corn tariff

জিনের চরিত্র বদল করা ভুট্টা বেচতে মরিয়া আমেরিকা! ইউরোপের বাজার বলি দিয়ে ট্রাম্পের চাপে মাথা নোয়াবে দিল্লি?

আমেরিকা থেকে ভুট্টা কেনার পরিবর্তে মায়ানমার ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটায় ভারত। এর প্রধান কারণ হল আমেরিকায় উৎপন্ন হওয়া ভুট্টা ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ (জিএম)। আমেরিকার থেকে ভুট্টা কিনলে জিএম-মুক্ত কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারী হিসাবে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩১
০১ ১৮
corn tariff

ভারতকে আবারও চাপে ফেলতে উঠেপড়ে লাগলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধের লাগাতার হুঁশিয়ারির পর এ বার ভুট্টা কেনা নিয়ে চাপের কৌশল নিল ওয়াশিংটন। ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনার মাঝেই নতুন এক দাবি করে বসল ট্রাম্প প্রশাসন।

০২ ১৮
corn tariff

মার্কিন বিদেশসচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের হুঁশিয়ারি, ভারতকে বাধ্যতামূলক ভাবে আমেরিকার ভুট্টা কিনতে হবে। আমেরিকায় উৎপাদিত ভুট্টা কিনতে রাজি না হলে আমেরিকার বাজারে ব্যবসা করার সুযোগ না-ও দেওয়া হতে পারে বলে নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছেন লুটনিক। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ হারাতে পারে ভারতীয় পণ্য।

০৩ ১৮
corn tariff

সংবাদমাধ্যম ‘অ্যাক্সিওস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতকে শুল্ক-হুমকিও দিয়েছেন লুটনিক। তীণর দাবি, মার্কিন পণ্যে অনেক বেশি আমদানি শুল্ক নেয় ভারত। শুল্ক কমানো না হলে তা ভারতের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।

Advertisement
০৪ ১৮
corn tariff

ভারত শুল্ক না কমালে আমেরিকাও ভারতীয় পণ্যের উপর পারস্পরিক শুল্ক চাপাতে বাধ্য হবে। ট্রাম্পের কায়দায় হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন বিদেশসচিব জানান, নয়াদিল্লি যদি শুল্ক না-কমায়, আমেরিকা দীর্ঘ দিনের ভুল শুধরে নেওয়ার পদক্ষেপ করবে।

০৫ ১৮
corn tariff

) লুটনিকের অভিযোগ, ভারত ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ হলেও সামান্য পরিমাণ ভুট্টা আমেরিকার থেকে কিনতে রাজি নয়। অথচ ভারতীয় সমস্ত পণ্য আমেরিকায় বিক্রি হোক, এটা চায় নয়াদিল্লি। লুটনিক মনে করেন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক একতরফা। ভারত চায় সমস্ত পণ্য আমেরিকানরা কিনুক, কিন্তু ভারত সামান্য ভুট্টাও কিনতে নারাজ।

Advertisement
০৬ ১৮
corn tariff

ভারতের আমেরিকা থেকে ভুট্টা আমদানি না করার প্রধান কারণটি হল ভারত ভুট্টা চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশ ভারত। প্রতি বছর প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ টন ভুট্টা উৎপাদন করেন ভারতের চাষিরা। ২০৪৭ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক।

০৭ ১৮
corn tariff

ভারতের গড় ভুট্টার উৎপাদনশীলতা প্রতি হেক্টরে ৩.৭ টন। পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের মতো কিছু রাজ্য জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। বিহারের চাষিরাই ভুট্টা উৎপাদনে দেশের মধ্যে এগিয়ে। তাই সোজা কথায় বলতে গেলে ভারতের আমেরিকা থেকে ভুট্টা কেনার প্রয়োজনই নেই।

Advertisement
০৮ ১৮
corn tariff

জাতীয় সম্পদ ছেড়ে কেন হঠাৎ করে বিদেশ থেকে আমদানি করে খামোকা দেশীয় কৃষকদের চাপের মুখে ফেলতে যাবে সরকার, প্রশ্ন তুলছেন দেশের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞেরা। ভারতে ভুট্টার চাহিদা ৪ কোটি ২৭ লক্ষ টন। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১০ লক্ষ টন ভুট্টার চাহিদা থাকায় তা আমদানি করেছিল ভারত। সেই ভুট্টা পড়শি দেশ মায়ানমার ও ইউক্রেন থেকে কেনা হয়।

০৯ ১৮
corn tariff

ইথানলের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে হঠাৎ করে ভুট্টার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে। ফলে গত অর্থবর্ষে ভারতকে ভুট্টা আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে ভুট্টা রফতানি করে ৮১ কোটি ৬৩ লক্ষ ১০ হাজার ডলার বিদেশি মুদ্রা পকেটে ভরেছিল ভারত। ২০২২-২৩ সালে সেই পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার।

১০ ১৮
corn tariff

ভুট্টার ক্রমবর্ধমান চাহিদার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের ই-২০ বা ইথানল-ব্লেন্ডিং প্রকল্প। ২০২৫-’২৬ সালের মধ্যে পেট্রলের সঙ্গে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো সরকারের লক্ষ্য। ভুট্টা ইথানল উৎপাদনের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য। দূষণ ও তেলের আমদানি খরচ কমাতে আমেরিকা, ব্রাজ়িল-সহ বিভিন্ন দেশের মতো ভারতও পেট্রলে ইথানলের ভাগ বৃদ্ধির পথে হাঁটছে।

১১ ১৮
corn tariff

বর্তমানে পেট্রলের সঙ্গে ১০% ইথানল মেশানো তেল গাড়িতে ব্যবহার করা যায়। ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ই-২০ জ্বালানির জন্য উপযুক্ত যন্ত্রাংশের নতুন গাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে সব নতুন গাড়ির ইঞ্জিনই হবে ই-২০ ব্যবহারের যোগ্য। উল্লেখ্য, ২০%-৮৫% ইথানল মিশ্রিত জ্বালানিকে ‘ফ্লেক্স ফুয়েল’ বলে।

১২ ১৮
corn tariff

চাল ও ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য থেকে আরও বেশি পরিমাণে ইথানল তৈরিতে উৎসাহ দিতে ২০২০ সালে ৪,৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প চালু করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালে যে ১,৪০০ কোটি লিটার ইথানল প্রয়োজন হবে, তার মধ্যে ৭০০ কোটি লিটার আসবে আখের রস থেকে। বাকি ৭০০ কোটি লিটারের উৎস হবে চাল-গম-ভুট্টা-বার্লির মতো খাদ্যশস্য। তার জন্য দরকার হবে প্রায় ১৭৫ লক্ষ টন খাদ্যশস্য।

১৩ ১৮
corn tariff

সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ সালে, ভুট্টা থেকে মোট ইথানল উৎপাদনের পরিমাণ ৪২.৭৪ শতাংশ ছিল। সেই পরিমাণ আখ এবং চালকে ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইথানলের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে চলতি খরিফ মরসুমে ভারতে ভুট্টা চাষের জমি প্রায় ৯ লক্ষ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে খুব কম পরিমাণে ভুট্টা প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশে যাচ্ছে।

১৪ ১৮
corn tariff

আমেরিকা থেকে ভুট্টা কেনার পরিবর্তে মায়ানমার ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটায় ভারত। তার প্রধান কারণ হল আমেরিকায় উৎপন্ন হওয়া ভুট্টা ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ (জিএম)। কৃষিপণ্যের মূল চরিত্র পাল্টে যায় তার জিনগত বদলে (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড)। ফলন বা পুষ্টিবৃদ্ধি-সহ নানা কারণে তা করা হয়।

১৫ ১৮
corn tariff

আমেরিকা চায় ভারত এই ধরনের পণ্যের বাজার খুলে দিক। কিন্তু তাতে সায় দিতে নারাজ নয়াদিল্লি। আমেরিকা থেকে ‘জিএম’ কৃষিপণ্য আমদানির ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করেছে বাণিজ্য উপদেষ্টা জিটিআরআই। তাদের বক্তব্য, এতে রফতানি ধাক্কা খেতে পারে। বিশেষ করে সমস্যা হতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলিতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে।

১৬ ১৮
corn tariff

‘জিএম’ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ইইউ-এর দেশগুলিতে বিধিনিষেধ রয়েছে। তা পুরো নিষিদ্ধ না হলেও, সেখানকার মানুষ ‘জিএম’ পণ্য ব্যবহার করতে চান না। শস্যদানার মতো ‘জিএম’ পণ্য আমদানি করা হলে ইউরোপীয় অঞ্চলে ভারতীয় রফতানি বাধার মুখে পড়তে পারে। রফতানির ক্ষেত্রে ইইউ-এর বাজার ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এতে ‘জিএম-মুক্ত’ কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারী হিসাবে ভারতের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে।

১৭ ১৮
corn tariff

আমেরিকা থেকে ‘জিএম’ পণ্য ভারতের বাজারে ঢুকলে এ দেশের কৃষিসামগ্রীর রফতানি মার খাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে। কারণ, অনেক ইউরোপীয় ক্রেতা ‘জিএম-মুক্ত’ জোগানশৃঙ্খল চান। ধাক্কা খেতে পারে দেশের সামগ্রিক রফতানি শিল্প। এর ফলে বিপাকে পড়বেন দেশীয় উৎপাদকেরা।

১৮ ১৮
corn tariff

এ দেশে ইথানল তৈরিতে আমেরিকার ভুট্টা পাঠাতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। তারা চায় লাইসেন্সের নিয়ম সরল করুক নয়াদিল্লি, এ দেশে আমেরিকার সংস্থার রফতানি বাড়াতে কমানো হোক আমদানিতে কড়াকড়ি। সূত্রের খবর, ভারত কিছু শ্রেণির বাদাম, ব্লুবেরির মতো কৃষিপণ্যে আমেরিকাকে ছাড় দিতে পারে। তবে চাল, ডাল, দুগ্ধপণ্য এবং ‘জিএম’ পণ্যের ক্ষেত্রে অনমনীয় মনোভাব বজায় রাখতে চাইছে নয়াদিল্লি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি