SIR in West Bengal

কমিশনকে পাঠানো মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির ‘মৌখিক জবাব’! ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, ‘বেসরকারি ভোটকেন্দ্র’ নিয়ে সিইও-ব্যাখ্যা

সোমবার সকালে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি পাঠিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এসআইআর-এর কাজে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বা বাংলা সহায়ক কেন্দ্রের কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ২০:১৫
Reply from Chief Election Commissioner to West Bengal CM Mamata Banerjee’s letter on SIR issue

(বাঁ দিকে) মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার কাজে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বা বাংলা সহায়ক কেন্দ্রের কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি পাঠিয়ে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার বিকেলেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালের মাধ্যমে তার ‘মৌখিক ব্যাখ্যা’ এল কমিশনের তরফে।

Advertisement

সোমবার সিইও মনোজ বলেন, ‘‘কমিশনের নির্দেশে এমন রয়েছে। কমিশন বলেছিল, চুক্তিভিত্তিক কর্মী নেওয়া যাবে না। বিহারের মতো আমরা টেন্ডার করেছি।’’ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, কমিশন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনকেও ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের কথা ভাবছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এই মর্মে জেলাস্তরের আধিকারিকদের থেকে প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ কেন করা হচ্ছে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টিকে ‘নীতিগত’ তকমা দিয়ে সিইও-র মন্তব্য, ‘‘এটি পলিসি ডিসিশন (নীতিগত সিদ্ধান্ত)। কমিশন পলিসি ডিসিশন নিয়েছে।’’

সেই সঙ্গে সিইও মনোজের মন্তব্য, ‘‘আমি কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিই না।’’ পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিল্লির নির্বাচন ভবন কী করবে, সে বিষয়ে কোনও বার্তা দেননি সিইও, তাঁর মন্তব্য, ‘‘তাদের (নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর) কাছে চিঠি গিয়েছে, তারা পদক্ষেপ করবে।’’ প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে গত বৃহস্পতিবারও একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবার পর্যন্ত তার জবাব আসেনি নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর থেকে। সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, বিএলও-দের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেওয়া হয়নি। যদিও সিইও মনোজ সোমবার বলেন, ‘‘বিএলও-রা প্রচুর কাজ করছেন। তাঁরা এসআইআরের হিরো।’’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সিইও-র দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, এসআইআর-এর কাজে চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বা বাংলা সহায়ক কেন্দ্রের কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না। টেন্ডার ডেকে এক বছরের জন্য এক হাজার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ৫০ জন সফ্‌টঅয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের জন্য রাজ্যকে প্রস্তাব দিয়েছিল সিইও দফতর। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, জেলাস্তরের অফিসগুলিতে এই কাজ করার জন্য আগে থেকেই কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাইরে থেকে গোটা বছরের জন্য লোক নিয়োগ করার কী এমন প্রয়োজন পড়ল সিইও দফতরের? চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সাধারণত সংশ্লিষ্ট এলাকার অফিসগুলিই নিজেদের প্রয়োজনমতো চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে কোনও প্রয়োজন পড়লে জেলাস্তরের অফিসগুলি নিজেরাই সেই নিয়োগ করতে পারে। এ বিষয়ে জেলাস্তরের অফিসগুলিকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে।

তার পরেও জেলার অফিসগুলিকে টপকে সিইও দফতর থেকে কেন এই নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি লিখেছেন, এখন যাঁরা নিযুক্ত রয়েছেন এবং যাঁদের নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে— এই দুই ধরনের ক্ষেত্রে কর্মীদের কাজে কী এমন পার্থক্য থাকবে! তা হলে কায়েমি স্বার্থ পূরণ করার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নির্দেশেই কি এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে? পাশাপাশি, যে সময়ে এবং যে ভাবে এই নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পাঠানো চিঠিতে আরও একটি বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তিনি লেখেন, কমিশন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনকেও ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের কথা ভাবছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এই মর্মে জেলাস্তরের আধিকারিকদের থেকে প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সাধারণ ভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনও সরকারি বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানেই ভোটকেন্দ্র করা হয়। যাতে সাধারণ মানুষের সেখানে পৌঁছোতে সুবিধা হয় এবং নিরপেক্ষতাও বজায় থাকে— তাই এই ভবনগুলিকে বেছে নেওয়া হয়। এই ব্যবস্থাই বজায় রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন বলে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান। বেসরকারি ভবনে কেন ভোটকেন্দ্র করা উচিত নয়, তারও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। মমতার বক্তব্য, বেসরকারি ভবনে ভোটকেন্দ্র গড়া হলে সেখানে স্বচ্ছতার সঙ্গে আপস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই সঙ্গে বিধিভঙ্গের আশঙ্কাও থাকে। সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির মধ্যে একটি বৈষম্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তার পরেও কেন এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রেও কি কোনও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে? এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ভাবে বিবেচনা করার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেন তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন