OBC Certificate Case

নিষেধ সত্ত্বেও নিয়োগপ্রক্রিয়া কেন শুরু? ওবিসি মামলায় ‘ভুল’ স্বীকার মুখ্যসচিবের! হাই কোর্টকে বললেন: আর হবে না

হাই কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্য সরকার, এমনই অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয় উচ্চ আদালতে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৩
Chief Secretary Manoj Pant faces questions from Calcutta High Court in OBC case

রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। —ফাইল ছবি।

আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হল? মঙ্গলবার ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় হাই কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বিচারপতিদের প্রশ্নবাণের সামনে পড়ে ‘ভুল’ স্বীকার করলেন তিনি। আদালতকে আশ্বস্ত করে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আর হবে না!’’

Advertisement

হাই কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্য সরকার, এমনই অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয় উচ্চ আদালতে। মঙ্গলবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি ছিল। গত শুনানিতে এই মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি।

মুখ্যসচিবকে বিচারপতি চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, ‘‘আমরা আমাদের নির্দেশ স্পষ্ট করে বলেছিলাম। তার পরও তা অমান্য করে কী ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হল? রাজ্য বা মুখ্যসচিবের এ বিষয়ে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই?’’ মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বরে এবং চলতি মাসেও আদালতের নির্দেশ সব দফতরকে জানানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশ না মানার কোনও কারণই নেই। এটা একটা ভুল, সেটা স্বীকার করছি।’’

পশ্চিমবঙ্গ কোঅপারেটিভ সোসাইটির নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ, ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এমনকি, প্যানেলও প্রকাশ করা হয়। আদালতে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মতো চূড়ান্ত কিছুু করা হবে না। যেখানে যা নিয়োগ চলছে, আমরা সেখানে সব স্থগিত করে দিচ্ছি। আমরা সরকারের সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রেখেছি। ওবিসি মামলা বিচারাধীন থাকায় সেই সংক্রান্ত নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। আদালতের নির্দেশকেই মান্য়তা দেওয়া হবে। আমাদের কোথাও ভুল হয়ে থাকলে, আমরা সেটা সংশোধন করে নেব।’’ আদালত তার পরই ওবিসি শংসাপত্র বাতিল নিয়ে পুরনো নির্দেশই স্পষ্ট করে। শুনানিতে বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘‘২০১০ সালের আগে যাঁরা ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও স্থগিতাদেশ দিইনি। আদালত তার নির্দেশে তা স্পষ্ট করে বলেছিল।’’ নির্দেশের কথা উল্লেখ করে মুখ্যসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনরা কেন আদালতের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যে আমাদের নির্দেশের জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ! ২০১০ সালের আগে যাঁরা ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগে তো কোনও বাধা নেই।’’ মুখ্যসচিব জানান, আদালতের নির্দেশ সব দফতরকে পাঠানো হয়েছে। তা শুনে বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, ‘‘আপনি (মনোজ পন্থ) সবচেয়ে বড় আধিকারিক। আপনার লোকেরাই আপনাকে মানছেন না। এটা আমাদের কাছে খারাপ লাগছে। আপনাকে আদালতে ডাকাও দুঃখজনক। আপনার কথা না শুনলে আর কার কথা শুনবে?’’ মুখ্যসচিব আদালতকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে সতর্ক হব।’’

আদালতের বক্তব্য, ‘‘নির্দেশ মানার ব্যাপারে সরকারি আইনজীবী এখানে একাধিক হলফনামা দিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। অথচ রাজ্য সরকারই তাঁর পাশে নেই?’’ আদালতের নির্দেশ সব দফতরকে পাঠানোর পরেও কেন তা অমান্য হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। মুখ্যসচিবের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, ‘‘যদি কেউ আপনাদের নির্দেশ না মানেন তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেবেন না? অন্তত সেই অফিসারদের ডেকে তাঁদের থেকে নির্দেশ না মানার ব্যাখ্যা চাইবেন না? অন্তত এইটুকু করুক সরকার।’’

উল্লেখ্য, গত বছর ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দেয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। সেখানে রাজ্যের মামলাটি এখন বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন