Jupiter

বৃহস্পতি না-থাকলে পৃথিবীর জন্ম হত না! সূর্যেই ঝাঁপ দিত বসুন্ধরার আদিম অগ্নিপিণ্ড, বলছে নতুন গ্রহ-গবেষণা

সৃষ্টির আদিতে সৌরজগতের মধ্যে ছোটাছুটি করছিল গ্যাস এবং ধুলো, যা দিয়ে পরবর্তী কালে তৈরি হয় পৃথিবী, মঙ্গল-সহ বিভিন্ন গ্রহ। বৃহস্পতি না থাকলে এই গ্যাস এবং ধুলোই সূর্যের আকর্ষণে তার দিকে ধাবিত হত।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০২
বৃহস্পতির জন্যই আজ রয়েছে পৃথিবী, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

বৃহস্পতির জন্যই আজ রয়েছে পৃথিবী, বলছেন বিজ্ঞানীরা। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পৃথিবীর ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল বৃহস্পতি! বিজ্ঞানীদের একাংশ দাবি করছেন, তখনও আসলে পৃথিবীর জন্মই হয়নি। সে সময়ই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল বৃহস্পতি। নয়তো পৃথিবী ডুব দিত সূর্যে।

Advertisement

আমেরিকার হিউস্টনের রাইস বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা গিয়েছে, আগেভাগেই বেড়ে উঠেছিল বৃহস্পতি। সৃষ্টির আদিতে সৌরজগতের মধ্যে ছোটাছুটি করছিল গ্যাস এবং ধুলো, যা দিয়ে পরবর্তী কালে তৈরি হয় পৃথিবী, মঙ্গল-সহ বিভিন্ন গ্রহ। বৃহস্পতি না-থাকলে এই গ্যাস এবং ধুলোই সূর্যের আকর্ষণে তার দিকে ধাবিত হত। ফলে পৃথিবী আর গঠিত হতে পারত না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই বৃহস্পতির কারণেই গ্রহগুলি নিজের অক্ষে থিতু হতে পেরেছে। গ্যাস, ধুলো জমে জমে কঠিন শিলায় পরিণত হয়েছে। তার পরে ক্রমে জন্ম হয়েছে গ্রহের।

রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রে ইজ়িদোরো জানান, বৃহস্পতি শুধু বৃহত্তম গ্রহ নয়, সৌরজগতের ভিতরের স্থাপত্য গঠনের নেপথ্যে রয়েছে সে। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহস্পতি না-থাকলে পৃথিবীকে আজ এই রূপে পেতাম না।’’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জন্মের পরে প্রথম কয়েক লক্ষ বছর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল বৃহস্পতি। সে সময় নবগঠিত সূর্যের চারপাশে ঘুরছিল গ্যাস এবং ধুলো। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতির যে আকর্ষণ ছিল, তাতে সূর্যের চারপাশে বলয়ে তরঙ্গ তৈরি করেছিল। এর ফলে বেশি একটু ‘বিরক্তই’ হয়েছিল গ্যাস। তারা রিংয়ের মতো বস্তু তৈরি করেছিল। এই রিংগুলি ‘মহাজাগতিক ট্রাফিক যানজট’ তৈরি করেছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই রিংয়ের মধ্যেই আটকে পড়েছিল ধুলোর ক্ষুদ্র কণা। নয়তো সেগুলি সূর্যে গিয়ে ঝাঁপ দিত। এই ধুলোর কণা ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে থাকে। তার পরে জমাট বাঁধতে থাকে।

নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বৃহস্পতি যতই আড়েবহরে বৃদ্ধি পেয়েছে, ততই সৌরজগৎকে প্রায় দু’টি ভাগে ভাগ করে ফেলেছিল— ভিতর এবং বাইরের অঞ্চল। সৌরজগতের মধ্যে যে পদার্থগুলি ঘুরছিল, সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে মিশে যেতে পারেনি। তাদের রীতিমতো গুছিয়ে রেখেছে।

সৌরজগতে প্রথম কঠিন বস্তু তৈরি হওয়ার কয়েক লক্ষ বছর পরে তৈরি হয়েছে উল্কা। কেন, তা-ও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এই উল্কার গঠন দেখে অনেক কিছুই বুঝেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, সৌরজগতে কঠিন বস্তু তৈরি হওয়ার লক্ষ লক্ষ বছর পরে এই উল্কার জন্ম একটা রহস্য। রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এই উল্কার জন্ম যে এত দেরিতে হয়েছে, তার নেপথ্যেও রয়েছে বৃহস্পতি। সৃষ্টির আদিতে সূর্যের চারপাশের বলয়ে বৃহস্পতি যে তরঙ্গ তৈরি করেছিল, তার জেরে বহু লক্ষ বছর পরে তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় প্রজন্মের ‘প্ল্যানেটিসমাল’ (গ্রহের অংশ)। সেগুলি থেকেই জন্ম নেয় উল্কা। নতুন নতুন সৌরমণ্ডলগুলিতেও একই ঘটনা দেখা যায় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করছেন, সৃষ্টির আদিতে বৃহস্পতি যে ভূমিকা নিয়েছিল, তার চিহ্ন আজও স্পষ্ট।

Advertisement
আরও পড়ুন