ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় মহারণ। ফের এক বার উপমহাদেশে বসছে পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর। অন্যতম ফেভারিট দল হিসাবে সেখানে অংশ নেবে টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপ শেষ হলেই শুরু হবে কুড়ি-বিশের মেগা লিগ আইপিএল। পর পর দু’টি বড় টুর্নামেন্ট থাকায় এখন থেকেই ক্রিকেটজ্বরে কাঁপছে গোটা দেশ। এই আবহে গত ২০ ডিসেম্বর বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে ভারতীয় বোর্ড।
এ দেশের সিনিয়র দলে বা আইপিএলে অনূর্ধ্ব ১৮ বা ১৯ খেলে আসা ক্রিকেটারদের আলাদা কদর রয়েছে। জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁদের অনেককেই নিয়মিত খেলতে দেখা যায়। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে পুরুষদের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। আট বছর পর তাঁদের ক’জনকে ২০২৬ সালের আইপিএল খেলতে দেখবেন ক্রিকেট ভক্তেরা?
’১৮-র অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন পৃথ্বী শ। ২০২৬ সালের আইপিএলে কোনও মতে দল পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এই কুড়ি-বিশের লিগের মিনি নিলামের একেবারে শেষের দিকে ন্যূনতম মূল্য ৭৫ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনে নেয় দিল্লি ক্যাপিটালস। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, বিকল্প ওপেনার হিসাবে দলে জায়গা পাবেন পৃথ্বী। সে ক্ষেত্রে গোটা মরসুম বসে থাকতেও হতে পারে তাঁকে।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় দলে জায়গা পেয়েছিলেন পৃথ্বী। যদিও জাতীয় দলের জার্সিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। অসংযমী জীবনযাপনের জেরে ক্রমশ ফর্ম খারাপ হতে থাকে তাঁর। তার উপর ব্যক্তিগত সমস্যাতেও জড়িয়ে পড়েন পৃথ্বী। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন অভিনেত্রী স্বপ্না গিল। সেই মামলায় মুম্বইয়ের একটি আদালতে জবাবদিহি করতে হয়েছে তাঁকে।
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার বছরেই আইপিএলে অবির্ভাব ঘটে ডানহাতি ব্যাটার পৃথ্বীর। কুড়ি-বিশের এই লিগে এখনও পর্যন্ত ৭৯টি ম্যাচে ১,৮৯২ রান করেছেন তিনি। আইপিএলে মোট ১৪টি অর্ধশতরান রয়েছে পৃথ্বীর, সর্বোচ্চ স্কোর ৯৯। তাঁর গড় ২৩.৯৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১৪৭.৪৭। এখনও পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে ২৩৮টি চার এবং ৬১টি ছক্কা মেরেছেন তিনি।
পৃথ্বীর মতো অবশ্য পরিণতি হয়নি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার শুভমন গিলের। ওই টুর্নামেন্টে সাফল্যের পর খুব দ্রুতই জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেলেন তিনি। বর্তমানে টেস্ট এবং এক দিনের আন্তর্জাতিকে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তবে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি তাঁর। ফলে আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশি করে মন দিচ্ছেন তিনি।
২০২৬ সালের আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের জার্সিতে দেখা যাবে শুভমনকে। ১৬.৫ কোটি টাকায় ভারত অধিনায়ককে কিনেছে তারা। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১১৮টা ম্যাচ খেলেছেন তিনি। শুভমনের ব্যাট থেকে এসেছে ৩,৮৬৬ রান। কুড়ি-বিশের এই মেগা লিগে চারটে শতরান এবং ২৬টি অর্ধশতরান রয়েছে এই ডানহাতি ব্যাটারের। সর্বোচ্চ স্কোর ১২৯।
আগামী বছরের আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মাঠে নামবেন রিয়ান পরাগ। নিলামে তার দাম ওঠে ১৪ কোটি। ২০১৯ সালে কুড়ি-বিশের এই লিগে অভিষেক হয় তাঁর। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত মোট ৮৪টি ম্যাচ খেলেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এই টুর্নামেন্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ৯৫। সাতটা অর্ধশতরান করেছেন তিনি। টি-২০ লিগে রিয়ান মোট রান করেছেন ১,৫৬৬। এতে মোট ১১১টা চার এবং ৮৭টা ছক্কা মেরেছেন তিনি।
২০১৮ সালেই আইপিএলে অভিষেক হয় অভিষেক শর্মার। আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে রয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। আগামী বছর সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলতে দেখা যাবে তাঁকে। নিলামে তাঁর দাম ওঠে ১৪ কোটি টাকা। কুড়ি-বিশের লিগে ৭৭টি ম্যাচে এখনও পর্যন্ত ১,৮১৬ রান করেছেন তিনি। অভিষেকের ঝুলিতে আছে একটা শতরান এবং ন’টা অর্ধশতরান। তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ১৪১। এ ছাড়াও ১১টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
টি-২০ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া বাঁহাতি পেসার অর্শদীপ সিংহ ২০২৬ সালের আইপিএলে খেলবেন পঞ্জাব কিংসের জার্সিতে। তাঁকে ১৮ কোটি টাকায় কিনেছে অভিনেত্রী প্রীতি জ়িন্টার দল। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ৮২ ম্যাচে ৯৭টি উইকেট পেয়েছেন তিনি। ৩২ রানে পাঁচ উইকেট তাঁর সেরা বোলিং। কুড়ি-বিশের এই লিগে অর্শদীপের ইকোনমিক রেট ৯ এবং গড় ২৬.৪৯।
’১৮-র অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ডানহাতি অলরাউন্ডার অনুকূল রায়কে আগামী বছরের আইপিএলে দেখা যাবে কলকাতা নাইট রাইডার্সে। ২০১৯ সালে কুড়ি-বিশের লিগে অভিষেক হয় অনুকূলের। যদিও সেখানে তাঁর পারফরম্যান্স খুব একটা নজরকাড়া ছিল না। ১২ ম্যাচে মাত্র ২৬ রান করেছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন ছয় উইকেট। তাঁর বোলিং ইকোনমি রেট ৮.১৮।
ডানহাতি অলরাউন্ডার শিভম মাভিকে কিনেছে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে আসার বছরেই (পড়ুন ২০১৮) আইপিএলে অভিষেক হয় তাঁর। তবে কুড়ি-বিশের এই লিগে এখনও পর্যন্ত নজরকাড়া পারফরম্যান্স করতে পারেননি তিনি। এখনও পর্যন্ত ৩২টি ম্যাচে ৩০টি উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি পেসার। ২১ রানে চার উইকেট শিভমের সেরা বোলিং।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড় মনজোৎ কালরা ক্রিকেট থেকে একরকম বিদায় নিয়েছেন। ২০২০ সালে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় বোর্ড। পরে দিল্লির হয়ে কিছু ঘরোয়া টুর্নামেন্টে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে কোনও দিন আইপিএল খেলেননি তিনি। বিদেশভ্রমণের বিভিন্ন ছবি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রায়ই পোস্ট করেন মনজোৎ। সর্বশেষ ছবিতে তাইল্যান্ডের একটি পর্যটনকেন্দ্রে তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
এ বারের আইপিএলে কোনও দল পাননি ’১৮ সালের অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপজয়ী উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হার্ভিক দেশাই। সৌরাষ্ট্রের এই ক্রিকেটারকে একসময়ে দলে নিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সেখানেও প্রথম একাদশে নিয়মিত ছিলেন না তিনি। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪২টি কুড়ি-বিশের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তাতে মোট ১,১১৩ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে সৌরাষ্ট্রের খেলোয়াড়টির সর্বোচ্চ স্কোর ১০৪।
টি-২০ কেরিয়ারে হার্ভিকের একটি শতরান এবং সাতটা অর্ধশতরান রয়েছে। তাঁর ব্যাটিং গড় ২৯ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৯। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে মোট ৩০টা ক্যাচ ধরেছেন তিনি। এ ছাড়া স্টাম্পিং করে বিপক্ষ ব্যাটারকে সাজঘরের রাস্তা দেখিয়েছেন ছ’বার। তার পরেও দল না পাওয়ায় আগামী বছরের টুর্নামেন্টে কোনও দলের জার্সিতেই মাঠে দেখা যাবে না তাঁকে।
২০২০ সালে আইপিএল অভিষেক হয় কমলেশ নাগরকোটির। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে মাত্র ১২টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০২২ সালের পর কুড়ি-বিশের এই লিগে আর কখনওই প্রথম একাদশে জায়গা পাননি কমলেশ। এই টুর্নামেন্টে তাঁর সেরা পারফরম্যান্স ১৩ রানে দুই উইকেট। এ বারের নিলামে কোনও দল কেনেনি তাঁকে।
গিলদের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার শিবা সিংহ। ফাইনালে দু’উইকেট নেন তিনি। তবে এর পর আর তাঁকে সে ভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেখা যায়নি। উত্তরপ্রদেশের এই ক্রিকেটার কোনও দিন আইপিএল খেলেননি।
২০২৬ সালের আইপিএলে দেখা যাবে না পশ্চিমবাংলার ক্রিকেটার ঈশান পোড়েলকেও। কারণ নিলামে অবিক্রিত ক্রিকেটারদের তালিকায় তাঁরও নাম রয়েছে। ২০২১ সালে ২১ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনেছিল পঞ্জাব কিংস। শিভমের মতোই প্রীতি জ়িন্টার দলের হয়ে মাত্র এক দিন মাঠে নামার সুযোগ পান ঈশান। ওই দিন একটা উইকেটও নেন তিনি।
সব ছবি: সংগৃহীত।