ICC Women\'s ODI World Cup 2025

ইতিহাসের অপেক্ষায় ফাইনালের দু’দল, চেনা পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হরমনপ্রীত-মন্ধানাদের দিদিগিরি কি ফেরাবে ১৯৮৩

পুরুষদের বিশ্বকাপের আগে থেকে হচ্ছে মহিলাদের বিশ্বকাপ। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দল ভারতকে বিশ্বজয়ের স্বাদ দিলেও মহিলাদের বিশ্বকাপ এখনও অধরা। ঘরের মাঠে এমন সুযোগ আগে কখনও আসেনি!

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০০
picture of cricket

(বাঁ দিকে) হরমনপ্রীত কৌর এবং লরা উলভার্ট (ডান দিকে)-এর মাঝে এক দিনের বিশ্বকাপ ট্রফি। ছবি: পিটিআই।

২০২৩, ২০২৪ সালের পর ২০২৫। ক্রিকেটের আরও একটি বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত। রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের পর এবার হরমনপ্রীত কৌর-স্মৃতি মন্ধানাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখছে দেশ। বছর দেড়েক আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন রোহিতেরা। এ বার এক দিনের বিশ্বকাপ ট্রফি এবং হরমনপ্রীতদের মাঝেও বাধা সেই প্রোটিয়ারা। হরমনপ্রীত-মন্ধানারা শেষ বাধা টপকাতে পারলে এ দেশের ক্রিকেটে ফিরতে পারে ‘১৯৮৩’।

Advertisement

২০০৫ এবং ২০১৭ সালে ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ভারত। দু’বারই অধিনায়ক ছিলেন মিতালি রাজ। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মিতালির কীর্তি ছুঁয়ে ফেলেছেন হরমনপ্রীত। এ বার তাঁর সামনে পূর্বসূরির ‘রাজ’ ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে হরমনপ্রীত বলেছিলেন, এ বার সমর্থকদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। বিশ্বকাপের মাঝে টানা তিন ম্যাচ হারে আশাভঙ্গের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বটে। তবু এক সময় চাপে পড়ে যাওয়া ভারতীয় দলের সামনে প্রতিশ্রুতি রক্ষার সুযোগ। হরমনদের কৃতিত্ব রয়েছে নিশ্চয়ই। ক্রিকেট-দেবতার আশীর্বাদও পেয়েছেন তাঁরা। বৃষ্টিতে নিউ জ়িল্যান্ডের দু’টি ম্যাচ ভেস্তে না গেলে হয়তো শেষ চারে জায়গাই হত না ভারতের। প্রকৃতির মেজাজ এখনও মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। খানিকটা পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি ভারতীয় দল। সেমিফাইনালের আগে চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন প্রতিকা রাওয়াল। সাত বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় শিবির। কিন্তু ঠিক সময়ে সেরা ফর্মে উদয় হয়েছেন জেমাইমা রদ্রিগেজ়। রানে ফিরেছেন অধিনায়ক হরমনপ্রীতও। তাই মন্ধানার রান না পাওয়া বা হঠাৎ দলে ঢোকা শেফালি বর্মার ব্যর্থতা প্রভাব ফেলতে পারেনি।

চ্যাম্পিয়ন দলের চরিত্র এমনই হয়। এক জনের ব্যর্থতা অন্য জন ঢেকে দেন। সেমিফাইনালের পর জেমাইমা বলেছেন, তাঁদের চেনা পিচে কাউকে ‘দিদিগিরি’ করে চলে যেতে দেবেন না। অধিনায়ক বলেছেন, কোচের আস্থার মর্যাদা দিতে চান তাঁরা। ভারতীয় শিবিরের এই জোড়া জেদ ফাইনালের সুর বেঁধে দিতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা আর যা-ই হোক, অস্ট্রেলিয়া নয়। ফাইনাল হলেও তুলনায় সহজ প্রতিপক্ষ। জোরে বোলারেরা ঠিকমতো বল করতে পারলে আর ফিল্ডিংয়ের ভুল-ত্রুটি শোধরাতে পারলে হরমনপ্রীতদের জয় অসম্ভব নয়।

দক্ষিণ আফ্রিকাও নিশ্চিত ভাবে চাইবে ইতিহাস তৈরি করতে। ফাইনালে উঠে এক বার ইতিহাস গড়েছেন লরা উলভার্টরা। জিততে পারলে সেই ইতিহাসই সোনার অক্ষরে লিখে রাখতে পারবেন তাঁরা। ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান সমস্যা ধারাবাহিকতার অভাব। কোনও ম্যাচে দারুণ ভাল তো পরেরটাতেই অতি সাধারণ। দলটার সাফল্য মূলত নির্ভরশীল চার-পাঁচ জন ক্রিকেটারের উপর। অধিনায়ক উলভার্ট ছাড়া ভারতকে বিপদে ফেলতে পারেন ব্যাটার তাজ়মিন ব্রিটস, অলরাউন্ডার মারিজ়ান কাপ, নাদিন ডি ক্লার্ক এবং স্পিনার ননকুলুলেকো এমলাবা। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ক্লো ট্রায়ন দলে থাকলেও খুব ভাল ফর্মে নেই।

লিগ পর্বের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে রিচা ঘোষ ছাড়া ভারতের কোনও ব্যাটার সুবিধা করতে পারেননি। উলভার্ট, ক্লার্ক, ট্রায়নেরা জিতিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তা ছাড়া ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৯ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৭ রানে অলআউট হওয়া দল ফাইনালে শেষ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করবেই। রবিবারের ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাসী দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পর ফুটছে ভারতের সাজঘরও। জয় ছাড়া কিছু ভাবতে চাইছেন না হরমনপ্রীতেরা। ভাববেন কেন? ২০২৪ সাল থেকে দু’দলের ছ’টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিই জিতেছেন হরমনপ্রীতেরা।

মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হয়েছে মোট ৩৪ বার। ২০টি ম্যাচ জিতেছে ভারত। ১৩টি দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলাফল হয়নি একটি ম্যাচের। জয়-পরাজয়ের নিরিখে পাল্লা ভারী ভারতের। তবু বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। ইতিহাস তৈরির সুযোগ দু’দলের সামনেই। ক্রিকেটপ্রেমীরা নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের অপেক্ষায় রয়েছেন। হরমনপ্রীতেরা চ্যাম্পিয়ন হলে বদলে যেতে পারে ভারতে মহিলাদের ক্রিকেটের চেহারা। ঠিক যেমন ১৯৮৩ সালে কপিল দেবদের বিশ্বজয় বদলে দিয়েছিল এ দেশের ক্রিকেটকে।

Advertisement
আরও পড়ুন