প্রতারণা সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে খবরের শিরোনামে ছত্তীসগঢ়ের ডিএসপি কল্পনা বর্মা। রায়পুরের ব্যবসায়ী দীপক টন্ডনের দাবি, কল্পনার সঙ্গে প্রেম করতেন তিনি। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে দু’কোটি টাকা নগদ-সহ একাধিক মূল্যবান উপহার নিয়েছেন কল্পনা। পরে সেই পুলিশ-প্রেমিকাই তাঁকে ব্ল্যাকমেল করেছেন!
ছত্তীসগঢ়ের ডেপুটি পুলিশ সুপারের (ডিএসপি) বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর ব্যবসায়ী প্রেমিক। ডিএসপি-র বিরুদ্ধে তোলাবাজি, ব্ল্যাকমেল এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
দীপকের অভিযোগ, ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে’ কল্পনা প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে। একটি গাড়ি, হিরের আংটি এবং লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না নিয়েছেন কল্পনা।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কল্পনা। পুরো বিষয়টিকে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করেছেন ডিএসপি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে।
এই আবহে চর্চায় আরও এক মহিলা পুলিশকর্তা। না, কোনও কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায়নি তাঁর। তিনি সমাদৃত হচ্ছেন তাঁর নির্ভীক আচরণের জন্য, রাজনৈতিক নেতাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার জন্য। এমনকি, ইতিমধ্যে ‘লেডি সিঙ্ঘম’ তকমাও পেয়েছেন।
কথা হচ্ছে আইপিএস ইশা সিংহের। মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর পুদুচেরিতে প্রথম জনসভা করেন ‘তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম (টিভিকে)’-এর প্রতিষ্ঠাতা নেতা তথা অভিনেতা ‘থলপতি’ বিজয়। উপ্পালাম পোর্ট গ্রাউন্ডে আয়োজিত সেই জনসভায় প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ সুপার ইশা।
জনসভার আগে টিভিকে নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ইশা। তামিলনাড়ুর করুরে বিজয়ের জনসভা চলাকালীন পদপিষ্টের ঘটনার উল্লেখ করে দলের নেতাদের ধমক দিতে দেখা যায় তাঁকে।
জানা গিয়েছে, পুদুচেরিতে জনসভার সঙ্গে রোড শোয়ের অনুমতি চেয়েছিল বিজয়ের দল। রোড শোয়ের অনুমতি দেওয়ার আগে ইশা তাঁর ঊর্ধ্বতনদের সতর্ক করেছিলেন। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন করুরকাণ্ডের কথা। এর পর ইশাকেই সমাবেশ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই বিজয়ের দলের নেতাদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন ইশা।
সেই ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। ভাইরাল হয়েছে ভিডিয়োটি। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। ভাইরাল সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, টিভিকে নেতাদের ধমক দিচ্ছেন ইশা।
ইশাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তোমাদের শরীরে এত মানুষের রক্ত লেগে আছে। তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করছ আমি কী করছি! তোমরা কী করছ? এর আগে ৪০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন তোমাদের জনসভায়। তোমরা কী করছ?’’
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিভিকে-র সাধারণ সম্পাদক বাসি আনন্দের হাত থেকে মাইক্রোফোনও কেড়ে নিতে দেখা গিয়েছিল ইশাকে। সেই ভিডিয়োই প্রকাশ্যে এসেছে।
ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে মহিলা পুলিশকর্তাকে নিয়ে। নেটমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন ইশা।
নেতাদের চোখে চোখ রেগে কথা বলার জন্য তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে নেটপাড়া। তিনি কে এবং কী ভাবে তাঁর উত্থান, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে নেটাগরিকদের মধ্যে।
কে এই ইশা? ১৯৯৮ সালে মুম্বইয়ে ইশার জন্ম। ইশার বাবা যোগেশ প্রতাপ সিংহ ১৯৮৫ ব্যাচের আইপিএস অফিসার ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে বার বার শাস্তিমূলক পোস্টিং পাওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন বলে শোনা যায়।
ইশার মা আভা সিংহ ভারতীয় ডাক পরিষেবায় কাজ করতেন। কিন্তু পরে আইনজীবী হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। বলিউড অভিনেতা সলমন খানের ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলা-সহ একাধিক জনস্বার্থ মামলায় যুক্ত ছিলেন তিনি।
ইশা নিজেও বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল স্কুল থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০২১ সালে মুম্বইয়ের একটি হাউসিং সোসাইটিতে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার সময় মৃত্যু হওয়া তিন সাফাইকর্মীর পরিবারের জন্য আদালতে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।
কোভিড অতিমারির আবহে লকডাউনের সময় ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন ইশা। প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেও, দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ১৩৩ র্যাঙ্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে আইপিএস হিসাবে কাজে যোগ দেন। বর্তমানে পুদুচেরির পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত ইশা।