Tourists at Digha

বর্ষবরণের আগেই পর্যটক-জোয়ার দিঘায়, হোটেলে হোটেলে ভিড়, ৩১ ডিসেম্বর সমুদ্রসৈকতে থাকছে ‘চমক’

দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, ২৬ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যেকটি হোটেলের বুকিং হয়েছে। যে কয়েকটি ঘর বাকি আছে, তা পাওয়ার জন্য কার্যত প্রতিযোগিতা করছেন পর্যটকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:১০
Tourists at Digha

২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে দিঘার সমুদ্রসৈকতে ভিড়। —নিজস্ব ছবি।

বাড়ির দেওয়ালে নতুন ক্যালেন্ডার ঝুলবে আর পাঁচ দিন পর। বছরশেষে উৎসবে মেতেছে সকলে। এই ছুটির মরসুমে পর্যটকদের ঢেউ আছড়ে পড়ছে দিঘায়। বড়দিন থেকেই হোটেলগুলোয় ভিড় বাড়ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে কার্যত মানুষের ঢল নেমেছে দিঘায়। আগাম হোটেল বুকিংয়ের জেরে এখন তিলধারণের জায়গা নেই ওল্ড ও নিউ দিঘার হোটেলগুলিতে। হোটেলমালিকদের একাংশ বলছেন, এ বার নতুন রেকর্ড গড়বে পূর্ব মেদিনীপুরের এই সৈকতশহর।

Advertisement

শুক্রবার দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায় জানান, ২৬ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যেকটি হোটেলের বুকিং হয়ে গিয়েছে। যে কয়েকটি ঘর বাকি আছে, তা পাওয়ার জন্য কার্যত প্রতিযোগিতা করছেন পর্যটকেরা। তবে সকলেই পরিষেবা পাবেন বলে মনে করছেন তিনি। বিপ্রদাসের কথায়, ‘‘পর্যটকদের সুবিধার্থে এখন ওল্ড ও নিউ দিঘা মিলিয়ে প্রায় ৮০০টি হোটেল পরিষেবা দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ঝাঁ-চকচকে আধুনিক হোটেল তৈরি হয়েছে, যেখানে আধুনিক মানের পরিষেবা কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে ভিড় বাড়লেও পর্যটকদের ঘর পেতে আগের মতো কালঘাম ছুটবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুক্রবার সকাল থেকেই বাস এবং প্রাইভেট গাড়ির লম্বা সারি দেখা গিয়েছে দিঘার রাস্তায়। তা ছাড়া ট্রেনেও প্রচুর মানুষ এসেছেন।’’

বর্ষবরণের আগে দিঘায় বরাবরই ভিড় হয়। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। তবে ভিড় বাড়ার আরও কিছু কারণ আছে বলে মনে করছেন হোটেলমালিক থেকে স্থানীয় দোকানিরা। হোটেল মালিকেরা জানাচ্ছেন, বর্ষবরণ উপলক্ষে এ বার নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেগুলোর আকর্ষণ আছে। তার উপর গত আট মাসে দিঘার আকর্ষণের আরও একটি কারণ হল জগন্নাথ ধাম।

জানা যাচ্ছে, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ) এবং হোটেল মালিক সংগঠনের তরফে এ বার দিঘায় ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’-এর আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ চমক থাকবে ৩১ ডিসেম্বরের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। ওই দিন রাতে ‘অলিম্পিকের কায়দায়’ আধ ঘণ্টার একটি বিশাল বাজি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। অভিনবত্ব আনতে সমুদ্রের বুকে একটি ভাসমান জেটি থেকে এই পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন বাজি’র প্রদর্শনী হবে। এ ছাড়াও বড়দিন থেকেই আলোকমালায় সেজে উঠেছে সৈকতশহর। ওল্ড এবং নিউ দিঘার হোটেলের পাশাপাশি রঙিন আলোয় মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নবনির্মিত জগন্নাথ ধাম চত্বর ও সংলগ্ন রাস্তাঘাট।

অন্য দিকে, উপচে পড়া ভিড় সামলাতে প্রশাসনও কোমর বেঁধে নেমেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিতুনকুমার দে বলেন, ‘‘পর্যটকদের সুরক্ষায় দিঘা জুড়ে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। পর্যটনকেন্দ্রকে যানজটমুক্ত রাখতে বাস এবং বড় গাড়িগুলিকে ওল্ড দিঘার বদলে বাইপাস দিয়ে নিউ দিঘার দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাতটি পৃথক পার্কিং জ়োন নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে কোনও সমস্যা না হয়।’’ দিঘার এই নতুন রূপ উপভোগ করতে পর্যটক-জোয়ার বছরের শেষ দিন পর্যন্ত বজায় থাকবে বলে নিশ্চিত ব্যবসায়ী মহল।

তবে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে যাতে পর্যটকদের ‘ঠকানো’ না হয় সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। বিপ্রদাস বলেন, “দিঘার কোনও হোটেল যাতে বাড়তি ভাড়া না নেয়, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য হোটেলের ভাড়া সংবলিত পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছে। কোনও হোটেল পর্যটকদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য দিঘার বদনাম হবে, এটা আমরা কিছুতেই হতে দেব না।’’ ওই দিকে নজর রাখছে প্রশাসনও।

Advertisement
আরও পড়ুন