Trump tariff on IT sector

শুল্ক-খাঁড়ার কোপে তছনছ হবে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সাম্রাজ্য? দিল্লিকে ‘ভাতে মেরে’ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান ট্রাম্প?

আমেরিকার ক্রমাগত ‘ভারত-বিরোধী’ অবস্থানের কারণে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড়সড় সুনামি আসতে চলেছে। শিল্প মহলের আশঙ্কা, পণ্যের মতো পরিষেবায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হলে আমেরিকার বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ভারতে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৪
০১ ২০
Trump tariff on IT sector

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর সাম্প্রতিক একটি টুইট ঘিরে শঙ্কার কালো মেঘ ঘনাচ্ছে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। ভারতের জন্য বিপদের বার্তাবহনকারী সেই পোস্টে তাঁর দাবি, আমেরিকার উচিত সমস্ত আউটসোর্সিংয়ের উপর শুল্ক আরোপ করা।

০২ ২০
Trump tariff on IT sector

পোস্টে ‘বিদেশি’ উল্লেখ করলেও মূলত ভারতকে খোঁচা দিতেই এই পোস্টটি শেয়ার করেছেন পিটার, তা বলাই বাহুল্য। পিটার হলেন ট্রাম্পের প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠবৃত্তে বিচরণ করতে দেখা যায় তাঁকে। সাম্প্রতিক শুল্কযুদ্ধে পিটার ভারতকে ‘শুল্কের মহারাজা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

০৩ ২০
Trump tariff on IT sector

ট্রাম্পের নিন্দকদের দাবি, ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর নীতি এই পিটারেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। আমেরিকার সর্বময়কর্তার বাণিজ্য উপদেষ্টা সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ নীতির স্বপক্ষে একাধিক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন ‘‘ভারত হল শুল্কের মহারাজা। তারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শুল্ক নেয়। তারা আমাদের প্রচুর জিনিসপত্র রফতানি করে। তা হলে, কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? হচ্ছেন আমেরিকার শ্রমিক, করদাতারা। মোদী এক জন মহান নেতা। আমি বুঝতে পারছি না কেন তিনি পুতিন এবং শি জিনপিঙের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন।’’ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং বন্ধ করার কথা বিবেচনা করছে। এমনটাই দাবি করেছেন ট্রাম্পের সহযোগী এবং অতি-ডানপন্থী কর্মী লরা লুমার। তিনি এক ধাপ সুর চড়িয়ে তাঁর পোস্টে দাবি করেছেন, বিদেশে কাজ না দিয়ে কলসেন্টারগুলি আবার আমেরিকায় ফিরুক।

Advertisement
০৪ ২০
Trump tariff on IT sector

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং বন্ধ করার কথা বিবেচনা করছে। এমনটাই দাবি করেছেন ট্রাম্পের সহযোগী এবং অতি-ডানপন্থী কর্মী লরা লুমার। তিনি এক ধাপ সুর চড়িয়ে তাঁর পোস্টে দাবি করেছেন, বিদেশে কাজ না দিয়ে কলসেন্টারগুলি আবার আমেরিকায় ফিরুক।

০৫ ২০
Trump tariff on IT sector

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন ট্রাম্প জমানায় আমেরিকার ক্রমাগত ‘ভারত-বিরোধী’ অবস্থানের কারণে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড়সড় সুনামি আসতে চলেছে। রাশিয়ার থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের উপর খাপ্পা মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রয়োজনে আরও দু’দফায় নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ না করলে আরও বড় বিপদে পড়বে ভারত, নয়াদিল্লিকে এমন হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

Advertisement
০৬ ২০
Trump tariff on IT sector

এই হুঁশিয়ারির পরই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপরে আর কী কী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তা নিয়ে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা। এ বছরের ২৭ অগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ দেশ থেকে রফতানি হওয়া সমস্ত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ওই পরিমাণ কর ধার্য করেছে, এমনটা নয়। মূলত, নয়াদিল্লির বস্ত্র, চর্ম ও কারু শিল্পজাত পণ্য, অলঙ্কার এবং রাসায়নিকের ক্ষেত্রে উচ্চ হারে শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

০৭ ২০
Trump tariff on IT sector

এ ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার উপর কোনও শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা করেনি ট্রাম্প সরকার। ভারতের নাম না করে সমাজমাধ্যমে ট্রাম্পের পারিষদবর্গের একের পর এক বিষোদ্গার দেখে অনুমান করা অসম্ভব নয় যে অদূর ভবিষ্যতে সেই শুল্ক চাপতেও পারে।

Advertisement
০৮ ২০
Trump tariff on IT sector

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির বাণিজ্যের ৬০ শতাংশই মার্কিন সংস্থার উপর নির্ভর করে। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, ইনফোসিস, এইচসিএলটেক এবং উইপ্রোর মতো সংস্থাগুলি মার্কিন গ্রাহকদের উপরেই ভিত্তি করে ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি সাম্রাজ্যের ভিত গড়ে তুলেছে। প্রায় ২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের ব্যবসা চলে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এ দেশের।

০৯ ২০
Trump tariff on IT sector

আশঙ্কা, পণ্যের উপর শুল্কের মতো এই ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হলে আমেরিকার বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ভারতে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সিলিকন ভ্যালির তাবড় টেক জায়ান্টরা ভারতের মতো দেশে কাজ দেয় একটাই কারণে, ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য। আমেরিকার তুলনায় ভারতে শ্রম বহু অংশে সস্তা।

১০ ২০
Trump tariff on IT sector

খরচ বাঁচাতে, মার্কিন সংস্থাগুলি ভারত থেকে গ্রাহক সহায়তা আউটসোর্স করে থাকে। সেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীরা আমেরিকান গ্রাহকদের সহায়তা করে। মার্কিন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ মসৃণ করার জন্য আউটসোর্স করা কর্মীদের আমেরিকান উচ্চারণ করার প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে কিছু সংস্থা।

১১ ২০
Trump tariff on IT sector

শুল্ক চাপলে আউটসোর্স করা মার্কিন সংস্থাগুলির পরিষেবার খরচ বেড়ে যাবে। এর ফলে সংস্থাগুলি চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। উচ্চ শুল্কহার যোগ হলে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে নতুন চুক্তি নাও করতে পারে মার্কিন সংস্থাগুলি। এমনকি চুক্তি বাতিল করার পথেও হাঁটতে পারে তারা।

১২ ২০
Trump tariff on IT sector

শুল্ক আরোপ হলে সেই আঁচ গিয়ে পড়বে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের উপরেও। সিলিকন ভ্যালিতে প্রবেশের জন্য বেগ পেতে হতে পারে ভারতীয়দের। প্রতিভাবান ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের চড়া মূল্য দিয়ে আর ‘পুষতে’ রাজি না-ও হতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার।

১৩ ২০
Trump tariff on IT sector

প্রবাসী ভারতীয় কর্মীদের থেকে ভারত প্রচুর পরিমাণে ডলার রোজগার করে। অনাবাসী ভারতীয়দের স্বদেশে পাঠানো অর্থের উপরে (রেমিট্যান্স) এক শতাংশ কর আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভবিষ্যতে সেই করের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রবাসী ভারতীয়দের। তার সঙ্গে জারি হতে পারে ভিসার কড়াকড়িও। ফলে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকায় চাকরি করে ডলার রোজগার করার ক্ষেত্রে চাপ আসতে পারে ভারতীয়দের।

১৪ ২০
Trump tariff on IT sector

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, ভারতে রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বড় উৎস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ সালে দেশে আসা রেমিট্যান্সের ২৭.৭% এসেছে আমেরিকা থেকে। রেমিট্যান্সের উপর ১ শতাংশ করের বোঝা চাপানোর ফলে ভারতের জন্য তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু আমেরিকার আইনসভায় নাগরিক বাদে অন্যান্যদের বিদেশে পাঠানো রোজগারের (রেমিট্যান্স) উপরে ৫% কর চাপানোর প্রস্তাবে কাঁটা হয়ে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয়েরা।

১৫ ২০
Trump tariff on IT sector

সেই বিল আইনের আকারে কার্যকর হলে আমেরিকায় কর্মরত পেশাদারদের ভারতে অর্থ পাঠানো কমতে পারে। বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ কমায় সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির উপর ধাক্কা লাগাও অসম্ভব নয়। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বা জিটিআরআইয়ের মতে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠের এই প্রস্তাবে ভারতে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে বিপুল বিদেশি মুদ্রা হারাতে হতে পারে এ দেশকে।

১৬ ২০
Trump tariff on IT sector

গোদের উপর বিষফোড়ার মতো সমস্যা বাড়িয়েছে আমেরিকার এইচ ওয়ান বি ভিসা। ভিসার দীর্ঘসূত্রিতা, গ্রিন কার্ডের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষার মতো সমস্যা ভারতীয়দের জন্য আমেরিকায় চাকরির বাজারে টিকে থাকা দুষ্কর করে তুলছে। শুল্কনীতির প্রভাব পড়বে ভারতের কর্মী নিয়োগেও। ভারত থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা নেওয়া ব্যয়বহুল হলে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেবে। ছাঁটাই হতে পারেন কর্মীরা। পরোক্ষে প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও।

১৭ ২০
Trump tariff on IT sector

আমেরিকায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পক্ষেত্রে দেশিদের আরও বেশি চাকরি দেওয়ার লক্ষ্যে এইচ-ওয়ান-বি ভিসা আইনে আরও কড়াকড়ি আনতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই এটি একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুল্ক হুঁশিয়ারির পাশাপাশি ভিসায় রাশ টানতে উদ্যোগী ট্রাম্প সরকার। সেই কঠোর নিয়ম বাস্তবায়িত হলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকার হয়ে যাবে। মার্কিন মুলুকে এইচ-ওয়ান-বি ভিসা নিয়ে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পসংস্থাগুলিতে কাজ করছেন হাজার হাজার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।

১৮ ২০
Trump tariff on IT sector

টিসিএস, উইপ্রো, ইনফোসিসের মতো যে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পসংস্থাগুলি রয়েছে, তারা এত দিন মূলত নির্ভর করত ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের ওপরেই। আর সেই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা মার্কিন মুলুকে কাজ করছেন এইচ-ওয়ান-বি ভিসা নিয়ে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় জমানায় এইচ১বি ভিসার প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরেই। ২০২০ সালে ট্রাম্পের আমলে এইচ-১বি ভিসা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

১৯ ২০
Trump tariff on IT sector

কর্মসূত্রে আমেরিকায় যেতে গেলে এইচ১বি ভিসার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমেরিকায় এই ভিসাধারীদের মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশ ভারতীয়। এইচ-১বি ভিসায় ছ’বছরের জন্য কেউ আমেরিকায় থাকতে পারেন। প্রথমে এটি তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়। পরে আরও তিন বছর ভিসার মেয়াদ বর্ধিত করা যায়।

২০ ২০
Trump tariff on IT sector

২০২৬ সালে আমেরিকায় মধ্যবর্তী নির্বাচন রয়েছে। বর্তমান সরকার ভারতকে ‘শিক্ষা দিয়ে’ নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। মার্কিন সংস্থাগুলি থেকে শুল্কের জুজু দেখিয়ে আউটসোর্স বন্ধ করে ভূমিপুত্রদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারলে নির্বাচনে ট্রাম্প ও তাঁর দলবল অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি