কলকাতার কর্মসূচিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত সরকারকে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরএসএস-ও সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে থাকার চেষ্টা করছে বলে সরসঙ্ঘচালক কলকাতায় রবিবার একটি কর্মসূচিতে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ভাগবত বলেছেন, ‘‘আমরা চাই, আমাদের সরকার কিছু করুক।’’
আরএসএস প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতা-সহ দেশের চারটি বড় শহরে ‘বক্তৃতামালা’ কর্মসূচির আয়োজন করেছে সঙ্ঘ। প্রধান বক্তা ভাগবত। রবিবার কলকাতায় সেই কর্মসূচিতেই তাঁকে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। বাংলাদেশে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান কী ভাবে সম্ভব, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার প্রসঙ্গে ভারত সরকারের কিছু করণীয় আছে কি না, সঙ্ঘের কী ভূমিকা নেওয়া উচিত, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ভাগবত বলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতির প্রভাব এখানে পড়ছে, পড়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের বিষয়ে আপনারা যা চাইছেন, যা ভাবছেন, আমরাও তা-ই চাইছি এবং ভাবছি। কিন্তু ভারতের এতে কিছু করার আছে কি না, সে বিষয়ে ভারত সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা চাই সরকার কিছু করুক।’’
বাংলাদেশ নিয়ে সঙ্ঘের অবস্থান কী? ভাগবত বলেন, ‘‘আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পাশে থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে এবং আগের চেয়ে তা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক ভাবে আমাদের যা করার, করছি। আগামী দিনে আরও করব।’’ সমগ্র বিশ্বের হিন্দু সমাজকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেছেন ভাগবত। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, ভারত সরকার এ বিষয়ে কিছু কাজ করছে। কিন্তু প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতার কারণে সব প্রকাশ্যে আনা যাচ্ছে না।
১৯৭১ সালের মতো এখনও কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য ভারতের সীমান্ত খুলে দেওয়া উচিত? এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার প্রশাসনের উপরেই ছেড়েছেন সঙ্ঘপ্রধান। তবে সীমান্ত খুলে দেওয়া হলে কারা এ দেশে প্রবেশ করছেন, তাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তার জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
আরএসএস-এর ‘বক্তৃতামালা’ কর্মসূচি দিল্লি, কলকাতা-সহ তিনটি শহরে ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। বাকি কেবল মুম্বই। রবিবার কলকাতার কর্মসূচি মোট তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্যায়ে ভাষণ দেন ভাগবত নিজে। কী উদ্দেশ্য নিয়ে ১০০ বছর আগে আরএসএস-এর পথ চলা শুরু হয়েছিল, সে দিকে তিনি আলোকপাত করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্ণনা করেছেন সঙ্ঘের কর্মপদ্ধতি। কী ভাবে স্বয়ংসেবকেরা কাজ করেন, তা বিশদে বুঝিয়েছেন ভাগবত। তৃতীয় পর্যায়ে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন তাঁকে করা হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে বাংলাদেশ নিয়ে। প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য প্রশ্ন আগে থেকে জমা দিতে হয়েছিল। বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রশ্নকর্তা ছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। একাধিক সরকারি ভবন, সংবাদপত্রের দফতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। ময়মনসিংহে দীপু দাস নামের এক ২৭ বছরের যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। পরে দেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আবেদন জানানো হয়েছে ঢাকার কাছে। এর মধ্যেই কলকাতায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন ভাগবত।