Alipore Mystery Death Case

আলমারিতে ঝুলন্ত দেহ: মৃত কিশোরী আরজি কর-কাণ্ডের সেই সঞ্জয়ের ভাগ্নি, বলছেন পড়শিরা! বাবা, সৎমাকে মারধর

সোমবার রাতে কলকাতার আলিপুর থানার বিদ্যাসাগর কলোনি এলাকায় একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বছর দশেকের মেয়ের দেহ। জানা যায়, ঘরের আলমারি থেকে তার ঝুলন্ত দেহ পান সৎমা। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:০৫
Alipore Mystery Death

(বাঁ দিকে) বাড়িতে মৃত নাবালিকার বাবা এবং সৎমা। (ডান দিকে) পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, যার দেহ পাওয়া যায় বাড়ির আলমারিতে। ছবি: সংগৃহীত।

আত্মহত্যা নয়, খুন করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে। কলকাতার আলিপুরকাণ্ডে এমনই অভিযোগে মৃত স্কুলছাত্রীর বাবা-মাকে পুলিশের সামনেই মারধর করলেন স্থানীয়েরা। তাঁদের দাবি, আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ভাগ্নি ছিল ওই মেয়েটি। মায়ের মৃত্যুর পরে তার বাবা আবার বিয়ে করেন। সৎমা এবং বাবা মেয়েটিকে অত্যাচার করে মেরে ফেলেছেন বলে দাবি। খুনের অভিযোগ করছেন মৃতার ঠাকুরমাও।

Advertisement

সোমবার রাতে আলিপুর থানার বিদ্যাসাগর কলোনি এলাকায় একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বছর দশেকের নাবালিকার দেহ। মেয়েটির মা (পরে জানা যায়, তিনি সৎমা) দাবি করেন, তিনি বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়িতে একাই ছিল মেয়ে। বাড়ি ফিরে মেয়েকে কোথাও দেখতে পাননি। পরে ঘরের একটি আলমারি খুলতেই চমকে যান তিনি। দেখেন, আলমারির ভিতরে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল পুলিশ। দেহ উদ্ধার হয় এবং ময়নাতদন্ত হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে। আত্মহত্যা না কি খুন, এ নিয়ে তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। এর মধ্যেই জানা যায়, মৃতা আরজি কর কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সঞ্জয়ের ভাগ্নি। বিদ্যাসাগর কলোনির স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সঞ্জয়ের এক বোনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আলিপুরের যুবকের। তাঁদের এক সন্তান। তবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর শ্যালিকাকে (সঞ্জয়ের আর এক বোন) বিয়ে করেন ওই যুবক। মাসি সৎমা হয়ে এসে মেয়েটির উপর নির্যাতন করতেন বলে দাবি করেন প্রতিবেশীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘যখন-তখন মেয়েটিকে মারধর করা হত। ওকে কান্নাকাটি করতে শোনা যেত। বাবা এবং সৎমা, দু’জনেই নাবালিকাকে মারধর করতেন।’’ মৃতার ঠাকুরমারও দাবি, নাতনি আত্মহত্যা করেনি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে তিনি ছেলেকে দায়ী করেননি। আঙুল তুলেছেন বৌমার দিকে।

এক প্রতিবেশী জানান, রাত পর্যন্ত মেয়েটিকে পড়ানোর নাম করে অত্যাচার করা হত। এক দিন দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ফোন করে সে কথা মেয়েটির বাবাকে জানান। তখন তিনি নাকি বলেন স্ত্রীকে ‘অনুমতি’ দেওয়া আছে মেয়েকে শাসন করার। কয়েক জন দাবি করছেন, মেয়েটির বাবা তাঁর মাকেও মারধর করেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে পরিবারের দুই সদস্যকে ‘শাসন’ করতেন।

মঙ্গলবার মৃতার বাড়িতে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবা-মাকে ডেকে পাঠানো হয়। ঠিক তখনই এলাকাবাসী তাঁদের ঘিরে ধরেন। পুলিশের সামনে দম্পতিকে মারধর করা হয়। সকলের দাবি, নাবালিকা মেয়েকে নিজেদের স্বার্থে খুন করেছেন দম্পতি।

প্রতিবেশীদের আক্রমণের মুখে পড়ে কেঁদে ফেলেন মৃতার সৎমা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘আমার মেয়েকে আমি মারিনি... ওকে আমি খুন করিনি।’’ মেয়েটির বাবা বলেন, ‘‘আমার আর কিছু বলার নেই। মেয়ে চলে গিয়েছে। আমিও মরে যেতে চাই।’’ প্রতিবেশীদের দাবি, সহানুভূতি কুড়নোর জন্য এই সব কথা বলছেন তাঁরা। মেয়েকে খুনের দায়ে দম্পতির ফাঁসি হওয়া উচিত। এই শোরগোলের মধ্যে কন্যাহারা দম্পতিকে থানায় নিয়ে চলে যায় পুলিশ।

ইতিমধ্যে পাড়ার লোকজন সই সংগ্রহ শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, ওই পরিবারকে পাড়া ছাড়তে হবে। সে জন্য পিটিশন করবেন তাঁরা। কারণ, ওই পরিবারের জন্য গোটা পাড়ার বদনাম হচ্ছে। বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা তথা মৃত ছাত্রীর প্রতিবেশিনী মধুমন্তী ঘোষের কথায়, ‘‘ওই পরিবারকে আমরা এখানে রাখতে চাইছি না। কারণ, সকলের নাম খারাপ হচ্ছে। বদনাম হচ্ছে। বাড়ির লোকজনের উপর অত্যাচার করেন কর্তা। মায়ের পেনশন কেড়ে নেন। তাঁর গায়েও হাত তোলেন। সর্বদা অশান্তি লেগে থাকে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন