শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনে (এসআইআর) দেড় কোটি আবেদনকারীর শুনানি হবে দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। খসড়া তালিকা প্রকাশের আগেই শনিবার এই দাবি করেছেন তিনি। এই দাবিকে সামনে রেখেই তৃণমূল কংগ্রেস ফের এক বার বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের আতাঁতের অভিযোগ তুলেছে। অন্য দিকে, সংশোধন-পর্বে মালদহে দুই মৃত্যু নিয়ে ফের চাপানউতোর চলেছেরাজনৈতিক মহলে।
গণনা-পত্র বিলি, পূরণ ও সংগ্রহের পরে তা আপলোড করার কাজ শেষ হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই শুক্রবার প্রাথমিক ভাবে ৫৯ লক্ষের মতো ভোটারের নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সেই সূত্রেই এ দিন হুগলির বলাগড়ে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিরোধী দলনেতা দাবি করেছেন, ‘‘এটা সেমিফাইনাল। ২০২৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দেখবেন পরিষ্কার ভোটার তালিকা। ফাইনালে আমরাই জিতব!’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রথম পর্বেই ৫৯ লক্ষ নাম বাদ। সবে তো ৬০ লক্ষ।। দেড় কোটির শুনানি হবে। সবে খসড়া তালিকা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ তো পহেলা ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।’’ পাশাপাশি শুনানি প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি শুনানি সিসিটিভি নজরদারি ও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। এই প্রক্রিয়া কোনও দলীয় কার্যালয় বা ক্লাব নয়, সরাসরি বিডিও এবং এসডিও অফিসে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষের অবাধপ্রবেশাধিকার থাকে।’’
এসআইআর নিয়ে বিজেপির এই দাবি ঘিরে রাজনৈতিক তরজায় সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২০২৪ সালের ভোটে শুভেন্দু সেমিফাইনালের কথা বলে হেরেছেন। সেমিফাইনাল কত বার হয়?’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘খেলার স্লোগান তো তৃণমূলের, ওঁর নয়। ফলে, এ খেলায় নামলে আত্মঘাতী গোলে বারবার হারবেন।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি প্রসঙ্গে অরূপের খোঁচা, ‘‘২০২১ ও ২০২৪ সালে বিজেপি শুধুমাত্র রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী আনতে বাকি রেখেছিল! এ বার শুনানি পর্বেই তা আনতেই পারে। তবে ভোট দেবেন এ রাজ্যের মানুষ। কেন্দ্রীয়বাহিনী নয়, ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত সেই মানুষই ঠিক করবেন রাজ্যের ভোটের ভাগ্য।’’
এসআইআর প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তৃণমূল ও বিজেপিকে একযোগে বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘মৃতদের নাম বাদ দেওয়ার কথা। অথচ নিজেরাই ফর্ম ছেপে বিলি করে দিয়ে এখন বিএলও-দের সব ফর্ম জমা দিতে বলছে। গোরস্থান, শ্মশান থেকে জমা দেবে! বিজেপি আর তৃণমূল নির্ভুল তালিকা চাইছে না।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ গেলে ব্যবস্থা হবে।’’
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে এ দিন আবুল কালাম (৫২) নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে এসআইআর-আতঙ্কের অভিযোগ উঠেছে। জেলারই বৈষ্ণবনগর বিধানসভার একটি বুথে বারকাত শেখ (৩১) নামে তৃণমূলের এক বিএলএ-এর মৃত্যুতেও মানসিক চাপের অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। এই অভিযোগে বিডিও- সহ চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁর দাদা। বাবার নাম নিয়ে সমস্যা মেটাতে শুক্রবার নির্দিষ্ট দফতরে গিয়েছিলেন বারকাত। কিন্তু মানসিক চাপে আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। বারকাত পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় তাঁর স্ত্রীর চাকরি এবং পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেছে পরিবার।