বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলে কী খাবে শিশু, রইল টিপ্স। ছবি: ফ্রিপিক।
জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস পেরিয়ে গেলে বেশির ভাগ শিশু শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য কমবেশি প্রস্তুত হয়ে যায়। দাঁত বেরোনোর সময় এগিয়ে আসে। এই সময়ে থেকে ধীরে ধীরে তাকে শক্ত খাবার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। একসঙ্গে অনেক ধরনের খাবার দিয়ে শুরু করা চলবে না। এক-একটি খাবার বেশ কয়েক দিন খাইয়ে অভ্যস্ত করার পরেই পরেরটি দিতে হবে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলে আলাদা খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। বাড়ির রান্নার সঙ্গেই একটু একটু করে পরিচয় করাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর খাবারে খুব বেশি তেল, মশলা, নুন বা চিনি দেওয়া যাবে না।
কেমন খাবার খাবে শিশু?
শিশুর বৃদ্ধি এই সময়ে দ্রুত হয়। এই সময়টিকে বলা হয় ‘উইনিং পিরিয়ড’। তাই এমন খাবার দিতে হবে যাতে শিশুর পুষ্টি ও বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয়। মস্তিষ্কের বিকাশও ঘটে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন।
দোকান থেকে কেনা ‘বেবি ফুড’ একেবারেই দেবেন না। বরং বাড়িতে চাল-ডাল-আলু দিয়ে হালকা করে তৈরি খিচুড়ি সামান্য ঘি বা মাখন দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে শুরুতে। বেশি শক্ত খাবার শুরুতেই দেওয়া যাবে না। ভাত চটকে সব্জি সেদ্ধ দিয়ে খাওয়াতে পারেন। পাতলা করে রান্না ডালিয়াও ভাল খাবে শিশু। শুরুতে অল্প করে নুন দিয়ে রান্না করতে হবে। চিনির ব্যবহার না করাই ভাল।
প্রোটিনের জন্য শিশুকে ডাল খাওয়াতে হবে। তবে শুরুতেই অড়হর, ছোলা, মটর ওদের পক্ষে হজম করা কঠিন হবে। তাই মুগ বা মুসুর ডালই দিন।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে খাওয়াতে পারেন ভাত, সব্জি, ডাল। দুপুর ১টার পর কলা, আম চটকে বা সিদ্ধ আপেল চটকে খাওয়াতে পারেন। কলার স্বাদ পছন্দ করে শিশুরা। বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে ডালিয়ার খিচুড়ি, ছানা, ছাতু বা সুজির পায়েস যে কোনও কিছুই খাওয়াতে পারেন। ধীরে ধীরে সব ধরনের মরসুমি ফল ও সব্জির সঙ্গেই পরিচয় করাতে হবে।
রোজকার খাবারে প্রোটিনও রাখতে হবে। শিশুকে ছোট মাছ বা জিওল মাছ খাওয়ালে খুব ভাল। শিঙি, মাগুরের মতো জিওল মাছ খাওয়াতে পারেন শিশুকে। মাছ থেকে ভরপুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাবে শিশু। তবে একদিনে মাছ, মাংস, ডিম না দেওয়াই ভাল। ভাগে-ভাগে শুরু করা উচিত। তা হলে বোঝা যাবে, শিশুর কোনও খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না। মাংস দিলে প্রথমে সিদ্ধ চিকেন দিয়ে শুরু করুন। চিকেন স্ট্যু-ই শুরুতে খাবে শিশু। একবারে দুই থেকে তিন পিসের বেশি মাংস দেবেন না।
শিশুর হাড়ের গঠন মজবুত করতে ক্যালসিয়াম খাওয়াতে হবে। দুধ, দই, ছানা, পনির থেকে ক্যালসিয়াম পাবে শিশু। তবে যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে তা হলে দই ও বাটারমিল্ক দিতে পারেন। শিশুকে একসঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে।
শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে গেলে মাকে ধৈর্য রাখতেই হবে। শিশু বসতে শিখলে বাড়ির সকলের সঙ্গে বসে খাওয়ানোর অভ্যাস করা ভাল। মোবাইল দেখিয়ে বা টিভি চালিয়ে খাওয়াবেন না। এতে শিশু দীর্ঘ ক্ষণ খাবার নিয়ে বসে থাকবে। খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হবে। খাওয়া শেষ হওয়ার অন্তত মিনিট পনেরো পরে জল খাওয়াবেন।