Nurse Dipali Jana Death Case

মৃত্যুর চার দিন পর নন্দীগ্রামের নার্সের দেহের ময়নাতদন্ত কল্যাণী এমসে, একটি দাবি মিটেছে, এ বার পরিবার চায় সিবিআই তদন্ত

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, ধৃত রাধাগোবিন্দের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই নার্সের। বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন প্রেমিকা বিয়ে করতে বলায় বেঁকে বসেছিলেন ওই যুবক।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ১৯:৩২
Nurse Dipali Jana Death Case

(বাঁ দিকে) ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ দাবি করে সিপিএমের বিক্ষোভ মিছিল। (ডান দিকে) দীপালি জানা। —নিজস্ব চিত্র।

‘রহস্যমৃত্যুর’ চার দিন পর নন্দীগ্রামের মৃত নার্সের দেহের ময়নাতদন্ত হল শনিবার। পরিবারের দাবি মেনে কেন্দ্রীয় হাসপাতালেই সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবারের হাতে। তবে এ বার সিবিআই তদন্তের দাবি করছে পরিবার।

Advertisement

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে কল্যাণী এমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দেহ। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে। স্বচ্ছতার স্বার্থে পুরোটা ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পর মৃত নার্স দীপালি জানার দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে গ্রামের বাড়িতে পরিজনদের উপস্থিতিতে শনিবারই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে ওই নার্সের পরিবার সূত্রে খবর।

দীপালির মৃত্যুর ঘটনায় গত চার দিন ধরে রাজনৈতিক শোরগোল চলছে। নন্দীগ্রামের দীপালি নার্সের চাকরি করতে গিয়েছিলেন হুগলির সিঙ্গুরে। কাজে যোগদানের তিন দিনের মাথায়, গত বুধবার তাঁর ঝুলন্ত দেহর উদ্ধার হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার দাবি করলেও পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে দীপালিকে। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়।

শুক্রবার হুগলি থেকে ওই নার্সের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু পরিবার দাবি করে, এই বিষয়ে তাদের অনুমতির তোয়াক্কা করা হয়নি। তারা চায় কোনও কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হোক। বিজেপি জানায়, রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা নেই পরিবারের। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে চায় না তারা। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর ময়নাতদন্ত হল কেন্দ্রীয় হাসপাতালেই। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেন কল্যাণী এমস কর্তৃপক্ষ। এখন ময়নাতদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে তাঁদের সংশয় নেই। তবে মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার দাবি করেছেন পরিজনেরা। দীপালির এক আত্মীয় তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘মৃত্যুর পর থেকে গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে, তা নিন্দনীয়। সঠিক ময়নাতদন্ত হলেই যে তদন্ত স্বচ্ছ হবে, এটা বলা যায় না। আমরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’ একই সুর শোনা যায় চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের গলাতে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমরা অভিযোগ করে আসছি যে, তদন্তপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করা হচ্ছে। আমরা মৃতার পরিবারের পাশে ছিলাম। পরিবারের পাশে থেকে আমরাও সিবিআই তদন্তের দাবিতে লড়াই করব।’’

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে সিঙ্গুরের একটি নার্সিংহোমের ঘরে ওই নার্সের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বিষয়টি সামনে আসে বৃহস্পতিবার সকালে। পরিবার নার্সিংহোমের মালিকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে। তবে হুগলি গ্রামীণ পুলিশ শুধু নার্সিংহোমের মালিক সুবীর ঘোড়া নয়, গ্রেফতার করেছে দীপালির বন্ধু রাধাগোবিন্দ ঘটককে। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে কাঁথি থেকে।

কে এই দীপালি?

বেঙ্গালুরুতে নার্সিং পড়তেন নন্দীগ্রামের মেয়ে দীপালি। কোর্স শেষে বাড়ি ফিরেছিলেন কিছু দিন আগে। চাকরির খোঁজে ছিলেন বছর চব্বিশের ওই যুবতী। এক বান্ধবীর সূত্রে সিঙ্গুরের বোড়াই তেমাথা এলাকার একটি নার্সিংহোমে চাকরি পান তিনি। গত সোমবার কাজে যোগ দেন। বুধবার রাতে ওই নার্সিংহোম থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।

পুলিশের তদন্তে কী মিলেছে?

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, ধৃত রাধাগোবিন্দের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই নার্সের। বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন প্রেমিকা বিয়ে করতে বলায় বেঁকে বসেছিলেন ওই যুবক। সেই কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন দীপালি। আবার নার্সিংহোমের মালিকও ওই নার্সের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন বলেও অভিযোগ মিলেছে। দু’জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় তদন্তকারীরা।

নার্সের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে এফএসএল

সিঙ্গুরের যে নার্সিংহোম থেকে নন্দীগ্রামের নার্সের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, শনিবার সেখানে যান ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল)-র চার আধিকারিক। চারতলার যে ঘর থেকে নার্সের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই জায়গা ঘুরে দেখেন তাঁরা। বিভিন্ন নমুনা ও তথ্য সংগ্রহ করেছে দলটি। হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পর থেকে চারতলার ঘরটি ‘সিল’ করে রাখা হয়েছিল। নার্সিংহোমে সর্ব ক্ষণের জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের আবেদনেই আজ এফএসএলের চার আধিকারিক গিয়েছেন সেখানে। চার জনের মধ্যে দু’জন পদার্থবিদ্যা এবং জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। যে জায়গা থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল সেই জায়গার ‘ভর’ পরীক্ষা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সেই সমস্ত নিয়ে কথা বলতে রাজি নয় পুলিশ।

নার্সের মৃত্যুতে হুগলিতে সিপিএমের বিক্ষোভ

সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে নার্সের দেহের ‘দখল’ নিয়ে বিজেপি ও সিপিএমের বেনজির সংঘাত দেখা গিয়েছে শুক্রবার। বিজেপির অভিযোগ, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে প্রথম থেকে লড়াই করছে তারা। হঠাৎ সিপিএম রাজনীতির চেষ্টা করছে। শাসকদল তৃণমূলের কটাক্ষ, ভোটের আগে মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন বিরোধীরা। এর মধ্যে শনিবার নারী সুরক্ষার দাবি নিয়ে শ্রীরামপুর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত না-করে কলকাতায় দেহ পাঠানোর নেপথ্যে রয়েছে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা। এক বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘‘আরজি করের ঘটনার মতো জোর করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’

নার্সের রহস্যমৃত্যু প্রসঙ্গে মিঠুন

সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে নার্সের রহস্যমৃত্যুর ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত এবং আরজি কর-কাণ্ডের পুনরায় তদন্ত দাবি করেছেন বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরে অভিনেতা, বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিবিআই (তদন্ত) হলে ভালই হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এত দুর্নীতি... আর কোনও ফাঁক নেই। সব জায়গায় দাদাগিরি চলছে রাজ্যে। এর ‘সলিউশন’ (সমাধান) হল পরিবর্তন। সনাতনীরা জেগেছেন, তাই তৃণমূল ভয় পেয়েছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন