বাড়িতে কী ভাবে মাইক্রোগ্রিন ফলাবেন? ছবি: সংগৃহীত।
ভেজানো ছোলা-মুগের চেয়েও অঙ্কুরিত ছোলা-মুগের পুষ্টিগুণ বেশি। তাই স্বাস্থ্য সচেতনেরা এত দিন তা-ই খেয়ে এসেছেন। তবে স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি নিয়ে যতই চর্চা হয়েছে, ততই খাদ্য-উপকরণ এবং খাওয়ার ধরনেও বদল এসেছে অনিবার্য ভাবে। চর্চা শুরু হয়েছে মাইক্রোগ্রিন নিয়ে।
যেমন ভিজোনো চিয়াবীজ উপকারী। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, চিয়াবীজ অঙ্কুরিত হয়ে ডালপালা মেললে, সেই ছোট্ট চিয়াগাছের পুষ্টিগুণ আরও বেশি। পুষ্টিবিদদের মতে, অঙ্কুরোদ্গমের ফলে চিয়া মাইক্রোগ্রিনে ভিটামিন সি-এর মাত্রা ১৭ গুণ বেড়ে যায়। তা ছাড়া, আয়রন, জ়িঙ্ক, ক্যালশিয়াম শোষণেও তা বেশি সহায়ক হয়।
ঠিক সেই কারণেই স্যালাড থেকে স্যুপে নানা রকম মাইক্রোগ্রিন খাওয়ার চল বেড়েছে। মুগ, সর্ষে, চিয়া, মেথি— বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর ছোট্ট যে চারা বার হয়, সেই কচি চারাই এখন ডায়েটে জুড়ছেন অনেকে। এ সব বাইরে থেকে কেনার বদলে, বাড়িতেই বানানো যায়, তা-ও আবার মাটি, টবের ঝক্কি ছাড়াই।
চিয়া, মেথি, পালং, শর্ষে, সবুজ মুগ, ছোলা— অনেক কিছুরই মাইক্রোগ্রিন বা অপরিণত চারা খাওয়া হয়।মাটি ছাড়া জল দিয়ে তা কী ভাবে তৈরি করবেন?
ধাপ ১: প্রথমে পছন্দের বীজ জলে ৫-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম দ্রুত হয়।
ধাপ ২: একটি ছিদ্রযুক্ত ট্রে বা ছাঁকনি নিন। যদি ছিদ্রগুলো খুব বড় হয়, তবে তার ওপর একটি পাতলা সুতির কাপড় বা টিস্যু পেপার বিছিয়ে দিতে পারেন। এবার ভেজানো বীজগুলো সমান ভাবে ছড়িয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন, যেন একটির উপর আরেকটি বীজ না রয়ে যায় বা খুব ঘেঁষাঘেষি করে না ছড়ানো হয়।
ধাপ ৩: ছিদ্রযুক্ত ট্রের নীচে অন্য একটি নিরেট পাত্র রাখুন। সেই পাত্রে এমন ভাবে জল দিন, যাতে উপরের ট্রের তলায় সামান্য জল থাকে। বীজ যেন জলে ডুবে না যায়, শুধু আর্দ্র থাকে।
ধাপ ৪: প্রথম ২-৩ দিন ট্রেটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে না। দিনে দু’বার স্প্রে বোতল দিয়ে উপর থেকে সামান্য জল ছিটিয়ে দিন।
ধাপ ৫: ছোট ছোট চারা গজিয়ে ১-২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে পাতা গজালে ঢাকনা সরিয়ে দিন। এবার পাত্রটি জানালার পাশে বা যেখানে সূর্যের আলো প্রত্যক্ষ ভাবে পড়ে না, সেখানে রাখুন। এর ফলে চারাগুলি সবুজ ও সতেজ হবে।
ধাপ ৬: নীচের পাত্রের জল প্রতি দিন বা এক দিন অন্তর পরিবর্তন করুন। পচা গন্ধ হলে বা জল ঘোলা হলে দ্রুত বদলে ফেলুন, না হলে শিকড়ে পচন ধরতে পারে।
ধাপ ৭: ৫- ৭ দিনের মধ্যে মাইক্রোগ্রিন খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যায়। যখন চারাগুলি ২-৩ ইঞ্চি লম্বা হবে এবং দু’টি সুন্দর পাতা গজাবে, তখন কাঁচি দিয়ে শেকড়ের ঠিক উপর থেকে কেটে নিন।
কিছু জরুরি বিষয়
বাতাস চলাচল: চারাগুলিতে যাতে পর্যাপ্ত বাতাস লাগে, সে দিকে খেয়াল রাখুন, না হলে ছত্রাক জন্মাতে পারে।
সরাসরি রোদ: কড়া রোদে রাখলে চারাগুলি শুকিয়ে যেতে পারে।
ব্যবহার: এই মাইক্রোগ্রিন স্যালাডে, স্যান্ডউইচে বা স্যুপের উপরে ছড়িয়ে খাওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ মেলে। অনেক সময় অঙ্কুরিত বীজের চেয়েও বেশি পুষ্টি মেলে এতে।