ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর নিজের দল গড়ে আগামী বিধানসভা ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু জমি পেলেই হবে না। প্রচুর অর্থ পেলেও মুর্শিদাবাদের বুকে বাবরি মসজিদ তৈরি করতে পারবেন না। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন শক্তি। রাজনৈতিক ক্ষমতা। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর নয়া দলের প্রার্থীদের জেতাতেই হবে। নতুন দল ঘোষণার একদিন আগে প্রস্তুতি সভা থেকে এমনই মন্তব্য তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের।
আগামী ২২ ডিসেম্বর, সোমবার নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে চলেছেন হুমায়ুন। তার আগে নানা জায়গায় প্রস্তুতি সভা করছেন তৃণমূলের ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক। শনিবার সন্ধ্যায় রেজিনগর রিলায়্যান্স ময়দানে প্রস্তুতি সভায় হাজার ত্রিশেক লোকের সামনে হুমায়ুন জানান, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৯০টি আসনে জয়লাভ তাঁর লক্ষ্য। কারণ, তৃণমূল বা বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে, তারা কেউ-ই বাবরি মসজিদ গড়তে দেবে না। তাই সরকারের ‘চাবিকাঠি’ বা নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে অন্তত ৯০টি আসনে জেতাতে হবে তাঁর নতুন দলকে। তিনি এ-ও জানান, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাঁরা। সভায় হুমায়ুনের ঘোষণা, ‘‘টাকা-জমি দিয়ে বাবরি মসজিদ করা যাবে না। আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ যত ক্ষণ না ক্ষমতায় আসছেন, তত ক্ষণ এই মসজিদ কেউ-ই করতে দেবে না। তাই আগামী নির্বাচনে অন্ততপক্ষে ৯০টি আসনে আমাদের জিততে হবে। সরকারের নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে হবে। আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। এ দল হবে আপনাদের দল।’’
বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের প্রতীকী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রচুর অনুদান পেয়েছেন হুমায়ুনেরা। যদিও সেই অনুদানের একাংশ ভুল কিউআর কোড ব্যবহার করে হাতানোর অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। বিধায়ক জানান, মসজিদের জন্য সাধারণ মানুষের দেওয়া ইট এবং আর্থিক অনুদানের বহর দেখে তিনি নিশ্চিত যে, এই আবেগকে ভোটবাক্সে রূপান্তর করা সম্ভব।
নওদা থেকে রেজিনগর— প্রতিটি সভা থেকেই হুমায়ুন বার্তা দিচ্ছেন, শুধু আবেগ বা টাকা দিয়ে মসজিদ নির্মাণ সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ক্ষমতা। শুক্রবার জুম্মার নমাজে বিপুল জমায়েতের পর তিনি দাবি করেছেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর বহরমপুরের মাটিতে রেকর্ড ভিড় হবে এবং সেখান থেকেই তিনি নিজের নতুন দলের নাম ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কতটা পরিবর্তন আনতে পারেন, সেটা সময় বলবে। তবে তাঁর এই বার্তার পর জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার (ডেভিড) বলেন, ‘‘বাবরি মসজিদ আর ধর্মকে ব্যবহার না করে যে দিন রাজনৈতিক মিটিং করে লোক জড়ো করতে পারবেন, সে দিন হুমায়ুনের কথা শোনা যাবে। আর ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে আপাতত বোকা বানানো গেলেও অদূর ভবিষ্যতে ওই চালাকি ধোপে টিকবে না।’’