Local Train Service Disrupted

রাতভর বৃষ্টিতে রেললাইনে জল! শিয়ালদহ ও হাওড়ায় অনিয়মিত ট্রেন, বন্ধ চক্ররেল, নাগপাশে নাকাল যাত্রী পরিষেবা

শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনের কাছে জল জমে গিয়েছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার প্ল্যাটফর্মেও লাইনে জল জমেছে। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জেরে কলকাতা স্টেশন থেকে বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:২৩
মঙ্গলবার সকালে হাওড়া স্টেশনের কাছে রেললাইনে জমে রয়েছে জল।

মঙ্গলবার সকালে হাওড়া স্টেশনের কাছে রেললাইনে জমে রয়েছে জল। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা এবং শহরতলিতে রাতভর নাগাড়ে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রেল পরিষেবা। টানা বর্ষণের জেরে শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনের কাছে রেললাইনে জল জমে গিয়েছে। তার জেরে সকাল থেকে ব্যাহত ট্রেন চলাচল। পরে শিয়ালদহ মেন ও উত্তর শাখা এবং হাওড়া শাখায় সম্পূর্ণ পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও পরিষেবা অনিয়মিত।

Advertisement

শিয়ালদহ শাখায় লাইনে জল জমে থাকার কারণে চক্ররেলের আপ এবং ডাউন লাইনের পরিষেবা আপাতত বন্ধ রয়েছে। বিঘ্নিত হয়েছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেন পরিষেবা। শিয়ালদহ থেকে বালিগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেনগুলি বালিগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রেলের তরফে জানানো হয়েছে, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

রাতভর বৃষ্টিতে হাওড়া ইয়ার্ড, শিয়ালদহ দক্ষিণ ইয়ার্ড, চিৎপুর উত্তর কেবিন-সহ বেশ কিছু কারশেড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাম্প করে সেই জল বার করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ না-হওয়ায় আশপাশের এলাকা থেকে আবার জলে এসে জমছে রেল লাইনে। দুর্যোগের জেরে মঙ্গলবার সকালে শিয়ালদহ থেকে বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আপ হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস এবং শিয়ালদহ-জঙ্গিপুর এক্সপ্রেস মঙ্গলবারের জন্য বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য লোকাল ট্রেনগুলিরও যাত্রাপথ সংক্ষেপিত করে দেওয়া হয়েছে। রেল পরিষেবা সংক্রান্ত অনুসন্ধানের জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে একটি নম্বরও চালু করা হয়েছে। নম্বরটি হল ৩৩২৩৮৩২২২২।

দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জেরে কলকাতা স্টেশন থেকে বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। আপ পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেস দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দেবে। জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। সেটি প্রথমে দুপুর ২টোয় পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে ফের এক দফা ট্রেনটির সূচি বদলায়। পরিবর্তিত সূচি অনুসারে, ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টায় রওনা দেবে। অমৃতসর এক্সপ্রেসের ছাড়ার কথা ছিল দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে। দু’দফায় সময় পরিবর্তন করে সেটি সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে রওনা দেবে। কলকাতা-বালুরঘাট এক্সপ্রেসও দুপুর ১২টা ৫ মিনিটের বদলে দুপুর ৩টে ১৫ মিনিটে রওনা দেবে। কলকাতা-সাইরং এক্সপ্রেস মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রওনা দেবে।

কিছু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিলও করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা থেকে। মঙ্গলবারের জন্য বাতিল হয়েছে কলকাতা-হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস, কলকাতা-বালুরঘাট এক্সপ্রেস এবং ১৩১১৭ ও ১৩১১৩ কলকাতা-লালগোলা এক্সপ্রেস। কলকাতা থেকে দু’টি লালগোলা এক্সপ্রেস রওনা না-দেওয়ার কারণে ফিরতি পথের ১৩১১৪ এবং ১৩১১৮ লালগোলা-কলকাতা এক্সপ্রেসও মঙ্গলবারের জন্য বাতিল করা হয়েছে।

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় অল্প সংখ্যক কিছু ট্রেন ছাড়া প্রায় সব ট্রেনেরই যাত্রাপথ সংক্ষেপিত করা হয়েছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার প্লাটফর্মে জল জমে যাওয়ার কারণে দক্ষিণ শাখার বেশির ভাগ ট্রেনই বালিগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াত করছে।

শিয়ালদহের কাছে লাইনে জল জমার কারণে মেন, বনঁগা এবং হাসনাবাদ লাইনের পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দমদম জংশন স্টেশন পর্যন্তও যেতে পারছিল না ডাউন লাইনের ট্রেনগুলি। বনগাঁ থেকে শিয়ালদহগামী বেশ কিছু ট্রেন সকালের দিকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত যাতায়াত করে। মেন লাইনের ট্রেনগুলিও দমদম স্টেশন পৌছোনোর আগেই আটকে যায়। পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ পথে পরিষেবা চালু হলেও তা অনিয়মিত। সব লাইনেই ট্রেন দেরিতে চলছে। এর ফলে যাত্রীদের ভিড়ও বৃদ্ধি পেয়েছে ট্রেনগুলিতে।বৃষ্টির দুর্যোগের মধ্যে ট্রেন পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে যাত্রীদের। কখন পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে, তা রেলের তরফে স্পষ্ট ভাবে জানাতে না পারায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন, না কি বিকল্প ব্যবস্থা করবেন— তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না অনেকে। যদিও দমদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে অনেক যাত্রীই বাসে বা অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন। তবে সেখানেও বিপত্তি। কলকাতার বেশির ভাগ রাস্তা জলমগ্ন হয়ে থাকায় গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছোতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন অনেকে।

অন্য দিকে, টানা বৃষ্টিতে নাকাল হাওড়া ডিভিশনের ট্রেনযাত্রীরাও। ভারী বৃষ্টির জেরে হাওড়াতেও বেশ কিছু জায়গায় রেল লাইনে জল জমে গিয়েছে। সেখানেও পাম্প করে জল বার করার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাও়ড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, হাওড়া-গয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, হাওড়া-জামালপুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। এ ছাড়া ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস, গণদেবতা এক্সপ্রেস এবং রাঁচীগামী শতাব্দী এক্সপ্রেসের পরিষেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে।

হাওড়া থেকেও বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। হাওড়া থেকে দূন এক্সপ্রেস রাত ৮টা ২৫ মিনিটে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। সেটি রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে ছাড়বে। হাওড়া-কাঠগোদাম বাঘ এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের বদলে ছাড়বে রাত ২টো ১৫ মিনিটে। হাওড়া-জম্মু তাওয়াই হিমগিরি এক্সপ্রেস রাত ১১টা ৫৫ মিনিটের বদলে রাত ১টা ১৫ মিনিটে রওনা দেবে। হাওড়া-আসানসোল এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের বদলে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ছাড়বে।

তারকেশ্বর এবং বর্ধমান মেন লাইনের ট্রেন পরিষেবা অনিয়মিত। তারকেশ্বর লাইনে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ট্রেন পরিষেবা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বর্ধমান মেন লাইনেও ট্রেন পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। বর্তমানে পরিষেবা চালু থাকলেও তা অনিয়মিত। প্রায় সব লাইনেই ট্রেন দেরিতে চলছে। সেই কারণে ট্রেনগুলিতে যাত্রীদের ভিড়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই ভিড়ের কারণে ট্রেনে উঠতে পারছেন না। বিঘ্নিত হয়েছে বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেনের পরিষেবাও। ডাউন কাটিহার এক্সপ্রেসও শেওড়াফুলি স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।

Advertisement
আরও পড়ুন