Nepal pro-monarchy protests

প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রীর গ্রেফতারির জেরে নতুন করে অশান্তি নেপালে! কাঠমান্ডুতে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু রিং রোড-সহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সমস্ত রকম জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ১৫:৪৪
Unrest in Nepal as pro-monarchy protest escalate after former deputy PM arrested

ছবি: রয়টার্স।

প্রায় দু’মাসের বিরতির পরে রাজতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ ঘিরে নতুন করে অশান্তি ছড়ালো নেপালে। রবিবার বিকেলে রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাজতন্ত্র-সমর্থক রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি)-র প্রধান তথা সে দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী কমল থাপা গ্রেফতার হন। তার জেরে আবার দফায় দফায় বিক্ষোভ, অবরোধ হয়েছে দেশ জুড়ে।

Advertisement

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু রিং রোড-সহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সমস্ত রকম জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার। কাঠমান্ডুর পুলিশের মুখপাত্র আপিল বোহরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বালুওয়াতারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করায় কয়েক জন আরপিপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্য নারায়ণচর এলাকায় টানা পঞ্চম দিন বিক্ষোভ হয়েছে রাজতন্ত্রপন্থীদের।

8962নেপালে রাজতন্ত্র ও হিন্দুত্ব ফিরিয়ে আনার দাবিতে গড়ে ওঠা সাম্প্রতিক আন্দোলনে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র আরপিপি যোগ দিয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য গড়ে ওঠা ‘জয়েন্ট পিপল্‌স মুভমেন্ট কমিটি’র (জেপিএমসি) নেতৃত্বের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রাক্তন মাওবাদী কমান্ডার দুর্গা প্রসাই। মূলত তারই নেতৃত্বে গত মার্চ থেকে ক্ষমতাচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে সিংহাসনে ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ক্রমশই তাতে সমর্থন বাড়ছে আমজনতার।

ঘটনাচক্রে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা এক দশক নেপালে রাজতন্ত্র উচ্ছেদের দাবিতে প্রচণ্ডের নেতৃত্ব ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী)’-র সশস্ত্র শাখা পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি যে গেরিলা লড়াই চালিয়েছিল, দুর্গা ছিলেন তার অন্যতম যোদ্ধা। ২০০৬ সালে মাওবাদীরা অস্ত্র ছেড়ে গণতন্ত্রে শামিল হয়েছিলেন। দু’দশক আগেও ভারতের উত্তরের পড়শি দেশ নেপালেও প্রচলিত ছিল রাজতন্ত্র। শেষ রাজা ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। ২০০৬ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পরে ২০০৮ সালের মে মাসে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্র ভেঙে নেপালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ২০১৫ সালে অনুমোদিত হয় নতুন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধান।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জ্ঞানেন্দ্র নেপালের সাধারণ নাগরিক হিসাবে বাস করেন। তাঁর কোনও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। অনুমতি নেই রাজপ্রাসাদে যাওয়ার। এমনকি, সরকারি কোনও সুবিধাও তিনি পান না। নেপালে যখন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেই সময়ে দেশটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবেই পরিচিত ছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে ঘোষণা করা হয়। পরে দেশের সংবিধানেও সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ১৭৬৮ সালে সেখানে শাহ রাজবংশের সূচনা হয়েছিল। জ্ঞানেন্দ্রের দাদা রাজা বীরেন্দ্র ছিলেন পৃথ্বীনারায়ণের নবম প্রজন্ম। তাঁকে হত্যা করে যুবরাজ দীপেন্দ্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মৃত্যুশয্যাতেই তাঁর অভিষেক হয়। দীপেন্দ্র বাঁচেননি। ২০০১-এর জুন মাসের সেই হত্যাকাণ্ডের পর জ্ঞানেন্দ্র সিংহাসনে বসেছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় ২০০৫ সালের গোড়ায় নেপালে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। তার পরে দ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। এ বার সেখানে রাজতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের দাবিতে সুর চড়ছে আমজনতার।

Advertisement
আরও পড়ুন