Cooch Behar TMC Clash

মমতার কোচবিহার সফরের আগে তৃণমূলে চিড়! যুবনেতা খুনে নাম জড়ানোয় উদয়ন-অভিজিৎকে তোপ রবীন্দ্রনাথের

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। গত অগস্ট মাসে যুব তৃণমূল নেতা অমর রায়ের খুনের ঘটনায় দলের একাংশের দিকে আঙুল তোলেন তাঁর বাবা-মা। অমরের মা কুন্তলা রায় তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্যা। তাঁরা আগামী ৯ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:২৭
Cooch Behar TMC Clash

(বাঁ দিক থেকে) উদয়ন গুহ, অভিজিৎ দে ভৌমিক এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের তিন দিন আগে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের অন্দরে শোরগোল। প্রকাশ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের ছবি। খুনের মামলায় তাঁর নাম জড়ানোর জন্য সরাসরি দলের মন্ত্রী এবং জেলা সভাপতির দিকে আঙুল তুললেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাকে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন দু’জন। তাঁরা হলেন উদয়ন গুহ এবং অভিজিৎ দে ভৌমিক।’’ পাল্টা দলের জেলা সভাপতি অভিজিতের পাশে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের নাম না করে তাঁকে কটাক্ষ করলেন কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। গত অগস্ট মাসে যুব তৃণমূল নেতা অমর রায়ের খুনের ঘটনায় দলের একাংশের দিকে আঙুল তোলেন মৃতের বাবা-মা। অমরের মা কুন্তলা রায় তৃণমূলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্যা। বাবা মহিম রায় ব্যবসায়ী। তাঁরা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, আগামী ৯ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এলে তাঁদের দেখা করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। পুত্র খুনের বিচার চাইবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর কাছে। উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট কোচবিহারের ডোডেয়ারহাটে ভরা বাজারে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হন কোচবিহার ১-ব্লকের যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি অমর। তাঁর খুনের ঘটনায় ৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, মূল অভিযুক্তেরা অধরা। পুত্রহারা দম্পতি অভিযুক্ত হিসাবে যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং! পুলিশ সুপারকে পাঠানো অভিযোগপত্রে দম্পতি উল্লেখ করেন পুন্ডিবাড়ি থানার বর্তমান ওসি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পুত্রবধূ। তাই তাঁরা তদন্ত প্রভাবিত করছেন। সংশ্লিষ্ট মামলাটি অন্য থানায় স্থানান্তরের আবেদন করা হোক।

ওই নিয়ে দলের অন্দরে শোরগোলের মধ্যে শনিবার রবীন্দ্রনাথের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে যে সমস্ত ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে, তার নেপথ্যে রয়েছে দলেরই একাংশ। তিনি আঙুল তোলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন এবং কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি অভিজিতের দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘অমর মারা গিয়েছে প্রায় চার মাস হল। আজ হঠাৎ এমন অভিযোগ কেন? ঠিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের আগে এই অভিযোগগুলো করার কারণ একটা গন্ডগোল তৈরির ইচ্ছা।’’ রবীন্দ্রনাথের এ-ও দাবি, তিনি কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান হওয়া ইস্তক উদয়নেরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এর পর সরাসরি উদয়ন এবং অভিজিতের নাম নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘এঁরা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য ধমকে-চমকে কাউন্সিলদের সই সংগ্রহ করা থেকে চিঠি দেওয়া, সমস্ত কাজ করছেন। এঁরা দলের ভাল করছেন না। সেটা তাঁদের উদ্দেশ্যও নয়। ভোটের আগে দলকে দুর্বল করা এদের উদ্দেশ্য।’’

অভিজিৎ অবশ্য় রবীন্দ্রনাথের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘‘উনি এমন ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারেন না।’’ তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। অন্য দিকে, মন্ত্রী তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়নের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ও বলছে, ও জানে।’’ বলেই হাঁটতে থাকেন তিনি। দলের শীর্ষ নেতাদের এই আকচা-আকচি নিয়ে কোচবিহারের সাংসদ জগদীশচন্দ্র বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ যে যে অভিযোগ করেছেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’ কোচবিহার রাসমেলার মাঠে মমতার সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দেখতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই সভার প্রস্তুতির জন্যও সকল নেতাকে ডাকা হয়েছে। তার পরেও যদি কেউ না আসেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে না শোনার ভান করেন, তাতে আমাদের কিছু করার নেই। আসলে জেলা সভাপতি হিসাবে অভিজিৎ সফল হোন, সেটা অনেকেই চান না। তা-ই বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বৈঠকে এড়িয়ে যান।

এই পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের তাদের দলে আহ্বান জানিয়েছেন কোচবিহার জেলার বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ বর্মণ। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বরাবরই দ্বন্দ্ব চলে। ২০২৬ সালে এমনিতেই তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নেবে। কংগ্রেস, সিপিএম থেকে গিয়ে কিছু নেতা কোচবিহার জেলা তৃণমূলকে পরিচালনা করছেন। পুরনো নেতা এবং কর্মীদের তাঁরা ছেঁটে দিচ্ছেন। আমরা তাঁদের উদ্দেশে বলছি, আমাদের দরজা খোলা আছে। চলে আসুন।

Advertisement
আরও পড়ুন