Sebaashray in Nandigram

নন্দীগ্রাম চাই! মধ্য জানুয়ারিতে বিরোধী দলনেতার বিধানসভা কেন্দ্রের দু’টি ব্লকেই অভিষেকের নির্দেশে শুরু ‘সেবাশ্রয় শিবির’

আপাতত ঠিক হয়েছে, জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকে ওই শিবির শুরু হবে। বলা বাহুল্য, অভিষেক নিজেও ওই শিবিরে যাবেন। নইলে যে লক্ষ্য নিয়ে নন্দীগ্রামে ওই শিবির চালু করা হচ্ছে, সেই ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছোনো তত সহজ না-ও হতে পারে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:২৯
Abhishek Banerjee is organising a Sebaashray camp in Nandigram, the Assembly constituency of Suvendu Adhikari

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এতদিন যা ছিল তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে সীমাবদ্ধ, এ বার সেই ‘সেবাশ্রয় প্রকল্প’কে রাজ্যের অন্যত্রও শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে সেই এলাকার নাম নন্দীগ্রাম। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্র। যে কেন্দ্রে ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেড় হাজারের সামান্য বেশি ভোটে হারিয়ে জিতেছিলেন শুভেন্দু।

Advertisement

কোভিডের সময় ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর মতোই ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের ‘সেবাশ্রয় শিবির’ রাজ্যে সাড়া ফেলেছিল। ঘটনাচক্রে, তার পর অভিষেকের দফতরে নন্দীগ্রাম থেকে সেখানেও ওই শিবির করার জন্য প্রচুর আবেদন জমা পড়েছিল। তার পরই ওই বিষয়ে চিন্তভাবনা শুরু করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেই ভাবনাই অবশেষে পরিণতি পেতে চলেছে।

নন্দীগ্রামে অভিষেকের পরিকল্পনাপ্রসূত ওই শিবির চালু হওয়া মানে একদিকে সরাসরি শুভেন্দুর কেন্দ্রে গিয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানানো। এবং একই সঙ্গে নন্দীগ্রামের মানুষকেও বোঝানো যে, সরকার এবং পরিষেবা সকলের জন্যই। তাঁরা গত বারের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুকে ভোট দিয়ে জেতালেও সরকার এবং শাসকদলের অন্যতম শীর্ষনেতা তাঁদের ওই পরিষেবা থেকে ‘ব্রাত্য’ করে রাখছেন না।

আপাতত ঠিক হয়েছে, জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকে ওই শিবির শুরু হবে। বলা বাহুল্য, অভিষেক নিজেও ওই শিবিরে যাবেন। নইলে যে লক্ষ্য নিয়ে নন্দীগ্রামে ওই শিবির চালু করা হচ্ছে, সেই ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছোনো তত সহজ না-ও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু মূল সেবাশ্রয়ের পরিকল্পনা অভিষেকেরই মস্তিষ্কপ্রসূত এবং নন্দীগ্রামে ওই শিবির চালু করার ভাবনাও তাঁরই, তাই তাঁর নিজের উপস্থিতি সেখানে প্রয়োজনীয়। তবে শিবির শুরুর দিন অভিষেক সেখানে যাবেন, না কি শিবির শেষে জনসভা করবেন, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জানুয়ারির ৩ তারিখ থেকে উত্তরবঙ্গ দিয়ে তাঁর জেলা সফর শুরু করবেন অভিষেক। তার আগে ২ তারিখে তিনি যাবেন বারুইপুরেও। জানুয়ারির মাঝামাঝি তাঁর পূর্ব মেদিনীপুরে জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। এমনও হতে পারে যে, সেই সভা থেকেই তিনি নন্দীগ্রামে ‘সেবাশ্রয় শিবির’ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন। শিবির সাত থেকে দশ দিন চলবে— প্রাথমিক পরিকল্পনা এমনই রয়েছে।

কেন ডায়মন্ড হারবারের সীমানার বাইরে নন্দীগ্রামেই ‘সেবাশ্রয় শিবির’ চালু করছেন অভিষেক, তা আন্দাজ করার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। এই শিবিরের নিহিতার্থ হল ‘নন্দীগ্রাম চাই’! গত বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা সামান্য ভোটে এই কেন্দ্র থেকে হেরে গিয়েছিলেন। তার ‘জবাব’ দেওয়ার সুযোগ তৃণমূলের সামনে এসেছে পাঁচ বছর পর। মুখ্যমন্ত্রী এ বার যে আর নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন না, তা নিশ্চিত। কিন্তু নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়ে শুভেন্দু রাজ্য রাজনীতিতে যে সাড়া ফেলেছিলেন, তা সুদে-আসলে অভিষেক ফিরিয়ে দিতে চান নন্দীগ্রামের মাটিতে শুভেন্দুকে হারিয়ে। যে অভিযানে তাঁর বড় ‘হাতিয়ার’ হতে পারে জনতার জন্য স্বাস্থ্যশিবির।

এমনিতে নন্দীগ্রাম নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু কিছু পরিকল্পনা কাজে রূপায়িত হতে শুরুও করেছে। কিন্তু সে সবই তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক বিষয়। যেমন কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া। যেমন নির্দিষ্ট নেতাদের জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া। তা দিয়ে সংগঠন মজবুত হতে পারে। কিন্তু তাতে জনসংযোগ হয় না। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কাজকর্মে সাধারণ মানুষের কিছু যায়-আসে না। কিন্তু সেবাশ্রয়ের মতো কোনও ‘জনকল্যাণমুখী’ শিবির করলে তা যেমন সাধারণ মানুষ দেখতে পাবেন, তেমনই তাঁরা তা থেকে সরাসরি উপকৃতও হবেন। যা নন্দীগ্রামের মানুষের মনে সামগ্রিক অভিঘাত তৈরি করতে পারবে বলে তৃণমূলের আশা।

অভিষেকের ‘সেবাশ্রয় শিবির’ ডায়মন্ড হারবারে সফল হওয়ায় বিধানসভা ভোটের আগে তিনি আবার তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ওই প্রকল্প শুরু করেছেন। ডায়মন্ড হারবারে ওই প্রকল্পে রাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে জনতা চিকিৎসা করাতে আসছে। যেমন আগের বারও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এমনকি, উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা থেকেও লোকজন ওই শিবিরে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। যদিও প্রথম বার শিবির শুরুর পরে অভিষেকের ওই উদ্যোগকে রাজ্য সরকারের ‘সমান্তরাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ বলে বিরোধীদের একাংশ কটাক্ষ করেছিল। বস্তুত, তৃণমূলের কোনও কোনও সাংসদও ওই শিবির নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন।

অভিষেক নিজের মতো করে তার জবাবও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাজ্যের যে কোনও সাংসদই তাঁর এলাকার মানুষের জন্য ওই ধরনের চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করতে পারেন। যেমন তিনি তাঁর কেন্দ্রের মানুষের জন্য করছেন। দ্বিতীয় দফার ‘সেবাশ্রয় শিবির’ শুরু হওয়ার পরে ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক তাঁর কেন্দ্রেও ওই শিবির চালু করার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু নন্দীগ্রামে ‘সেবাশ্রয় শিবির’ চালু হওয়ার ‘রাডনৈতিক তাৎপর্য’ যে আলাদা, তা তৃণমূলের অন্দরে সকলেই স্বীকার করে নিচ্ছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন