মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
আর কয়েক ঘণ্টা পরে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। প্রস্তুতি তুঙ্গে। ভিড় টানতে মরিয়া জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের ‘বিরোধী’ বলে দলের অন্দরেই বিবেচিত জেলা পরিষদের চার সদস্য মমতার সভায় ডাক পাননি বলে খবর। এঁরা হলেন টিনা ভৌমিক সাহা, সুনীল দাস, সুস্মিতা হীরা এবং কমলা হালসোনা। আমন্ত্রণতালিকা থেকে বাদ পড়া নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য সুনীল বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের সভাধিপতির বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আগামিকাল সভার জন্য আমাদের কেউ ডাকেননি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হয়তো দলের জেলা সভানেত্রীর ইচ্ছেতেই এমনটা হয়েছে।’’ ডাক না-পাওয়া আরও এক সদস্য সুস্মিতা বলেন, ‘‘আমরা ডাক পাইনি। তার কারণ আছে। যাঁরা জেলা নেতৃত্বকে তোষামোদ করি না, তৈলমর্দন করি না, বেছে বেছে তাঁদেরই মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন এর বেশি আর কিছু বলছি না। আশা করছি, শেষ মুহূর্তে হয়তো ডাক পাব। বাকিটা বৃহস্পতিবার বলব।’’
আর কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। প্রার্থী হিসাবে টিকিট নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী এবং সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে সভাস্থলে হাজির হয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সুনজরে থাকতে চাইছেন নেতারা। তাই একই বিধানসভার একাধিক নেতার মধ্যে লড়াইয়ের ফলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা জনারণ্য হওয়ার ইঙ্গিত। ঠিক তখনই এই চার নেতানেত্রীকে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে তৃণমূলের অন্দহরেই শোরগোল। যদিও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ।
বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে দুপুর ১২টায় জনসভা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। জেলার উন্নয়নের বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে সভার ঠিক আগেই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষণে থাকতে পারে এসআইআর প্রসঙ্গ। বস্তুত, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকা মতুয়া ও উদ্বাস্তু কর্মী-সমর্থকেরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে মুখিয়ে রয়েছেন। সভার নিরাপত্তা এবং আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা কয়েক দফায় সভাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভিড়ের কথা ভেবে আগে থেকেই বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা ট্রাফিক সূত্রে খবর, বাড়তি ভিড়ের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার প্রায় ৮ ঘণ্টা কৃষ্ণনগর শহরের সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ রাখা হবে। বিশেষ কারণ ছাড়া জেলা সদর এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নাগরিকদের। তবে বিশেষ কোনও কারণ থাকলে সহায়তা করবে পুলিশ কন্ট্রোলরুম। বুধবারই সভাস্থলে মঞ্চ বাঁধার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পাশেই থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট হেলিপ্যাড। তবে আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে বিকল্প সড়কপথও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকছেন প্রায় ১৬০০ পুলিশ কর্মী।
মমতার সভায় ভিড় টানতে প্রতিযোগিতায় নামছে জেলার প্রতিটি বিধানসভার নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পলাশিপাড়া বিধানসভার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর থাকবে এই সভায়। কার সঙ্গে কত লোক আছেন, সেটা প্রমাণ করার শেষ সুযোগ (বিধানসভা ভোটের আগে)। আমরা সকলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যত সম্ভব লোক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি সকলে।’’
সভায় লোক নিয়ে যেতে বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ছোট গাড়িরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে জন্য পাশের জেলা পূর্ব বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ থেকে পরিবহণ সংস্থাগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার পরিবহণ ব্যবসায়ী মালেকুল ইসলাম বলেন, ‘‘করিমপুর ও তেহট্ট বিধানসভা থেকে কর্মী-সমর্থকদের যাওয়ার জন্য আমাদের কাছে গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। অতটা রাস্তা, তাই বাড়তি ভাড়া চেয়েছি। রাজি হয়ে গিয়েছেন নেতারা।’’
কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রূকবানুর রহমানের দাবি, বৃহস্পতিবার মমতার জনসভায় ‘রেকর্ড’ ভিড় হবে।