US Strike on Osama Bin Laden

লাদেন-হত্যার পরও ‘অপদার্থ’ গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কেন করেনি পাকিস্তান? নিষেধ করেছিল তৃতীয় এক দেশ!

পাকিস্তানে ঢুকে ৯/১১ হামলার মূলচক্রী লাদেনকে হত্যা করেছিল আমেরিকার বাহিনী। গোটা বিশ্ব সে দিন জেনেছিল, বছরের পর বছর ধরে লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বের দরবারে তাদের মুখ পুড়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৩৩
Book by Asif Ali Zardaris aide reveals what happened in Pakistan after US operation in Abbottabad

আমেরিকার বাহিনীর অভিযানের পর বিধ্বস্ত ওসামা বিন লাদেনের সেই গোপন ডেরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

২ মে, ২০১১। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অ্যাবটাবাদে গিয়ে গোপন ডেরায় ঢুকে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিল আমেরিকার বাহিনী। গোটা বিশ্ব সে দিন জেনেছিল, বছরের পর বছর ধরে লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বের দরবারে তাদের মুখ পুড়েছিল। সেনাবাহিনী, গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য আর কোনও অজুহাত তাদের হাতে ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও গোয়েন্দা আধিকারিকের বিরুদ্ধে সে দিন ইসলামাবাদ কঠোর পদক্ষেপ করেনি। বিশ্বের কাছে যাতে সন্ত্রাসের মোকাবিলাকারী হিসাবে বার্তা যায়, তার চেষ্টা করেননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জ়ারদারি। সম্প্রতি একটি বইতে তেমনটাই দাবি করেছেন আসিফের সেই সময়কার ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা প্রাক্তন মুখপাত্র ফারহাতুল্লা বাবর। আসিফের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিজের মতানৈক্যের কথা ওই বইতে তিনি জানিয়েছেন।

Advertisement

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে বিধ্বংসী আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল আল-কায়েদা। কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এর নেপথ্যে যে লাদেনের হাত রয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দারা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু লাদেনকে খুঁজে বার করতে তাঁদের ১০ বছর সময় লেগে গিয়েছিল। ২০১১ সালের পাকিস্তানে ঢুকে তাঁকে হত্যা করা হয়। বাবর দাবি করেছেন, ৪০ মিনিটের সেই মার্কিন অভিযান পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ভোর সাড়ে ৬টায় জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রেসিডেন্ট। ৯০ মিনিটের ওই বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার, বিদেশসচিব সলমন বশির এবং বাবর নিজে।

বইতে বাবর দাবি করেছেন, পাকিস্তান বছরের পর বছর ধরে দাবি করে আসছিল, লাদেনের কোনও খোঁজ তাদের কাছে নেই। লাদেন তাদের দেশের মাটিতে কোথাও নেই। আমেরিকার অভিযানের পর তাদের সে সব যুক্তি খড়কুটোর মতো উড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে ব্যর্থতা মেনে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতি আর তৈরি না-হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টাই হতে পারত আদর্শ সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্টের প্রশ্নের মুখে বাবর সেই জবাবই দিয়েছিলেন। অভ্যন্তরীণ তদন্তের বন্দোবস্ত করে যাঁরা লাদেনের লুকিয়ে থাকার খবর আগে থেকে জানতেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ‘নানা কারণে’ তা হয়নি। তার মধ্যে অন্যতম তৃতীয় এক দেশের নিষেধাজ্ঞা! কোন দেশ? নাম উল্লেখ করেননি বাবর।

আমেরিকার অভিযান সম্পর্কে আগে থেকে কোনও তথ্যই ছিল না ইসলামাবাদের কাছে। বাবরের দাবি, যে সময়ে আমেরিকার আধিকারিকেরা অ্যাবটাবাদে অভিযান চালাচ্ছিলেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা সে সময় ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মেতে ছিলেন। মার্কিন বাহিনী অ্যাবটাবাদ ছেড়ে চলে যাওয়ার ১৪ ঘণ্টা পরে এ বিষয়ে সরকারি ভাবে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান। লাদেনের হত্যা এবং ২০০৮ সালে মুম্বই হামলা— দু’টি ঘটনার পরেই পাকিস্তান সরকার যে বিবৃতি দিয়েছিল, বইতে তার বিরোধিতা করেছেন বাবর। দাবি, ভবিষ্যতে কী ভাবে ব্যবস্থা উন্নত করা যায়, বিবৃতিতে তার উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু যাঁরা অপরাধ করলেন, যাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলেন, তাঁদের শাস্তির কথা কিছু বলা হয়নি। বইতে লেখা হয়েছে, ‘‘লাদেন-হত্যার পর গোয়েন্দা ব্যবস্থা, আইএসআই-কে ঢেলে সাজার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বা সামরিক নেতারা কেউ সেটা চাননি। সেনাবাহিনী নিজেদের মান বজায় রাখতে চেয়েছিল। শুনেছিলাম, কোনও এক বিদেশি সরকারও চায়নি, কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হোক। ফলে গোয়েন্দা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার সুযোগ চিরতরে নষ্ট হয়।’’

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ভারত বার বার আন্তর্জাতিক মহলে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত ২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলাতেও পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। যে তিন হামলাকারী ভারতীয় সেনার সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছে, তারা পাকিস্তানের বাসিন্দা। তবে ভারতের অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান। পহেলগাঁওয়ের ঘটনাতেও তারা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন