রাজ্যে শিল্পের হাল নিয়ে তথ্য-পুস্তিকা প্রকাশে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বিধাননগরে দলের দফতরে। — নিজস্ব চিত্র।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সম্মেলনে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যোগ দিয়ে এই ক্ষেত্রের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগেই বুধবার পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-পরিস্থিতি নিয়ে কার্যত বেনজির ভাবে এক যোগে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের পরিসংখ্যানকেই পাল্টা হাতিয়ার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করলে শিল্প হবে বলে একাধিক বার বার্তা দিয়েছিলেন শুভেন্দু, শমীক। বিধাননগরে দলীয় দফতরে এ দিন তাঁরা রাজ্যের ‘বেহাল’ শিল্প-চিত্রের কথা বলেছেন। ‘পশ্চিমবঙ্গ শিল্পের শ্মশান ভূমি’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে তা বুথ স্তরে মোট ১৭ হাজার সভার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেছেন বিরোধী নেতা।
বিরোধী নেতার অভিযোগ, “বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উপহার, খাওয়া-দাওয়া, ভাষণের পিছনে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তুলনায় বিনিয়োগ শূন্য।” তাঁর অভিযোগ, “২০১৫ থেকে যত মউ সই হয়েছে, তার সঙ্গে বিনিয়োগ-বাস্তবতার মিল নেই। মমতার আমলে ২০ লক্ষ কোটি টাকার ৮০০টি মউ সই হয়েছে। সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত লক্ষ কোটি টাকা। ঋণ-মুক্তির উপায় বড় শিল্পে বিনিয়োগ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গত ১৪ বছরে কোনও বড় শিল্পে বিনিয়োগ হয়নি।” তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী ক্লান্ত, ভারাক্রান্ত, ওঁর মন-মেজাজ ভাল নেই! তাই নিউটাউনে ২০০ কোটি খরচের বদলে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে দু’দিনের বাণিজ্য সম্মেলন হতে চলেছে।” শুভেন্দুর দাবি, রাজ্যে যেটুকু বিনিয়োগ হয়েছে, সেটাও জাতীয় সড়ক, রেল, মেট্রো, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরের মাধ্যমে কেন্দ্রের বিনিয়োগ।
বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, “মিথ্যার মশলা দিয়ে রাজ্যের শিল্প সম্পর্কে প্রচার করছেন ওঁরা। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাবেই এমএসএমই ক্ষেত্রে, মহিলা উদ্যোগে রাজ্য শীর্ষে। কেন্দ্রের হিসাবেই শিল্পে অগ্রগণ্য দেশের প্রথম পাঁচটি রাজ্যের একটি পশ্চিমবঙ্গ।”
দলের রাজ্য সভাপতি শমীক শিল্পায়নের প্রশ্নে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির প্রসঙ্গ এনে মমতাকে নিশানা করেছেন। শমীক বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পশ্চিমবঙ্গকে গুজরাত, মহারাষ্ট্র হতে দেব না। অথচ, মহারাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ৩৬.৬%। পশ্চিমবঙ্গে সেটা ০.৬%।” শমীকের দাবি, “শিল্প সম্মেলনে এসে যাঁরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-বান্ধব পরিবেশ আছে, তাঁরাই রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়ে অন্যত্র বিনিয়োগ করেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শিল্পোদ্যোগীদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-পরিবেশ নিয়ে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে।” যদিও তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশের পাল্টা তোপ, “পশ্চিমবঙ্গের প্রতি শিল্পপতিদের আগ্রহ কমেনি। রাজ্যের প্রতি কারও অনাগ্রহ থাকলে সেটা বিজেপির।”
বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’পক্ষকেই আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, “ভারত থেকে ৪০% শিল্পোদ্যোগী, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৪৪৪ জন শিল্পোদ্যোগী চলে গিয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের জাঁতাকলে পড়ে শিল্পোদ্যোগীরা চলে যাচ্ছেন। দেশে গত ৪৫ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি বেকারত্ব এখন। বিজেপিও তাই যেন বড় বড় কথা না বলে।”