Ganga-Padma Water Sharing Agreement

কূটনৈতিক শৈত্যের মাঝে গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি সংক্রান্ত বৈঠক, কলকাতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল

১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ফলে দুই দেশ গঙ্গার জল ভাগ করে নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৩:০০
Bangladesh delegation to Kolkata for meeting of Ganga-Padma Water Sharing Agreement and Indo-Bangladesh River Commission

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

পাঁচ দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে এলেন ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। সোমবার মোট ১১ জন পদস্থ কর্মকর্তা এই সফরে অংশ নিতে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে নয়াদিল্লি থেকে আসা কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। সফরের মূল উদ্দেশ্য হল গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। প্রতিনিধি দলটি সোমবার ফরাক্কা ব্যারাজ পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে তাঁরা গঙ্গা থেকে পদ্মায় প্রবাহিত জলের পরিমাণ ও অবস্থা খতিয়ে দেখবেন। ফরাক্কা ব্যারাজ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর জল বণ্টনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গঙ্গা থেকে নির্ধারিত পরিমাণ জল কী ভাবে পদ্মায় প্রবাহিত হচ্ছে, তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করবেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

এর পর ৭ মার্চ কলকাতায় একটি বিলাসবহুল হোটেলে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। গঙ্গার জলবণ্টন ছাড়াও তিস্তা এবং অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির বিষয়ে কথাবার্তা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। বিশেষ করে তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে রয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ফলে দুই দেশ গঙ্গার জল ভাগ করে নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে এটি শেষ হবে। আগামী বছর চুক্তির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন করে কিছু পর্যালোচনা ও সংশোধন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ গঙ্গার প্রবাহ ও বণ্টন নিয়ে নিয়মিত বৈঠকে বসে। তবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ অভিযোগ তুলেছে যে, শুষ্ক মৌসুমে ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে তারা পর্যাপ্ত জল পায় না। অন্য দিকে, ভারতীয় পক্ষের দাবি, জলপ্রবাহের স্বাভাবিক ওঠানামার কারণে কিছু সময় জলের পরিমাণ কমবেশি হয়। এই সফর ও বৈঠক সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখারই একটি অংশ।

গত বছর অগস্ট মাসে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। তাই এই বৈঠকের মাধ্যমে উভয় দেশ নিজেদের মতামত বিনিময় করবে এবং ভবিষ্যতে কী ভাবে জলবণ্টন আরও কার্যকর ভাবে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ফরাক্কা পরিদর্শন এবং ৭ মার্চের আলোচনা আগামী বছরের জন্য জলবণ্টন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের এই সফর তাই শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেই নয়, ভবিষ্যতের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বিএসএফ এবং বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)-এর শীর্ষকর্তাদের মধ্যে ৫৫তম দ্বিবার্ষিক বৈঠক হয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এই ধরনের বৈঠক এই প্রথম। বৈঠকের পর বিএসএফ প্রধান দলজিৎ সিংহ চৌধরির সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবি-র ডিজি মহম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি বলেছিলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা অতিরঞ্জিত। বহু সংখ্যালঘু ভয় পেয়ে আমাদের সাহায্য চেয়েছিলেন। বিজিবি তাঁদের সাহায্যের বিষয়ে আশ্বস্ত করে।”

৫ অগস্ট বাংলাদেশে গণআন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। পালিয়ে আসেন ভারতে। তাঁর প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এখনও তার উত্তর দেয়নি নয়াদিল্লি। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ভারত একাধিক বার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন