাসায়নিক আছে, যা ত্বকে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন প্রোবায়োম পিল থেরাপি। প্রোবায়োম পিল বিভিন্ন অ্যাসিডের সমাহার। সেখানে ত্বকের প্রকৃতি ও তার সমস্যার ধরন অনুযায়ী থেরাপি করা হয়। ত্বকের বলিরেখা, ব্রণর সমস্যা, পোড়া দাগ, নিষ্প্রাণ বা ঝুলে পড়া ত্বক টানটান করতে এই ধরনের রাসায়নিক পিলের প্রয়োগ করা হয়, যা ত্বকে যৌবনের মতো দীপ্তি এনে দিতে পারে ও ত্বককে ‘এক্সফোলিয়েট’ করে। তবে এই সব পিলের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হলে ও দিনের পর দিন ব্যবহার করতে থাকলে, তা থেকে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়বে।