১৫ বছর ধরে পুজো হচ্ছে জুরিখে।
শরৎ এসে গিয়েছে। হাওয়ায় হিমের পরশ। ঘাসের ডগায় শিশিরের ছোঁয়া। সকাল বেলায় সেই শিশিরের বিন্দু দেখতে দেখতে অফিস যাওয়ার সময়, কলকাতার শরৎ-এর শিউলি ফুল কুড়নোর দিনে ফিরে যাই। এখন এখানে ‘অটাম’। প্রকৃতি মেতেছে লাল-হলুদ-গেরুয়া-সবুজের রঙ্গে। তারই মাঝে সাদা কাশফুলের হাওয়ায় দোলা, নস্টালজিক মনকে দাঁড় করিয়ে দেয় কলকাতার দুর্গাপুজোর সামনে। মনে করিয়ে দেয়, দেবীপক্ষ শিগগিরই শুরু হবে। কয়েক দিনের ঝড়-বৃষ্টি মনে করিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা আমেজের সময় এগিয়ে আসছে।
যাযাবরের জীবন কখন কোথায় নিয়ে যায় বলা মুশকিল। আগের বছর দুর্গাপুজোর সময় কাজের কারণে জুরিখ আর হামবুর্গের পুজো দেখেছিলাম। সঙ্গে ছিল আমার তখনকার সাময়িক বাড়ি ভেনিসের পুজোও। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা ধরনের দুর্গাপুজো দেখেছি, প্রায় সবকটাই কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর মতো বেশ একটা ঘরোয়া আর আন্তরিকতায় ভরা।
প্রবাসের উমারা পুজোয় সে ভাবে বাপের বাড়ি যেতে না পারলেও, কৈলাশ থেকে উমা এ বারও এসে পৌঁছচ্ছে সোজা আল্পসের দেশ সুইৎজারল্যান্ডে। ২০০৩-এ পথ চলা শুরু জুরিখের সুইসপুজোর। নিতান্তই ছোট করে শুরু হয়েছিল। তার পর হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ১৫ বছর হয়ে গেল। ১০০ জনের ছোট পরিবার দিয়ে শুরু করে, এখন চারা গাছ থেকে মহীরুহের রূপ নিয়েছে। শুধুমাত্র সুইৎজারল্যান্ডেই স্বীমাবদ্ধ নয় এখনকার সুইসপুজো। প্রায় চার হাজার দর্শনার্থী আসেন।
আরও পড়ুন: অসাধারণ মানুষরা এ বার মাতাবেন পওয়াই-মুম্বইয়ের দুর্গাপুজো
সুইস মুলুক ছাড়াও, প্রতিবেশী দেশ জার্মানি, ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ার বাঙালিরাও জড়ো হন এই পুজো দেখতে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে যখন জুরিখে তল্পিতল্পা সমেত এলাম, আগের বছরের ঝটিকা সফরে দেখা সুইসপুজোই এ বছর থেকে হয়ে গেল আমাদের সঙ্গী। আগের বছরের নন-মেম্বার হয়ে গেলাম মেম্বার।
আগের বছরের পুজো দেখার সময়েই একটা অন্য অনুভূতি হয়েছিল। অনেক দিন পরে বেশ একটা সাজানো মণ্ডপ দেখেছিলাম। এক টানে ২৫ বছরের পুরোন সেই নতুন দলের পুজোয় মন টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এখন যথেষ্ট নামী বেহালার নতুন দলের পুজো। সেই সময় সন্দীপদের বাড়ির দালানে, এই সুইসপুজোর মতোই ছিমছাম কিন্তু নিপুণ হাতে সুন্দর করে সাজানো পুজো হতো। সুইসপুজো আর আমার পুরোনো পাড়ার বেহালা নতুন দলের মধ্যে শুধু পুজোর মিল খুঁজে পাইনি, একদম সেই ভাবনায় সেই পরিকল্পনায় বসে আঁকো প্রতিযোগিতা দেখে হঠাৎ করেই সময়টা থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, স্বাবলম্বী হয়ে, নতুন নামকরণে সম্মানিত হয়েছে ‘কিডস পেন্টিং কম্পিটিশিন’ হিসাবে। এ বছরও সঙ্গী বসে আঁকো প্রতিযোগিতা।
আরও পড়ুন: ডেট্রয়েটের প্রযুক্তিবিদেরাই মায়ের জন্য গড়ছেন রাজবাড়ির ঠাকুরদালান
এ বারও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই। প্রত্যেক দিন সন্ধেবেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শারদীয়া পত্রিকা তৈরি, দুর্গা প্রতিমার সংশোধন ও অন্য আরও খুঁটিনাটি কাজ চলছে জোর কদমে।
এ বছর ছেলের অটাম বিরতি শুরু হয়ে যাওয়ায়, সময় পাওয়া যাবে অফুরান। আর সঙ্গে থাকবে একশো শতাংশ বাঙালি খাওয়া-দাওয়া। ১৩ অক্টোবর এ বছরের সুইসপুজো শুরু হবে কলকাতার ফোক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, জুরিখের কাছের শহর লাঙ্গনাউ-এ। রইল সবার নিমন্ত্রণ।
ছবি : পুজো উদ্যোক্তাদের সৌজন্যে।